বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক সংখ্যা/বরষা/ধারাবাহিক/২য় বর্ষ/১৪তম/১৪ই ভাদ্র,
১৪৩১
বরষা | ধারাবাহিক গল্প
ডরোথী ভট্টাচার্য
শ্রাবণের অতিথি
[১ম পর্ব]
"কথা দিন সামনের রবিবার আসবেন। অরিন্দম নেই তাতে কী হয়েছে? আমি বুঝি আপনাকে একটু
রান্না করে খাওয়াতে পারি না? স্বাতীর জোরাজুরিতে অনুভব না বলতে পারল না, বলল বেশ আসার খুব চেষ্টা করব। বলে আস্তে আস্তে নীচে নেমে গেল।"
ক্রিং, ক্রিং, ক্রিং
কলিং বেলটা বেশ জোরে বেজে উঠল। আজ রবিবার, অফিসের তাড়া নেই। স্বাতী তাই একটু বেলা অবধিই
গড়িয়ে নিচ্ছিল। বেলের আওয়াজ হতেই
ধরমরিয়ে উঠে পড়ল। নিজেকে কিছুটা বিন্যস্ত করে নীচে নেমে গেল।
আই গ্লাসে চোখ রাখতেই চোখে পড়ল এক অনেকদিনের পরিচিত মুখ। আস্তে আস্তে দরজাটা খুলে দিল।
কলিং বেলটা বেশ জোরে বেজে উঠল। আজ রবিবার, অফিসের তাড়া নেই। স্বাতী তাই একটু বেলা অবধিই
আই গ্লাসে চোখ রাখতেই চোখে পড়ল এক অনেকদিনের পরিচিত মুখ। আস্তে আস্তে দরজাটা খুলে দিল।
-চিনতে পারছেন? আগন্তুক প্রশ্ন করল।
-হ্যাঁ, মানে আপনাকে দেখেছি, কিন্তু নামটা মনে করতে পারছি না।
-আজ থেকে অনেক বছর আগে এ বাড়িতে আমি বেশ কয়েকবার এসেছি অরিন্দমের কাছে।
-ঠিক আছে, আপনি বসুন, আপনার নামটা?
-আমি অনুভব
-ও, এবার মনে পড়েছে। আপনার কণ্ঠস্বর আমার খুব পরিচিত লাগছে। তাহলে এতদিন কোথায় ছিলেন?
-আমি প্রায় বছর কুড়ি কর্মসূত্রে বিদেশে থেকেছি। দিন পনেরো হল ফিরেছি। এসে অরিন্দমের দুঃসংবাদটা শুনলাম। শোনার পর থেকে মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে জানেন? আচ্ছা কতদিন হোলো?
-তা প্রায় বছর সাতেক হল।
-আজ কয়েকদিন ধরে আসব আসব করেও আসা হয়ে ওঠেনি। আজকে চলেই এলাম আপনার সাথে দেখা করতে।
-আপনার পরিবার? স্বাতী জিজ্ঞেস করল।
-আমার জীবনেও অনেক বিপর্যয় ঘটে গেছে জানেন?
-কীরকম?
-আমার মেয়েটাকে খুব ছোট রেখে আমার স্ত্রী পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেল তারপর আমার মা যাও বা ওকে কিছুটা সামলে রাখছিলেন তিনিও ওর মাত্র পাঁচ বছর বয়সে চলে গেলেন। ঐ একরত্তি মেয়েকে রেখে কাজকর্ম সামলানো, জীবনের উপর দিয়ে যে কী ঝড় বয়ে গেছে তা বলে বোঝাতে পারব না। আচ্ছা আপনার একটা ছেলে ছিল-না?
-হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন, আমার ছেলেকে আপনি খুবই ছোট দেখেছেন।
-সে এখন কোথায়?
-সে এখন বড় হয়ে গেছে। কানাডায় আছে, চাকরি করে।
-সত্যিই কতগুলো বছর আমাদের জীবনের উপর দিয়ে কেটে গেছে তাই না? এখন তাহলে আপনি একা?
-হ্যাঁ, একাই বলতে পারেন, আর আপনি?
-আমার মেয়ে বিএ পাশ করার পর ভাল ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। এখন বেশিরভাগই আমার নিজের লেখাজোখা নিয়ে থাকি।
স্বাতী বেশী কথা না বাড়িয়ে রান্নাঘরে চলে এল। তাড়াতাড়ি করে চা বানিয়ে নিল। ফ্রিজে রাখা পাউরুটি আর ডিম তাড়াতাড়ি বের করে কয়েকটা ডিম পাউরুটি ভেজে নিয়ে প্লেটে সাজিয়ে ফেলল, তারপর ট্রে-তে করে অনুভবকে পরিবেশন করল।
অনুভবের পুরনো দিনের কথা মনে পড়ল। যে
ঘরটায় এখন ও বসে আছে তার নীচের ঘরটা ও যখন এখানে আসত সেটা ছিল টালির শেড দেওয়া
ঘর। ও, অরিন্দম, অরুণাভ, হিন্দোল আরো কত কে এই ঘরটায় বসে মিটিং
করেছে। সেই উত্তাল সময়, পুলিশের তাড়া খেয়ে বেড়ানো,
বস্তিতে বস্তিতে দলের ভবিষ্যৎ কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা, মাঝে মাঝে গ্রামেগঞ্জে চলে যাওয়া বেশ মনে পড়ে। ওদের যখন মিটিং চলত
স্বাতী তখন চা করে নিয়ে আসত। চা দিয়েই ঘরে ঢুকে পড়ত ছেলেকে দেখা আর সংসারের অন্যান্য কাজকর্ম সামলাতে। আজ অনেক দিন পর অরিন্দমের অবর্তমানে
স্বাতীর মুখোমুখি হল সে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেল অনুভব সত্যিই
তো অনেক বেলা হয়ে গেছে।
-আজ তবে আসি, আবার পরে আসব।
-সে কী এখনই চলে যাবেন?
