বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক সংখ্যা/বরষা/ধারাবাহিক/২য় বর্ষ/১৪তম/১৪ই ভাদ্র,
১৪৩১
বরষা | ধারাবাহিক
গল্প
পারমিতা চ্যাটার্জি
বিচার চাই
[১ম
পর্ব]
"একটা কালো অ্যাম্বাসাডর এসে তাদের পাশে দাঁড়ায় আর অভ্যস্ত একটানে নীলাকে মুখ বন্ধ করে গাড়িতে তুলে নেয়। ঘটনার আচম্বিতে সুপর্ণা কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে যায়, তারপর হেল্প হেল্প করে ছুটতে থাকে।"
আজ সকাল থেকেই রিমঝিম বৃষ্টি, সুপর্ণার মনটাও মেঘ ভরা আকাশের মতন ভার হয়ে
আছে। ব্যালকনিতে বসে সে খবরের কাগজের অপেক্ষা করছে। নিজেই মাইক্রোওভেনে গরমজল করে
টি-ব্যাগের সাহায্যে এক কাপ চা বানিয়ে ব্যালকনিতে বসল। বর্ষার সকাল চা ছাড়া ম্লান
হয়ে যায়। বর্ষার জলেই তার ব্যালকনির গাছগুলো ভিজে যাচ্ছে আজ
আর তাকে আলাদা করে গাছে জল দিতে হবে না।
চায়ের সাথে একটু বেকারির বিস্কুট নিয়ে এল
শুধু চা-টা যেন আজ ভাল লাগছে না। মনে
মনে গুনগুন করে গান গেয়ে উঠল,
"এমন দিনে তারে বলা যায় এমনও ঘনঘোর বরিষায় / এমন মেঘস্বরে /
বাদল ঝরঝরে / তপনহীন ঘন তমসায়"।
একটু পরেই তার কাজের মেয়ে চম্পা আসে
সকালের খবরের কাগজটা হাতে করে, কাগজটা বর্ষার জলে বেশ ভিজে গিয়েছে, একটু কষ্ট করেই
কাগজ পড়তে হবে। গাছে আর জল দেবার প্রয়োজন নেই তবে পাতাগুলো পরিস্কার করে। হঠাৎ দেখল একটি টবের মাটিতে ফাংগাস লেগেছে সে সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টি
ফাংগাস টবের কোণাগুলি খুঁচিয়ে দিয়ে মাটি সমান করে জল ঢেলে দিল।
ইতিমধ্যে চম্পা এককাপ ধোঁয়া-ওঠা খুব গন্ধ ওয়ালা লিকার চা আর
বিস্কুটের ডিবেটা তার পাশে রেখে গেল।
ব্যালকনিতে বসে চা খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়াটা তার একটা বিলাসিতা।
আজ কাগজটা খুলে বসতেই মাথাটা ঘুরে উঠল। তিনটে মর্মান্তিক রেপ কেস আর তিনজনকেই নৃশংস ভাবে রেপ করে মেরে ফেলা হয়েছে। একটা উত্তর প্রদেশে, একটা মধ্য প্রদেশে আর একটা তাদের এই পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজে।
অনেকদিন আগের একটা কথা মনে পড়ে গেল, একসাথে
ডাক্তারি পড়ত সে আর কৌস্তভ। তার সেদিন রাতের বেলায় ডিউটি পড়েছিল জুনিয়র ডাক্তার
হিসেবে, কৌস্তভ তাকে সাবধান করে বলেছিল সাবধানে থাকিস রে
চতুর্দিকে সব দালালরা ঘুরছে। কলেজের অন্দরে অন্দরে প্রচুর দুর্নীতি
যা সে একদিন বুঝতে পেরেছিল। ক্লাসের শেষে সে কৌস্তভকে বলেছিল জানিস প্রচুর দুর্নীতিতে কলেজটা ভরে গিয়েছে। পাশ করে বেরোতে পারলে বাঁচি। ভাল লাগছে না আর
এই কলেজে কেমন যেন একটা নেগেটিভ এনার্জি কাজ করে। শুনেছি
প্রিন্সিপালও এর সাথে যুক্ত।
-কার কাছ থেকে শুনলি?
-নীলার কাছ থেকে?
-ও তোর যে বেস্ট ফ্রেন্ড সেই নীলা?
-হ্যাঁ রে সেই নীলা।
-ও কী করে জানতে পারল?
-তা তো জানি না, তা আমাকে বলেনি।
-কী বলেছিল?
