বাতায়ন/মাসিক/গদ্য/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক, ১৪৩১
চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | গদ্য
শিশির আজম
আত্মপ্রতিকৃতি
"সেজান আর মাতিসের 'স্টিল লাইফ' কি ল্যান্ডস্কেপের যে ব্যাপ্তি আর পোর্ট্রেটের নিগুঢ় অন্তর্ময়তা, তাকে স্পর্শ করে না? আমাদের চেতনা কি আচ্ছন্ন বা আলোড়িত হয় না?"
ছবি দেখার
ক্ষেত্রে আত্মপ্রতিকৃতির প্রতি আমার আলাদা দুর্বলতা আছে। অনেকের মতো আমার চেতনাও
ভ্যান গঘ আর ফ্রিদা কাহলোর আত্মপ্রতিকৃতিতে নাড়া খায়। হ্যাঁ, এক সময়
পোর্ট্রেটকে পেইন্টিংয়ের সম্মান দেওয়া হতো না। লিওনার্দো-মাইকেলাঞ্জেলো-বের্নিনির
মতো রেনেসাঁর গুরুশিল্পীরা প্রথম এই মিথ ভেঙে পোর্ট্রেটকে সমঝদারদের সামনে
আকর্ষণীয়
করে তোলেন। পোর্ট্রেট পেইন্টিংয়ের
অভিজাত ঘরানায় নিজের জায়গা করে নেয়। আর এটাকে বহুগুণে মহিমান্বিত করে তোলেন রেমব্রা-গয়া, পরবর্তীতে
গঘ-গগাঁ-মনে-মানে-দেগা-রেনোয়া-পিসারো-পিকাসো-ব্রাক-দালি-অবনীন্দ্রনাথের মতো
মাস্টার পেইন্টাররা। বলা যায়, এটা ছিল ওদের 'রাস্তা খোঁজার চেষ্টা', ভ্যান গঘের
ভাষায়। আর আজকের যুগের শিল্পীরা এটাকে আর্ট হিসেবে কোন উচ্চতায় নিয়ে এসেছেন সেটা
আমরা ইউরোপ এবং এখনকার চিন-জাপান-কোরিয়া-মেহিকো-ভারত এমনকি বাংলাদেশের শিল্পীদের
কাজ দেখলেও উপলব্ধি করতে পারি। এখন আর পোর্ট্রেট পেইন্টারদের দিকে কেউ নাক উঁচু
করে তাকায় না। হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথ কিন্তু একাডেমিক শিক্ষা ব্যতীতই তার ড্রইং এমনকি পোর্ট্রেটেও আলাদা বোধ সঞ্চারিত করতে পেরেছেন, কোন
জোরাজুরি বা টেকচারের কারিকুরি ছাড়াই। ভারতবর্ষের ট্র্যাডিশনাল পেইন্টিংয়ে এটা
কিন্তু আগে দেখা যায়নি। পঁয়ষট্টি বছর বয়সে আঁকা শুরু করে রবীন্দ্রনাথ
এটা কীভাবে পারলেন,
চিত্রকলার ইতিহাসে এও এক বিস্ময় হয়ে থাকবে। তবে ৬০ বছর বয়সে আঁকা লিওনার্দোর
এই আত্মপ্রতিকৃতি আমার কাছে আলাদা কিছু। আমরা জানি লিওনার্দোর সম্পূর্ণ
শিল্পকর্মের সংখ্যা হাতে গোনা। তার সব কাজই প্রায় 'অসম্পূর্ণ'। তবে
কিছু 'সম্পূর্ণ' আর অগণিত 'অসম্পূর্ণ' কাজ নিয়েই
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এই গ্রহের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পেইন্টার। হ্যাঁ, লিওনার্দোকে
বোঝার জন্য বা অনুভব করবার জন্য ওঁর এই এক আত্মপ্রতিকৃতিই যথেষ্ট।
এবার আসল কথাটা বলি,
ওঁর এই আত্মপ্রতিকৃতিটাকে আমার বিশাল এক ল্যান্ডস্কেপ বলে মনে
হয়, যে
ক্যানভাস আমাদের এই পুরো মহাজগৎটাই ধরে রেখেছে। সেজান আর মাতিসের 'স্টিল লাইফ' কি
ল্যান্ডস্কেপের যে ব্যাপ্তি আর পোর্ট্রেটের নিগুঢ় অন্তর্ময়তা, তাকে স্পর্শ
করে না? আমাদের
চেতনা কি আচ্ছন্ন বা আলোড়িত হয় না? জয়নুলের অতিসাধারণ এক ব্রাশস্ট্রোক
কি গত শতকের চল্লিশের দশকের কলকাতার রাস্তায় দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের অসহনীয় মৃত্যু
আর শাসকের নিস্পৃহতার সংশ্লেষণ হয়ে আমাদের চেতনার অন্তঃস্থলে
আঘাত করে না?
সফিউদ্দীন আর কিবরিয়ার ছাপচিত্রে আমাদের চেনা জগৎটাকেই তো আমরা অন্যভাবে দেখি, বিস্মিত হই, বিরক্ত হই।
নাকি আর্ট নিজের খোলস বা কাঠামোকে সবসময় অস্বীকার করতে চায়!
সমৃদ্ধ হলাম🙏
ReplyDeleteঅনবদ্য
ReplyDelete