প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Saturday, November 9, 2024

পাশে আছি | অজয় দেবনাথ ও সঙ্ঘমিত্রা দাস


 

বাতায়ন/মাসিক/যুগলবন্দি/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক, ১৪৩১

চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | যুগলবন্দি | সঙ্ঘমিত্রা দাস ও অজয় দেবনাথ

সঙ্ঘমিত্রা দাস

পাশে আছি


"সযত্নে ভাঁজ আলগা করো। বিনিদ্র বিছানায় বসে একটিবার চিঠির পাতায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দেখো। দেখো আছি আমি তোমারই পাশে।"


"আমারও মন যে চায়… আমার ফেলে আসা সমস্ত সাংগীতিক যন্ত্রপাতি আবার নিজের করে পেতে, তানপুরা সুর ধরবে… বেজে উঠবে জলতরঙ্গ… বাজবে শঙ্খধ্বনি… আবার আমরা ফিরে যাব আমাদের একান্ত নিজস্ব স্বর্গে।"


সুজন,
 
এখন রাত গভীর। এই গভীরতার সাথে মনকে জুড়ে নিয়ে, ভোরের আলোর ভয় জড়িয়ে লিখতে বসেছি তোমাকে এই চিঠি। ওই দূরে অনন্তদের বাড়ির পাশে ত্রিকোণ লাল বাক্সটা একাকী দাঁড়িয়ে আছে। আবছা অবয়বটা আমার জানলার বাইরে তাকিয়ে স্পষ্ট অনুভব করতে পারছি। এই মোবাইলের যুগে ও বড়ই নিঃসঙ্গ, কোথায় যেন মিলে যায় আমার সাথে।সপ্তাহান্তে একবার ডাকবাবু আসেন, তালা খোলেন। সেই অপেক্ষায় ঠায় দাঁড়িয়ে। ডাকবাবু শুনে হাসছ? হ্যাঁ, আমি আজও ডাকবাবুই বলি। তোমাকে যে ওই নামেই ডাকতাম। আজ সেসব ইতিহাস। কিন্তু সে যে সাক্ষী হয়ে আছে আজও। কী জানি কী করে নজর লাগল আমাদের সম্পর্কে। তখন জানলে একটু লেবু লঙ্কা ছুঁয়ে দিতাম কিংবা কালোজিরে বুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে নিতাম।
 
কালি কলমে শরীরী ভাষা। চিঠির বুকে আমার ঠোঁট দুটো নড়ে ওঠে কত না বলা কথায়। লেখার ছন্দ কাটে। ফেলে আসা কথার ভিড়ে রাত ফুরোতে থাকে। কাগজ ভিজে যায় কয়েক ফোঁটা নোনা জলে।
 
তুমি যখন উচ্ছসিত নিঃশ্বাসে এই চিঠি পড়বে তখন হাজার মাইল দূরে অবুঝ মন স্পর্শ করবে তোমার সেই আকুলতা, রেখে যাওয়া অনুভতির জলতরঙ্গ বাজবে। আবেগে বিভোর হবো আমি। স্বপ্ন ছায়ার জোয়ার তখন আমার চোখের তারায়।
 
সযত্নে ভাঁজ আলগা করো। বিনিদ্র বিছানায় বসে একটিবার চিঠির পাতায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দেখো। দেখো আছি আমি তোমারই পাশে।
 
ইতি—
তোমার আশা
 
 
যুগলবন্দি | অজয় দেবনাথ ও সঙ্ঘমিত্রা দাস
অজয় দেবনাথ
 
মিতা,
 
কোনও বিশেষ মুহূর্তে তোমার কোমল স্পর্শমাখা বস্তুতে ঠোঁট ছোঁয়ালেই তোমার পরশ পাব, এমনই ভাব আমায়! তবে এটা জেনে খুশি হও, মনশ্চক্ষে চাইলেই আমি তোমাকে কাছে পাই। তোমার সর্বাঙ্গ সোহাগ-চুম্বনে ভরিয়ে দিয়ে কত যে আদর করি শুধু তোমাকেই, কী করে বোঝাই!

তোমাকে মিতা বললাম বলে চমকে গেলে? আসলে তোমাকে এক-এক সময় এক-এক নামে ডাকতে ইচ্ছে করে, মিতা, অলি, বহ্নি, কাঁকন অথবা সুপ্রিয়া… তবু আশ মেটে না যে।
 
কারুর নজর লাগেনি আমাদের সম্পর্কে। তাই লেবু-লংকা ছুঁইয়ে বা কালোজিরে পোড়ালে শুধু ছোঁয়ানো বা পোড়ানো ছাড়া আর কিছুই হতো না। আসলে সম্পর্ককে ধরে রাখতে গেলে লাগে মনের জোর যা তোমার ছিল না। নয়তো দ্বিধার সাগরে ভেসেছিলে তুমি। তোমার দ্বিধার সাগর তোমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল আমার থেকে লক্ষ যোজন দূরে। হাঃ সবই ভবিতব্য।
 
তবু ভাল লাগে ইতিহাস যখন বাস্তবে কথা বলে, প্ল্যানচেটের ভৌতিক আবহের মতো। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের একটা গান মনে পড়ে জানো, ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে…’। তুমি যে এত-এত বছর পরেও দ্বিধার সাগর থেকে মুক্তি পাওনি তার কারণ আমার ভালবাসা অকৃত্রিম, কোনও খাদ ছিল না তাতে। শুধু সময়ে তুমি তা বুঝলে না!
 
