প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Saturday, September 28, 2024

শারদ | জলস্পর্শ বা মন খারাপের গল্প | মণিপদ্ম দত্ত

বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/গদ্য/২য় বর্ষ/১৫তম সংখ্যা/শারদ/১১ই আশ্বিন, ১৪৩১

শারদ | গদ্য

মণিপদ্ম দত্ত

জলস্পর্শ বা মন খারাপের গল্প


"কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি আমার ভিতরটা প্রকাণ্ড বিস্ফরণে পুড়ে গিয়েছিল। বাবাতুমি এত দেরি করলে কেনকেন তোমায় ভুলে যাওয়ার আগে একবার ডাকলে নাআমার সে অচেনা বোন বোধহয় আবার কাঁদল। দু ফোঁটা জল আমার খোলা করতলে গড়িয়ে পড়ল।"


বাবা বলতেন, কখনো মন খারাপ লাগলে জলের কাছে যেও। যেতামও। বাড়ির পাশেই দিঘি ছিল। একটু দূরেই ডুরে পাড় নদী।  মন ভাল হতো জলের উপর ব্যাঙবাজি খেলে। ভাবতাম বাবা বোধহয় এটাই বলেছিল। আজ যখন বহুদিন পর সত্যি সত্যি নামতে হল নদীর ভিতর, জল ছুঁতে, তখন আমার হাতে বাবার নাভিকুন্ড। জল ছুঁতেই ভেসে গেলো দূরে। অনেকদিন পর মন ভালর মন্ত্রটাই ভেসে উঠল মস্তিষ্কের কোষে। মৃত পিতার নাভিকুন্ড নিয়ে তো আর ব্যাঙবাজি খেলা চলে না। বরং যতটুকু মন খারাপ ছিল, একটু গাঢ় হয়ে দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরোল। আসলে বাবা তো জানত না আমার আর মনখারাপই হয় না। ভুলে যাওয়া শৈশবের পর অনেক সেয়ানা হয়ে উঠেছি। বসে আছি সব মনখারাপেরই ঊর্ধ্বে। সত্যি বলতে কী, এই মুহূর্তেও আমার মন অন্য কোথাও আছে।
 
দীর জলে বেশিক্ষণ থাকা হোল না। অনেকানেক মৃতদেহ শ্মশান চত্বরে। অনান্য মৃতদেরও তো জায়গা ছাড়তে হবে।
 
আকাশে ফ্যাকাশে চাঁদ ছন্নছাড়া মেঘের আড়ালে। উঠে এসে যেখানে দাঁড়ালে আমাদের স্বজন-সঙ্গীদের দ্যাখা যায়, অন্ধকারে, একটা সিগারেট ধরালাম। সব্বাইকেই দেখলাম ক্লান্ত ও নিশ্চিন্ত। বাবা বোধহয় প্রয়োজনের থেকে একটু বেশিদিন বেঁচে ছিল। এই বার ফিরতে হবে। ছোটমামা তাগাদা দিচ্ছে সমানে। আমিও সিগারেট নিভিয়ে গাড়িতে। সবাইকে পেলেও একজন তখনও নিখোঁজ। বাবামার শেষ বয়সে হওয়া আমাদের ছোটবোন শ্যামা। যাকে নিয়ে আমাদের এক সময়ে বিড়ম্বনার অন্ত ছিল না। আমাদর সকলের থেকে বেশ ছোট। কলেজ পড়ুয়ার নতুন ভাইবোন হোলে কারই বা আনন্দ হয়! কিছু বাদে ছোট মাসির হাত ধরে। ওকে কোনদিনই তেমন করে তাকিয়ে দেখিওনি। কলেজের পর চাকরি, বউ, বাচ্চা নিয়ে, কলকাতার বাইরেই বহুদিন। শুনেছি মা যাবার পর ওই নাকি বাবাকে দেখাশুনো করত। আড়চোখে দেখলাম ওর ভাঙাচোরা গালে বোধ হয় জলের শুকনো দাগ। চোখদুটো নতুন অন্ধের মতো আলুথালু, দৃষ্টিহীন।
 
ব্যস ওইটুকুই। ফিরতে ফিরতে হঠাৎমনটা কেমন করে উঠল। আমার চোখদুটো সামান্য জ্বলছে। মাটি কী একটু বেশিই দুলছে! চকিতে আমার হাত অনুজার মাথাটায় পৌঁছে গেলো। ওর কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত। কারোরই মুখ দিয়ে কথা বেরুল না। কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি আমার ভিতরটা প্রকাণ্ড বিস্ফরণে পুড়ে গিয়েছিল। বাবা, তুমি এত দেরি করলে কেন? কেন তোমায় ভুলে যাওয়ার আগে একবার ডাকলে না? আমার সে অচেনা বোন বোধহয় আবার কাঁদল। দু ফোঁটা জল আমার খোলা করতলে গড়িয়ে পড়ল।
 
এই প্রথম আমি বাবার কথা মতো জল ছুঁতে পারলাম।
 

***

3 comments:

  1. মুগ্ধ। দিনলিপিপ্রায় । আরো লিখুন আপনি।

    ReplyDelete
  2. অপূর্ব! মনটা ছুঁয়ে গেল। অতীন বিশ্বাস

    ReplyDelete
  3. ভালো লাগলো

    ReplyDelete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)