প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Saturday, September 28, 2024

শারদ | ক্ষমা | সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়

বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/ধারাবাহিক/২য় বর্ষ/১৫তম সংখ্যা/শারদ/১১ই আশ্বিন, ১৪৩১

শারদ | ধারাবাহিক গল্প

সীমা ব্যানার্জ্জী-রায়

 

ক্ষমা

[১ম পর্ব]


"আমি অশোকের পেছনে দাঁড়িয়ে। ওনারা আমাকে দেখতে পাননি। ওদের কালচারে অনেকদিন পর ছেলে এসেছে বলে ওকে বরণ করার সময় আমাকে দেখে ফেলে। ওনারা ভেবে নেন আমি অশোকের বিবাহিতা স্ত্রী। আমি সালোয়ার কামিজ পরে গেছিলাম। ওর মা-বাবাকে প্রণাম করতে গেলে ওনারা সরে যান।"


“RN নিকি প্যাটেল?” ওর অ্যাপ্রোন-এর ল্যাপেলে নেম ট্যাগ দেখে চমকে ওঠে অর্ক ব্যানার্জ্জী। আবার ভাল করে দেখে। না না ঠিকই দেখছে তো তাহলে...
ইয়েস নিকিতা প্যাটেল স্যরআমি আপনার মেয়ে টুম্পি ব্যানার্জ্জী-এর নার্স। কী করে এমন সিরিয়াস হল এইটুকু মেয়ে। ঠিক সময় না এলে কিন্তু একটা বিপর্যয় ঘটে যেতে পারত। আমি পারসোনালি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাব। খুব সুইট মেয়ে আপনার। মাত্র তো দেড় বছর বয়স, তাই না? তবে ডাক্তার বলেছেন, বাহাত্তর ঘণ্টা না কাটলে কিছুই বলতে পারবেন না। এভরিথিং উইল বি ফাইন, মিস্টার ব্যানার্জ্জী।

মিসেস রুম্পি ব্যানার্জ্জী কেঁদে ফেলল শুনে। ধরা গলায় বলে ফেলল, "কেন যে দেশে নিয়ে গিয়েছিলাম এইটুকু বাচ্চাকে।"
- দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন? দেশে নিয়ে গেলে এক্সট্রা কেয়ার নিতেই হয়। এখানকার আবহাওয়া আর ওখানকার আবহাওয়ার মধ্যে অনেক ফারাক। বাচ্চা তো। যাই হোক। চিন্তা করবেন না, ঠাকুরের ওপর ভরসা রাখুন। আমিও আমার প্রার্থনায় ওর নাম রাখব
তোমাদের মেয়ে ডেঞ্জার ফ্রি। রুমে ঢুকেই বাহাত্তর ঘণ্টার পর নিকিতার এক মুখ হাসি।
-তুমি এই বাহাত্তর ঘণ্টা রাত জেগে আমাদের মেয়েকে সুস্থ করে তুললে। তোমার গিফট পাওনা রইল নিকি। উই উইল নেভার ফরগেট ইউ। আর প্যাটেল কেন লাস্ট নেম এর গল্প শুনব কিন্তু। কে সেই ভাগ্যবান যে তোমার মতন স্ত্রী পেয়েছে, সব সময় হাসি মুখ। অর্ক একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিকিকে বলল
- অশোক প্যাটেল। এক গাল হেসে জবাব দিল নিকি প্যাটেল। মিসেস ব্যানার্জ্জী, এটাই তো আমাদের ডিউটি। আর ইন্ডিয়ান দেখে নিজেই বলেছি এই কেস আমি নেব।

টুম্পি ভাল হয়ে যাবার পর বাড়িতে এসে অর্করা একদিন দুজনকে নিমন্ত্রণ করল সেদিন বেশ সেজেগুজে এসেছে দুজনে। নিকি শ্যামাঙ্গী কিন্তু বেশ মিষ্টি দেখতে। চুলগুলো কী সুন্দর বেড়া বিনুনি করে বাঁধা। খুব সুন্দর টিপটপ। আর অশোক তো এক কথায় হ্যান্ডসাম বলা চলে।
লুচি, আলুর দম, পালক পনীর, রায়তা, দই-বোঁদে। সব নিরামিষ রান্নাই করেছিল রিম্পি। খালি নিকির জন্য চিকেন বার-বি কিউ।
অশোক দেখে বলে নিকি কিন্তু পুরোদস্তুর গুজরাটি। নিরামিষ খাবার ছাড়া খায় না। জানেন, কী সুন্দর গুজরাটি খাবার বানায় একদম আমার মা-এর মতন।”