-এখন আমার ক্লাসের সময় হয়ে গেছে পরে তোকে বলব।
সেই কৌস্তুভ সুন্দর সুপুরুষ ব্রিলিয়ান্ট ছেলে এবং বড় ঘরের ছেলে, সেও যে তলে তলে ওই দলে যুক্ত ছিল তা সে বুঝতে পারেনি। নীলা সেটা জানতে পেরে তা সুপর্ণাকে জানাবার জন্য সুপর্ণার বাড়ির দিকে রওনা হয়েছিল। কিন্তু কৌস্তভ যে তাকে ফলো করছিল তা হতভাগ্য মেয়েটা বুঝতে পারেনি। নীলা অনেকক্ষণ সুপর্ণার সাথে সব কথা বলে মায়ের হাতের লুচি তরকারি খেয়ে দুই বন্ধুই কলেজের পথে বেরিয়েছিল। যেতে যেতে নীলা বলল, আজকাল কলেজে যেতেই ভয় করে, মনে হয় বিপদ যেন ওঁত পেতে আছে। কিন্তু বিপদ যে এত কাছাকাছি আর এত তাড়াতাড়ি ঘাড়ে এসে যাবে তা সেদিন বুঝতে পারেনি। তারা একটু এগোতেই একটা কালো অ্যাম্বাসাডর এসে তাদের পাশে দাঁড়ায় আর অভ্যস্ত একটানে নীলাকে মুখ বন্ধ করে গাড়িতে তুলে নেয়। ঘটনার আচম্বিতে সুপর্ণা কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে যায়, তারপর হেল্প হেল্প করে ছুটতে থাকে। সেই সময় একটা পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়ায়, এবং সুপর্ণাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে, সেই পুলিশ অফিসারের নামটা এখনও মনে আছে তার, অজয় দত্ত সুপর্ণাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়। বহু খোঁজাখুঁজির পর নীলার বডি যখন পাওয়া যায় তখন তা রক্তাক্ত ও অতি বীভৎস অবস্থা, নীলার চোখে মুখে সেই যন্ত্রণার ছাপ সুস্পষ্ট।
আজ কাগজটা খুলে বসতেই মাথাটা ঘুরে উঠল। তিনটে মর্মান্তিক রেপ কেস আর তিনজনকেই নৃশংস ভাবে রেপ করে মেরে ফেলা হয়েছে। একটা উত্তর প্রদেশে, একটা মধ্য প্রদেশে আর একটা তাদের এই পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল কলেজে।
-নীলার কাছ থেকে?
-ও তোর যে বেস্ট ফ্রেন্ড সেই নীলা?
-হ্যাঁ রে সেই নীলা।
-ও কী করে জানতে পারল?
-তা তো জানি না, তা আমাকে বলেনি।
-কী বলেছিল?
-এখন আমার ক্লাসের সময় হয়ে গেছে পরে তোকে বলব।
সেই কৌস্তুভ সুন্দর সুপুরুষ ব্রিলিয়ান্ট ছেলে এবং বড় ঘরের ছেলে, সেও যে তলে তলে ওই দলে যুক্ত ছিল তা সে বুঝতে পারেনি। নীলা সেটা জানতে পেরে তা সুপর্ণাকে জানাবার জন্য সুপর্ণার বাড়ির দিকে রওনা হয়েছিল। কিন্তু কৌস্তভ যে তাকে ফলো করছিল তা হতভাগ্য মেয়েটা বুঝতে পারেনি। নীলা অনেকক্ষণ সুপর্ণার সাথে সব কথা বলে মায়ের হাতের লুচি তরকারি খেয়ে দুই বন্ধুই কলেজের পথে বেরিয়েছিল। যেতে যেতে নীলা বলল, আজকাল কলেজে যেতেই ভয় করে, মনে হয় বিপদ যেন ওঁত পেতে আছে। কিন্তু বিপদ যে এত কাছাকাছি আর এত তাড়াতাড়ি ঘাড়ে এসে যাবে তা সেদিন বুঝতে পারেনি। তারা একটু এগোতেই একটা কালো অ্যাম্বাসাডর এসে তাদের পাশে দাঁড়ায় আর অভ্যস্ত একটানে নীলাকে মুখ বন্ধ করে গাড়িতে তুলে নেয়। ঘটনার আচম্বিতে সুপর্ণা কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে যায়, তারপর হেল্প হেল্প করে ছুটতে থাকে। সেই সময় একটা পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়ায়, এবং সুপর্ণাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে, সেই পুলিশ অফিসারের নামটা এখনও মনে আছে তার, অজয় দত্ত সুপর্ণাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়। বহু খোঁজাখুঁজির পর নীলার বডি যখন পাওয়া যায় তখন তা রক্তাক্ত ও অতি বীভৎস অবস্থা, নীলার চোখে মুখে সেই যন্ত্রণার ছাপ সুস্পষ্ট।
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment