বাতায়ন/মাসিক/রম্যরচনা/২য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১
মোহন
রায়হান সংখ্যা |
রম্যরচনা
প্রদীপ
কুমার দে
ঝিঙাফুল সিরিজ— ১
ঝিঙাফুলের দ্বাদশ তিথি
"আজ ভোররাতে যখন তুমি দুষ্টুমি করছিলে তখনই আমাদের দুজনের মাথায় ঠোকাঠুকি লেগেছিল, সে খেয়াল আছে? আনন্দ পেলে সব ভুলে যাও, তাই না?"
-এই শোনো
শোনো একবার এদিকে এসো-তো...
-কেন? আমি তো বাথরুমে?
-একবারটি বের
হও-না, নাহলে বিপদ হয়ে যাবে যে…
-সে আবার কী? বিপদ কোথায়? কেন?
ভয় পেয়ে
তাড়াতাড়ি গামছাটা কোমরে জড়িয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলাম। বৌ
ঝিঙাফুল দৌড়ে সামনে চলে এসেই আমার মাথায় ওর মাথাটা ঠুকে দিয়ে বললে,
-যাও এবার
বাথরুমে ঢুকে যাও ফাঁড়া কেটে গেল।
আমি অবাক। জিজ্ঞেস করলেম,
-তা ফাঁড়াটা কী হয়েছিল?
ঝিঙাফুল
হেসে গায়ে ঢলে পড়ে বললে,
-আজ ভোররাতে
যখন তুমি দুষ্টুমি করছিলে তখনই আমাদের দুজনের মাথায় ঠোকাঠুকি লেগেছিল, সে খেয়াল
আছে? আনন্দ
পেলে সব ভুলে যাও, তাই
না?
-ও মা! সে কখন হল,
আমি তো কিছুই জানি না?
-তা কেন
জানবে? যখন
আমার মাথায় শিং গজাবে তখন তুমি কী
করবে? আমার
পিসিমা তাই বলেছিল,
'একবার ঠোকা খেলে দুবার ঠুকে নিবি, তাহলে আর ভয় নেই', আমি সকালে
মনে করেও বারেবারে ভুলে যাচ্ছিলাম, তাই...
বলেই ও এমন আমাকে ধরে হাসল যে আমার কোমরে আলগা হয়ে লেপ্টে থাকা গামছাটা গেল খুলে। উলঙ্গ মহাদেব হয়ে গেলাম।
আর যাই কোথায়? ঝিঙাফুল তো কেঁদেকেটে ভাসিয়ে দিল,
-ছি ছি আজকে
দ্বাদশীর দিনে আমার দিনের ব্রতটাই নষ্ট করে দিলে তুমি?
-আরে, আমি তো
তোমার স্বামী, তোমারই
গুরু হই…
-চুপ করো, স্বামী তো কী হয়েছে? দ্বাদশীতে কার পুজো করতে হয় জানো তুমি? ঠাকুর্মা পয়পয় করে বলেছিল, 'এদিন স্বামীর আশেপাশেও থাকবি নে, এদিনটা নারায়ণের। শিবলিঙ্গ ছুঁবিও নে, দেখবিও নে।
আমি শালা এই নিয়ম আর অনিয়মের বেড়াজালে একেবারে নাজেহাল। কাঁদব না হাসব,
-যাও
চোখেমুখে জল দিয়ে ধুয়ে নাও গে...
-তুমি একটা বাজে লোক, আজ ব্রতটাই গেল। গুরুদেবের কাছে গিয়ে সব বলে দোষ কাটাতেই হবে, না হলে ঘোর অমঙ্গল, ভয়ানক ক্ষতি হয়ে যাবে যে…
ঝিঙাফুল তাড়াতাড়ি শাড়ি ব্লাউজ পরে নিল,
-খুব হয়েছে, এখন আমাকে
আমার বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এসো,
আজই গুরুদেবের কাছে বিধান নিতে যেতে হবে।
সব ঘেঁটে ঘ হয়ে গেল। ওকে থামানো যাবে না বুঝেই রেডি হয়ে নিলাম। রান্নাবাড়ি সব বন্ধ রইল। অফিস ছুট। যাবার সময় ভাবলাম ওকে একটু ভাল করে বুঝিয়ে দেখি যদি পাল্টে যায়। আদর ভালবাসা পেলে মানুষ একবারেই পাল্টে যায়, ও রেডি হয়েই ছিল, বেশ ভালই লাগছিল। আমি ঘরে গিয়েই আচমকা ওকে জড়িয়ে ধরলাম, তারপর অনেক আদর করতে লাগলাম, ও তো ছটফট করে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলে আর আমি ততই রগরগে উষ্ণতার মাত্রা বাড়াতে লাগলাম, ভাবলাম এবার ঝিঙাফুল তার পাপড়ি মেলে দেবে প্রজাপতির কাছে। ও মা! কোথায় কী সুন্দর সেই মুহূর্ত ছেড়ে ও ছিটকে বেরিয়ে গেল, সোজা বাথরুমে ঢুকে জামাকাপড় পরেই বালতি বালতি জল মাথায় ঢালতে লাগল, আর মুহুমুর্হু মন্ত্রপাঠ করতে লাগল, "ওঁ নমঃ পবিত্র অপবিত্রবা…"
আমি চেপে গেলাম। ও বেরিয়েই রেগে গেল,
-কী এখনও
দাঁড়িয়ে আছ যে? বাথরুমে
যাও আর আমার মতো জামাকাপড় পরেই আগে স্নান সেরে আসো, অসভ্য ইতর
কোথাকার!