খাবারদাবার শেষ হল। নিকি সমানে রিম্পিকে সাহায্য করে গেল, বারণ করলেও শুনল না। সোফাসেটে বসে আইসক্রিম খেতে খেতে অর্ক নিকিকে জিজ্ঞেস করল, “নিকি এদিকে এসো। এইবার তোমাদের গল্প বলো! শুনি। নিকি আর রিম্পি কিচেন থেকে লিভিং রুমের সোফা সেট-এ এসে বসে শুরু করল গল্প, লুইজিয়ানায় আমি তখন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিতে নার্সিং পড়ছি আর অশোক মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং। আমেরিকান অ্যাক্সেন্ট বিশেষ করে লুইজিয়ানার ভাষা সে ভাল বুঝতে পারত না। এইরকম একদিন ক্যান্টিনে ওকে আমি দেখি একা মরোজড হয়ে বসে আছে। কাছে গিয়ে আলাপ করলাম- ‘হাই! আমি নিকিতা কোনোর। তোমার নাম কী? তুমি যদি কিছু মনে না করো-আমি কি এখানে বসতে পারি।’
- ইয়েস, বোসো বলল অশোক। তারপর ওর সাথে আলাপ করলাম। ওর অসুবিধার কথা আমাকে জানাল। আমি বললাম একটা শর্ত আছে যদি মানো তাহলে আমি তোমাকে হেল্প করতে পারি।
- কী শর্ত বলো।
বললাম, “আমাকে বন্ধু ভাবতে পারো। আমি তোমাদের সুইট ভাষা শিখতে চাই।
অশোক হেসে উড়িয়ে দিল। তারপর ওর খুব দরকার তাই একদিন আমাকে জানাল সে রাজি আছে। ওহ হ্যাঁ! এর মধ্যে আমরা আমাদের ফোন নম্বর আদানপ্রদান করি। আমরা উইক এন্ডে দুজন দুজনকে হেল্প করতাম কলেজ ক্যান্টিনে বসে। আমাদের দুজনকে একসাথে দেখে সবাই আড়চোখে দেখত, বিশেষ করে ভারতীয়রা।
- কেন কেন দেখত?
অর্কের উৎসুক প্রশ্ন।
- দুজনের এক গায়ের রং তাই,
বলে হেসে উঠল অশোক।
- অশোক নিকিকে নিয়ে দেশে গেছিলে নাকি? তোমার মা বাবাকে দেখিয়ে এনেছ তো?
নিকি অর্কের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমরা গেছিলাম তো।
- কেমন লাগলো ভারত? অশোক তুমি কোথায় থাকতে ইন্ডিয়ায়?
- নাগপুর।
অশোক কেমন যেন চুপ হয়ে গেল।
নিকি বলতে লাগল, “আমরা মাম্মি আর বাপুজিকে সারপ্রাইজ দেব বলে কিছু না জানিয়ে সোজা গেছিলাম। তখনও কিন্তু আমরা বিয়ের স্টেজে আসিনি বা লিভ টুগেদার করিনি বলতে পারো। এমনি বেড়াতে গিয়েছিলাম অশোকের সাথে। হাজির হলাম সোজা অশোকদের বাড়ি।

তিন বোনের পর অশোক সবার ছোট। প্লেনে যেতে যেতে ওদের বাড়ির সব গল্প করছিল। আমিও খুব মন দিয়ে শুনছিলাম। ওদের আদবকায়দা সব বলছিল। পৌঁছে গেলাম ওদের বাড়ি একটা উবের ভাড়া নিয়ে। অশোক বাড়ি গিয়ে কলিং বেল টিপতেই ওর ছোট বোন বাইরে বেড়িয়ে এসে অশোককে দেখে অবাক। মাম্মিজি... ভাইয়া এসেছে।ওর মা-বাবা আর দুই বোন অবাক হয়ে ছুটে বাইরে এসেছে। আমি অশোকের পেছনে দাঁড়িয়ে। ওনারা আমাকে দেখতে পাননি। ওদের কালচারে অনেকদিন পর ছেলে এসেছে বলে ওকে বরণ করার সময় আমাকে দেখে ফেলে। ওনারা ভেবে নেন আমি অশোকের বিবাহিতা স্ত্রী। আমি সালোয়ার কামিজ পরে গেছিলাম। ওর মা-বাবাকে প্রণাম করতে গেলে ওনারা সরে যান। কিন্তু আমি ওনাদের বোঝাতে চাইছিলাম যে, আমি অশোকের ফ্রেন্ড। ওনারা অশোককে বললেন, "আজ থেকে তুমি আমাদের ত্যাজ্য পুত্র হলে।" ওনারা একটুও বুঝতে পারেননি যে, আমি সব বুঝতে পারছি, বলেই একটু করুণ ভাবে হেসে নিল নিকি। অশোক তো আমাকে সমানে ফলো করছে। ও তো জানে আমি সব বুঝতে পারছি।
 
ক্রমশ…
 

1 comment:

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)