বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/গদ্য/২য়
বর্ষ/১৫তম সংখ্যা/শারদ/১১ই আশ্বিন, ১৪৩১
শারদ | গদ্য
নীলম সামন্ত
ভরসাযোগ্য রাতের উদ্দেশ্যে
"এত কাঠখড় পোড়াতে হবে না, তার চেয়ে আসুন, আমার দোকানে আসুন। টুকরো টুকরো কাচ উপহার দেব। হাতে নিলেই টের পাবেন, যে জন্তু ঘুমিয়ে আছে তার হাত পা কলিজা নড়েচড়ে উঠছে, সে আকারে বড় হচ্ছে৷ না না কোন টাকা দিতে হবে না৷ আজ দানধ্যানের রাত৷"
ফুল সরিয়ে মাংসের দোকান
দিতে চেয়েছি৷ ধারালো ছুরি দিয়ে ঘষ ঘষ শব্দে কেটে দেব ভরসাযোগ্য আধুনিকতা। ওভারকোটে
সামান্য রক্ত এসে পড়লেও কিচ্ছু যায় আসবে না৷ আমি জানি রাত্রি এখন অনেক গাঢ়৷ চাঁদ
তারা কিছুই প্রায় দেখা যায় না। তাছাড়া—
এই তো রবি-অস্তের মাস
ফুরিয়ে যাচ্ছে৷ খবরের কাগজ হাতে আয়নায় দাঁড়ালেই দেখতে পাই আমার ভেতর একটি ছটফটে
জন্তু কুঁকড়ে শুয়ে আছে৷ সে নতুন দোকানের খবর জানে৷ রোজ হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দিতে
আসে৷ একটা দুটো করে যৌনাঙ্গ মেলে দেয়। জানি না শেষ কবে রক্তকরবী মঞ্চস্থ হয়েছিল, নায়িকা তার ব্লাউজের হুক
লাগাতে ভুলে গেছিল বলে দর্শক আসন থেকে নখ, দাঁত, দৌড়োতে দৌড়োতে এসেছিল। এই ঘটনার আসলে কোন শেষ নেই যে নতুন করে শুরু হবে৷
তাই আমার দোকানের খবর পেয়ে দলে দলে মেয়েরা এসেছে পণ্য দান
করতে৷
বিশ্বাস করুন আমার আপনাকে
করুণা হয়৷ আপনাদের দাঁত ও জিভের সমীকরণ হিসেব করেই মাংসের পিস কেটেছি৷ তবে আগুন
উপযোগী এখানে কিছুই নেই৷ আমি আসলে আপনাদের সম্মান দিতে চাই৷ আর তাই আপনাদের মুখের
মাপেই প্রতিটা মাংস।
ভরসা করুন, ঠকবেন না৷ যদি ঠকেও যান তাও
রাজপথে আলো জ্বলবে। আপনার জন্য আমারই ঠিক করা জনতা স্ট্রেচার নিয়ে যাবে৷ মুখের ওপর
ঝুঁকে থাকবে নরম দুটো চোখ। নাভির গন্ধ না দিলেও আপনি পাবেন৷ শুধু পাবেন না চোরা
আগুন ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগাম সংবাদ৷ আপনি জানবেন না যে মাতৃজঠরে
একদিন বেড়ে উঠেছিলেন সেখানেই অযাচিত উপদেশ জোর করে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। আর ভেঙে
দিচ্ছেন রাষ্ট্রের হাড়গোড়।
আপনি মেহনতি মানুষ। তাই
আমাকেও মেহনতি হতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে ভরসা দেবার জন্য, গলিপথে বসন্ত বা হেমন্ত যাই
থাক ঋতুকালীন সহাবস্থানের জন্য হৈচৈ নয় বরাদ্দ কেবল নম্রতা৷ এবং কড়া পাহারায় কোন
চৌকিদার নয় বসিয়ে দিচ্ছি বিষাক্ত সাপ।
এত কাঠখড় পোড়াতে হবে না, তার চেয়ে আসুন, আমার দোকানে আসুন। টুকরো টুকরো কাচ উপহার দেব। হাতে নিলেই টের পাবেন,
যে জন্তু ঘুমিয়ে আছে তার হাত পা কলিজা নড়েচড়ে উঠছে, সে আকারে বড় হচ্ছে৷ না না কোন টাকা দিতে হবে না৷ আজ
দানধ্যানের রাত৷ ভরিয়ে দিতে পারলেই জনসমক্ষে জানিয়ে দেব আমি কন্যা সন্তানের মা,
আমি চেষ্টা করছি আমার সন্তানসন্ততির জন্য ভরসাযোগ্য বাতাস তৈরি
করতে৷ তারা যখন রাত্রি বেলায় কাজ সেরে ক্লান্ত পথে ফিরবে বা কাজে যাবে পারিজাতের
গন্ধে দু লাইন লিখবে, *— বাতাসে বারুদের গন্ধ নেই, বাতাসের রক্তের গন্ধ নেই, বাতাসে পারিজাত, এই ঘন রাত্রির ভেতর আমার সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে নিষ্পাপ শিশিরবিন্দু।*
***
কেয়াবাত🙏
ReplyDelete