বাতায়ন/ত্রৈসাপ্তাহিক/ছোটগল্প/২য়
বর্ষ/১৫তম সংখ্যা/শারদ/১১ই আশ্বিন, ১৪৩১
শারদ | ছোটগল্প
জগন্নাথ মহারাজ
কুমারী পূজা
"এটা শাস্ত্রসম্মত? না প্রাচীন প্রথা, সেই সত্যতা নিয়ে তো ব্রাহ্মণ্যসমাজ কোনদিন সন্দেহ প্রকাশ বা বিরোধিতা করেনি? বাহ্ পতিতালয়ের মাটিকে পবিত্র ভাবছ, আর পতিতার নিষ্পাপ মেয়েকে ঘৃণা! তাকে স্বীকার করতে এত কুণ্ঠিত কেন?"
বহু প্রাচীন মুখার্জী পরিবারের দূর্গা পূজা। মণ্ডপে
শুদ্রদের প্রবেশের অধিকার নাই, তবে মন্দির প্রাঙ্গণের কিছুটা দূরে এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে পূজা দেখতে তারা
অভ্যস্ত।
সেদিন মহাষ্টমীর সন্ধি পূজা, গুরু গম্ভীর কন্ঠে ভেসে আসে, ওঁ কালী করাল বদনা...
হঠাৎ মুহূর্তের মধ্যেই শুরু হয় হট্টগোল। অন্ত্যজ শ্রেণীর
চতুঃবর্ষীয়া একটি শিশু নাকি সবার অজ্ঞাতেই কৌতূহলী মনে মন্দিরের
দ্বারদেশে। গৃহের প্রবীণা কর্ত্রী চেঁচিয়ে ওঠে, 'আজ মহাষ্টমী সব অশুচি হয়ে গেল গো... যা জন্মেও দেখিনি তাই দেখতে হল'...
রক্তিম চোখে পূজারী ব্রাহ্মণ পশ্চাতে তাকিয়ে বলে— ওকে শীঘ্রই বের করো, নইলে যে অনর্থ ঘটবে।
গঙ্গা জল ছিটিয়ে ক্ষমা প্রার্থনারত নারীরা কুলগুরুর কাছে
শাস্ত্র বিধান চাইল, কিন্তু গুরু ধ্যানে নিমগ্ন। বলিদানের সময় মন্দিরের ভেতর থেকে ব্যাঘ্রের ন্যায় গর্জন শোনা গেল— ছাগ বলি আর হবে না! আজ
আমি আমার বংশ পরম্পরার অন্ধকারে আচ্ছন্ন অহং-এর বলি দিয়েছি
এই মহা সন্ধিক্ষণে।
স্তম্ভিত পরিবেশ। ঘরের প্রবীণ গৃহকর্তা তাঁর সিদ্ধান্তে
অটল। তিনি যে মহা নবমীতে ঐ কুমারীকে তার দূর্গা মণ্ডপে পূজা করতে চান। গ্রামবাসী বিস্মিত—
এ কী! সারা জীবন যে গোঁড়া
ব্রাহ্মণ! তাহলে কী মতিভ্রম ঘটল বড়বাবুর?
কিন্তু উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করে পূজারী ব্রাহ্মণ— 'সমাজচ্যুত পতিতার মেয়ে, ছিঃ ছিঃ! মা যে রুষ্ট হবেন... এ তো ভাবাও পাপাচার...'
বড় কর্তার হুঙ্কারে মন্দিরচত্বর প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠল— তুমি যে শাস্ত্রজ্ঞ অথচ বিস্মৃত হলে "স্ত্রীয়া
সকলা সমস্ত জগৎ সু"
সপ্তমী তিথিতে পতিতা গৃহের শুদ্ধ মৃত্তিকা মাতৃঅঙ্গে লেপন
করে স্নান করালে? এটা শাস্ত্রসম্মত? না প্রাচীন প্রথা, সেই সত্যতা নিয়ে তো ব্রাহ্মণ্যসমাজ কোনদিন সন্দেহ
প্রকাশ বা বিরোধিতা করেনি? বাহ্
পতিতালয়ের মাটিকে পবিত্র ভাবছ, আর পতিতার নিষ্পাপ মেয়েকে ঘৃণা! তাকে স্বীকার করতে এত কুণ্ঠিত কেন?
ব্রাহ্মণ অধোমুখে লজ্জিত, তিনি যে মেনে নিতে পারছেন না! এ যে কুলীন ব্রাহ্মণ সমাজের আধিপত্যের বুকে চরমতম আঘাত। সেই মুহূর্তেই
ধ্যানস্থ কুলগুরু মধুর হেসে আপন মনেই বলে উঠলেন— ভক্তির রসে
ডুব দে রে, সর্ব জীব জড়, সর্ব জাতির মধ্যেই যে তিনি বিলীন...
মনের সমস্ত দ্বন্দ্ব দূরীভূত হলো সকলের। গুরুবাক্য খণ্ডন করে সাধ্য কার...
নবমীর দিন গৃহের প্রবীণা কর্ত্রী স্বহস্তে ঐ শিশুকন্যাটিকে স্নান ও নববস্ত্রে সজ্জিতা
করে মণ্ডপে আনলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাতৃমন্ত্রের প্রতিধ্বনিতে মন্দিরচত্বরের
আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠল।
...বাল রূপাঞ্চ ত্রৈলোক্য সুন্দরীম্ বর বর্ণিনীম / নানা লঙ্কার নম্রাঙ্গীং / ভদ্র বিদ্যা প্রকাশিনীম্...
...বাল রূপাঞ্চ ত্রৈলোক্য সুন্দরীম্ বর বর্ণিনীম / নানা লঙ্কার নম্রাঙ্গীং / ভদ্র বিদ্যা প্রকাশিনীম্...
***
মূল্যবান দলিল। অসাধারণ উপস্থাপনা
ReplyDeleteধন্যবাদ🙏
Delete