ঝামেলা
বুঝুন। আবার রেডি হলাম। পেটে ডন দিচ্ছে। বউ মন্ত্রেই রয়েছে। তবুও বেরোতেই হবে। বউ
বেরিয়েছে আমি দরজায় চাবি দিচ্ছি, আবার বিপত্তি শুরু হল।
ঝিঙাফুল
হাউমাউ করে উঠল,
-দরজা খোলো, দরজা খোলো, যাত্রা
নাস্তি। অশুভ দৃশ্যপট!
-সে কী? কী হলো? কেন?
-দেখছ না? কানা নাকি? পথে এক
শালিক!
-তাহলে?
ঝিঙাফুল ঘ্যানঘ্যানানি শুরু করে দিল,
-যাও পার তো
আরো একটাকে খুঁজে আনো।
কী ঝামেলা? ওকে বোঝাবার চেষ্টা করলাম,
-দুজনে
থাকলেই তো সেই 'অপবিত্রবা…'
এ বিবি যে
ভোলার নয়! এ আমি কাকে বিয়ে করেছি? অবুঝে বোঝ নাহি মানে কিন্তু এ যে দেখি বেশি বুঝতারই!
অজপাড়াগাঁ থেকে এনেছি বলেই কী আমার এত খেসারত?
-কেন? আমি তো বাথরুমে?
-সে আবার কী? বিপদ কোথায়? কেন?
আমি অবাক। জিজ্ঞেস করলেম,
বলেই ও এমন আমাকে ধরে হাসল যে আমার কোমরে আলগা হয়ে লেপ্টে থাকা গামছাটা গেল খুলে। উলঙ্গ মহাদেব হয়ে গেলাম।
আর যাই কোথায়? ঝিঙাফুল তো কেঁদেকেটে ভাসিয়ে দিল,
-চুপ করো, স্বামী তো কী হয়েছে? দ্বাদশীতে কার পুজো করতে হয় জানো তুমি? ঠাকুর্মা পয়পয় করে বলেছিল, 'এদিন স্বামীর আশেপাশেও থাকবি নে, এদিনটা নারায়ণের। শিবলিঙ্গ ছুঁবিও নে, দেখবিও নে।
আমি শালা এই নিয়ম আর অনিয়মের বেড়াজালে একেবারে নাজেহাল। কাঁদব না হাসব,
-তুমি একটা বাজে লোক, আজ ব্রতটাই গেল। গুরুদেবের কাছে গিয়ে সব বলে দোষ কাটাতেই হবে, না হলে ঘোর অমঙ্গল, ভয়ানক ক্ষতি হয়ে যাবে যে…
ঝিঙাফুল তাড়াতাড়ি শাড়ি ব্লাউজ পরে নিল,
সব ঘেঁটে ঘ হয়ে গেল। ওকে থামানো যাবে না বুঝেই রেডি হয়ে নিলাম। রান্নাবাড়ি সব বন্ধ রইল। অফিস ছুট। যাবার সময় ভাবলাম ওকে একটু ভাল করে বুঝিয়ে দেখি যদি পাল্টে যায়। আদর ভালবাসা পেলে মানুষ একবারেই পাল্টে যায়, ও রেডি হয়েই ছিল, বেশ ভালই লাগছিল। আমি ঘরে গিয়েই আচমকা ওকে জড়িয়ে ধরলাম, তারপর অনেক আদর করতে লাগলাম, ও তো ছটফট করে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলে আর আমি ততই রগরগে উষ্ণতার মাত্রা বাড়াতে লাগলাম, ভাবলাম এবার ঝিঙাফুল তার পাপড়ি মেলে দেবে প্রজাপতির কাছে। ও মা! কোথায় কী সুন্দর সেই মুহূর্ত ছেড়ে ও ছিটকে বেরিয়ে গেল, সোজা বাথরুমে ঢুকে জামাকাপড় পরেই বালতি বালতি জল মাথায় ঢালতে লাগল, আর মুহুমুর্হু মন্ত্রপাঠ করতে লাগল, "ওঁ নমঃ পবিত্র অপবিত্রবা…"
আমি চেপে গেলাম। ও বেরিয়েই রেগে গেল,
-সে কী? কী হলো? কেন?
-তাহলে?
কী ঝামেলা? ওকে বোঝাবার চেষ্টা করলাম,
অজপাড়াগাঁ থেকে এনেছি বলেই কী আমার এত খেসারত?
সমাপ্ত
অনবদ্য
ReplyDeleteপরাণ মাঝি
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়।
Deleteধন্যবাদ
ReplyDeleteস্বাগত শুভেচ্ছা
Deleteখুব ভাল লিখেছ।অভিনন্দন
ReplyDeleteপ্রাণিতের ধন্যবাদ রইল
Deleteভীষণ হাসলাম,, বেশ প্রাসঙ্গিক লেখা হরহামেশাই
ReplyDeleteভাল থাকুন হেসে
DeleteCongratulations to Secretary with others 👏👏
ReplyDeleteCongratulations to Secretary with others 👏👏
ReplyDeleteখুব ভাল লাগল। হেসে হেসে গড়াগড়ি। শুভেচ্ছা রইল।
ReplyDeleteভাল থাকুন চিরদিন
Delete