যদিও তুমি এখন পরস্ত্রী আর পরস্ত্রী পরমাতুল্য— একথা আমি মানি না। তবু বেশ লাগে যখন তোমার চিঠি পাই, যখন জানতে পারি এক পরমা সুন্দরী রাজেন্দ্রাণী রাত জেগে আমাকে লিখছে তার নিভৃত গোপন কথা। নোনা জলে সিক্ত তার শরীর, আরও কতকিছু মিশে আছে সেই অবগাহনে।
 
সত্যি কথা যদি বলতে বলো আমারও মন যে চায়… আমার ফেলে আসা সমস্ত সাংগীতিক যন্ত্রপাতি আবার নিজের করে পেতে, তানপুরা সুর ধরবে… বেজে উঠবে জলতরঙ্গ… বাজবে শঙ্খধ্বনি… আবার আমরা ফিরে যাব আমাদের একান্ত নিজস্ব স্বর্গে।
 
আমার নবযৌবনের দোহাই তোমায়, তুমি একবার অন্তত এসো, স্বর্গের পারিজাত ফুটিয়ে তুলতে।
 
তোমার ডাকবাবু।
 
 

11 comments:

  1. চিঠি চালাচালির আঙ্গিকে চমৎকার ধরা পড়েছে, প্রেমজ-সম্পর্কের এক ছিলাটান বৈভব।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অজয় দেবনাথNovember 11, 2024 at 7:16 AM

      আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ বন্ধু। আপনার মতো আগ্রহী পাঠক যে-কোনো লেখকেরই কাম্য। যদিও আপনি নিজের নাম প্রকাশ করেননি, নাম জানতে পারলে খুশি হতাম আরও।

      Delete
  2. Replies
    1. অজয় দেবনাথNovember 11, 2024 at 7:24 AM

      শুধুই আহা! বেশ... পরিচয়হীন বন্ধু আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। ভালো থাকুন, সঙ্গে থাকুন।

      Delete
  3. দীপক বেরাNovember 11, 2024 at 8:13 AM

    সত্যিই, হারিয়ে গেল হাতে চিঠি লেখার সেই ঐতিহ্য। যা রোমান্টিক প্রেম, বন্ধুত্ব, পারিবারিক বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বাইরেও প্রসারিত ছিল। পারস্পরিক দূরত্বের বিচ্ছিন্নতায় যে চিঠিগুলি ছিল আমাদের লাইফলাইন, যা আমাদের শারীরিক এবং মানসিক উভয় দূরত্ব জুড়ে প্রিয়জনের সাথে সংযুক্ত করে রাখত। প্রকৃতপক্ষে, হাত দ্বারা লেখার কাজ, আবেগের গভীরতা দিয়ে চিঠিগুলিকে আচ্ছন্ন করে, যা একটি পৃষ্ঠায় নিছক শব্দগুলিকে অতিক্রম করে যায় জীবনের বহুদূর পর্যন্ত। রাত জেগে অনেক কষ্ট করে বানানো স্ক্রিপ্টের করুণ কিংবা আনন্দবার্তায় লেগে থাকা পরস্পরের শরীরী ঘাম অথবা সুগন্ধির ক্ষীণ ঘ্রাণ, —প্রতিটি অক্ষর কেবল তার বিষয়বস্তুর মাধ্যমে নয় বরং এটিকে নিজের হাতে ধরে রাখার স্পর্শকাতর অভিজ্ঞতার মাধ্যমে একটি একান্ত নিজস্ব গল্প বলে।
    বাতায়নের এই 'যুগলবন্দি' বিভাগটি আমাদের হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্য ও রোমান্টিকতার নিরিখে এক অভিনব উদ্যোগ। 'যুগলবন্দি'-র উভয় চরিত্রাভিনেতাকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অজয় দেবনাথNovember 13, 2024 at 10:38 AM

      খুব সুন্দর বললেন দীপকদা। আপনার অত্যন্ত মূল্যবান মন্তব্যে এটা ফুটে ওঠে সত্যিই আমরা সেই স্বর্ণযুগ অতিক্রম করে এসেছি। আহা, বড় মধুর সেইসব দিন। আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আপনাকে, ভাল থাকুন।

      Delete
  4. আহা ! হৃদয় ছোঁয়া চিঠির মনকেমনের কথামালা

    ReplyDelete
    Replies
    1. অজয় দেবনাথNovember 13, 2024 at 10:39 AM

      সত্যি জয়ন্তদা, সত্যিই মনকেমন।

      Delete
  5. সঙ্ঘমিত্রাNovember 11, 2024 at 11:17 AM

    অনেক ধন্যবাদ মতামত প্রকাশের জন্য। আপনাদের ভালোলাগা আমাদের সম্পদ।

    ReplyDelete
  6. সমস্ত অনুভূতি গুলো জলতরঙ্গের মতো মনন ছুঁয়ে গেলো। বিষয় বস্তুর এই মধুর ধারায় যে ভেসেছে সে বুঝবে এই আত্তীকরণ। ডাকবাক্স গুলো বন্ধ হয়ে গেছে বটে কিন্তু গোপনে একটি চিঠি যার রক্ষণে নেই বড়োই কাঙ্গাল। চলুক এই যুগল বন্দী চলুক। এ সাহিত্য সুখপাঠ্য।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অজয় দেবনাথNovember 29, 2024 at 5:23 PM

      আপনার মতো আগ্রহী, মননশীল পাঠককে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। সত্যিই চিঠিবিহীন মানুষ বড্ড কাঙাল। আপনার পরিচয় প্রকাশ্যে এলে আমার মননও জলতরঙ্গের সুরে বেজে উঠত।

      Delete

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)