-হ্যাঁ, বাড়ি গিয়ে লেখালেখির কাজ নিয়ে একটু বসতে হবে।
-তাহলে কথা দিন সামনের রবিবার আসবেন। অরিন্দম নেই তাতে কী হয়েছে? আমি বুঝি আপনাকে একটু
রান্না করে খাওয়াতে পারি না?
স্বাতীর জোরাজুরিতে অনুভব না বলতে পারল না, বলল বেশ আসার খুব চেষ্টা করব। বলে আস্তে
আস্তে নীচে নেমে গেল।
-হ্যাঁ, মানে আপনাকে দেখেছি, কিন্তু নামটা মনে করতে পারছি না।
-আজ থেকে অনেক বছর আগে এ বাড়িতে আমি বেশ কয়েকবার এসেছি অরিন্দমের কাছে।
-ঠিক আছে, আপনি বসুন, আপনার নামটা?
-আমি অনুভব
-ও, এবার মনে পড়েছে। আপনার কণ্ঠস্বর আমার খুব পরিচিত লাগছে। তাহলে এতদিন কোথায় ছিলেন?
-আমি প্রায় বছর কুড়ি কর্মসূত্রে বিদেশে থেকেছি। দিন পনেরো হল ফিরেছি। এসে অরিন্দমের দুঃসংবাদটা শুনলাম। শোনার পর থেকে মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে জানেন? আচ্ছা কতদিন হোলো?
-তা প্রায় বছর সাতেক হল।
-আজ কয়েকদিন ধরে আসব আসব করেও আসা হয়ে ওঠেনি। আজকে চলেই এলাম আপনার সাথে দেখা করতে।
-আপনার পরিবার? স্বাতী জিজ্ঞেস করল।
-আমার জীবনেও অনেক বিপর্যয় ঘটে গেছে জানেন?
-কীরকম?
-আমার মেয়েটাকে খুব ছোট রেখে আমার স্ত্রী পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেল তারপর আমার মা যাও বা ওকে কিছুটা সামলে রাখছিলেন তিনিও ওর মাত্র পাঁচ বছর বয়সে চলে গেলেন। ঐ একরত্তি মেয়েকে রেখে কাজকর্ম সামলানো, জীবনের উপর দিয়ে যে কী ঝড় বয়ে গেছে তা বলে বোঝাতে পারব না। আচ্ছা আপনার একটা ছেলে ছিল-না?
-হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন, আমার ছেলেকে আপনি খুবই ছোট দেখেছেন।
-সে এখন কোথায়?
-সে এখন বড় হয়ে গেছে। কানাডায় আছে, চাকরি করে।
-সত্যিই কতগুলো বছর আমাদের জীবনের উপর দিয়ে কেটে গেছে তাই না? এখন তাহলে আপনি একা?
-হ্যাঁ, একাই বলতে পারেন, আর আপনি?
-আমার মেয়ে বিএ পাশ করার পর ভাল ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। এখন বেশিরভাগই আমার নিজের লেখাজোখা নিয়ে থাকি।
স্বাতী বেশী কথা না বাড়িয়ে রান্নাঘরে চলে এল। তাড়াতাড়ি করে চা বানিয়ে নিল। ফ্রিজে রাখা পাউরুটি আর ডিম তাড়াতাড়ি বের করে কয়েকটা ডিম পাউরুটি ভেজে নিয়ে প্লেটে সাজিয়ে ফেলল, তারপর ট্রে-তে করে অনুভবকে পরিবেশন করল।
-সে কী এখনই চলে যাবেন?
-হ্যাঁ, বাড়ি গিয়ে লেখালেখির কাজ নিয়ে একটু বসতে হবে।
-তাহলে কথা দিন সামনের রবিবার আসবেন। অরিন্দম নেই তাতে কী হয়েছে? আমি বুঝি আপনাকে একটু
রান্না করে খাওয়াতে পারি না?
ক্রমশ…
পড়তে শুরু করলাম। - জয়িতা বসাক
ReplyDeleteদিদি লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো
Deleteপসিটিভ লেখা। জীবনে অনেক নেগেটিভ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। জীবন নদীর মত।বাঁকে বাঁকে তার কত রূপ।এই গল্পটাও সেই রূপ।
ReplyDeleteপসিটিভ লেখা, ভালো লাগলো।
ReplyDelete