প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

ওয়েটিং লিস্টে আছি... | রতনলাল আচার্য্য

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা রতনলাল আচার্য্য ওয়েটিং লিস্টে আছি ....

Saturday, September 28, 2024

শারদ | কবিতাগুচ্ছ | কবি সলিল চৌধুরী | একগুচ্ছ চাবি

বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/কবিতাগুচ্ছ/২য় বর্ষ/১৫তম সংখ্যা/শারদ/১১ই আশ্বিন, ১৪৩১

শারদ | কবিতাগুচ্ছ

কবি পরিচিতিসহ
কবি সলিল চৌধুরী

একগুচ্ছ চাবি


উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি শুধু 
একগুচ্ছ চাবি 
ছোটো বড় মোটা বেঁটে 
নানা রকমের নানা ধরণের চাবি 
মা বললেন, যত্ন করে তুলে রেখে দাও।
 
তারপর যখন বয়স বাড়ল 
জীবন এবং জীবিকার সন্ধানে পথে নামতে হল পকেটে সম্বল শুধু সেই একগুচ্ছ চাবি 
ছোট বড় মোটা বেঁটে নানা রকমের 
নানা ধরণের চাবি।
 
কিন্তু যেখানেই যাই সামনে দেখি প্রকাণ্ড এক দরজা
আর তাতে ঝুলছে প্রকাণ্ড এক তালা; 
পকেট থেকে চাবির গুচ্ছ বের করি 
এ চাবি সে চাবি ঘোরাই ফেরাই
 
লাগে না খোলে না—
শ্রান্ত হয়ে ঘরে ফিরি 
মা দেখেন আর হাসেন 
বলেন, ওরে তোর বাবার হাতেও ওই চাবি দিয়ে
দরজাগুলো খোলে নি।
 
শুনেছি তাঁর বাবার হাতে নাকি খুলতো:
আসল কথা কী জানিস
ওই সব চাবিগুলো হল সত্যের সততার যুক্তির নিষ্ঠার
আজকাল ওই সব চাবি দিয়ে কোনো দরজা খোলে না
তবুও তুই ফেলে দিস না
যত্ন করে তুলে রেখে দিস।
তুইও যখন বুড়ো হবি
তোর সন্তানদের হাতে দিয়ে যাস
ওই সব চাবির গুচ্ছ
হয়তো তাদের হাতে আবার একদিন
ওইসব চাবি দিয়ে 
ওইসব দরজাগুলো খুলে যাবে।
 
সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতি
 
বি সলিল চৌধুরীর জন্ম দক্ষিণ ২৪ পরগণার রাজপুর-সোনারপুর অঞ্চলের গাজিপুরে। মাতা বিভাবতী দেবী। পিতা জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরী আসামের লতাবাড়ি চা বাগানে ডাক্তারি করতেন। একদিন সাহেব ম্যানেজার তাঁকে "কাম হিয়ার ডার্টি নিগার" বলায় তিনি ঘুঁষি মেরে সাহেবের তিনটে দাঁত ফেলে দেন। এর ফলস্বরূপ তাঁকে সবকিছু জলের দরে বিক্রি করে শুধুমাত্র কুকুর মার্কা কলের গানের গ্রামোফোন ও শখানেক সিম্ফনি রেকর্ড নিয়ে আসাম ছেড়ে চলে আসেন। গান্ধীজির সত্যাগ্রহের সময় তিনি নাকি দু-তিন ট্রাঙ্ক ভর্তি দামি সুট পুড়িয়েছিলেন! স্বাভাবিক ভাবেই বাবার প্রভাব কবি সারা জীবন ধরে অনুভব করেছেন। এমন সব ঘটনাবলিও তাঁর গানের ভেতর দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
কবি আট ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। দঃ ২৪ পরগণার সুভাষগ্রামে, যার পুরাতন নাম কোদালিয়া, তাঁর মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা। হরিনাভি স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন এবং আইএসসি এবং পরে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। 
দাদার অর্কেস্ট্রা ক্লাবে নানান বাদ্যযন্ত্র বাজানোয় হাতে খড়ি। ১৪/১৫ বছর থেকেই বাঁশি বাজাতেন। পরে আইপিটিএ-র সঙ্গেও বাঁশি বাজিয়েছেন। দুর্ভিক্ষের সময় যে দলটি আসাম ও বাংলা ঘুরেছিল, তিনি সেই দলেও বাঁশি বাজিয়েছিলেন। সুভাষগ্রামে মজে যাওয়া বিদ্যাধরী নদীর সংস্কারের দাবীতে যে আন্দোলন হয় ভাতে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। পার্টির জেলা নেতা শ্রী নিত্যানন্দ চৌধুরীর মতো সংস্কৃতি সম্পর্কে উদারচেতা মানুষের উৎসাহ দানের ফলে তিনি প্রায় প্রত্যেকটি মিটিং-এর জন্য একটি করে গান রচনা করতে শুরু করেন!
তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের সর্বক্ষণের কর্মী ছিলেন। ১৯৪৫ সালে, বঙ্গবাসী কলেজে পড়াকালীন রংপুরের ছত্রে সম্মেলনে যোগ দেবার সময়, আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দীদের বিচার নিয়ে লিখেছিলেন তাঁর প্রথম "গণ সংগীত'- বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতা। কৃষক আন্দোলনের জন্য তাঁর রচিত 'হেই সামালো যেই সামালো' গান অর্থ শতাব্দী পরের সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনকারীদের কণ্ঠেও আমরা শুনেছি। ১৯৫৬ সালের ২৯শে জুলাই, নৌ বিদ্রোহের সময় রচনা করেছিলেন "ঢেউ উঠেছে কারা টুটেছে'। দাঙ্গার সময়ে লিখেছিলেন 'ও মোদের দেশবাসীরে, আয়রে পরাণ ভাই, রহিম ভাই"।
এছাড়াও সলিল চৌধুরী অসাধারণ কবিতা লিখে গেছেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থ "সলিল চৌধুরির কবিতা" প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে। সেখানে তিনি লিখেছেন যে ১৯৪৮ সালে "পরিচয়"-এ তাঁর প্রথম কবিতা "শপথ" প্রকাশিত হলেও কেউ তখন কবি স্বীকৃতি দেননি। প্রায় তিন দশক পর তিনি দেখেছিলেন যে তাঁর কবিতা বিভিন্ন সভায় পাঠ হচ্ছে এবং লোকে ভালও বলছেন। তিনি কবিতা লিখেছেন পরিত্যক্ত যামে, হোটেলের মেনুকার্ডে কিংবা প্লেনে দেওয়া কাগজের রুমালে বা পুরানো ডায়েরিতে অথবা ধবধবে সাদা খাতার হয়তো প্রথম দুপৃষ্ঠায়। সবই হয়তো হারিয়ে যেত। কিন্তু তাঁর স্ত্রী এবং বিখ্যাত গায়িকা শ্রীমতী সবিতা চৌধুরীর সন্তান সমাদরে যত্ন সহকারে তা একত্রিত করে প্রকাশিত করার ব্যবস্থা করেন।
 

2 comments:

  1. অপেক্ষায় ওই চাবির গুচ্ছ আবার যেন তালা খুলতে সমর্থ হয়

    ReplyDelete
  2. ভীষণ প্রিয় কবিতা এটা।শ্রদ্ধায় নত করি মাথা। ✍️

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)