ধারাবাহিক উপন্যাস
পারমিতা চ্যাটার্জি
শেষ থেকে শুরু
[পর্ব – ১৩]
শেষ থেকে শুরু
[পর্ব – ১৩]
"রাহুল বেরিয়েই দেখল, একটু দূরে মনকলি দাঁড়িয়ে আছে, সে অবাক হয়ে গেল মনকলিকে এসময়ে এখানে দেখে! তার মানে কী দরজার কাছে দাঁড়িয়ে শুনবার চেষ্টা করছিল কী কথা হচ্ছিল।"
পূর্বানুবৃত্তি মনকলির কথায়
অনেক আশা নিয়ে সুচরিতা বউয়ার কাছে এসেছিল, কিন্তু ওদের সার্বিক আচরণে বুঝতে কিছুই বাকি
রইল না। সে কোনরকমে আধপেটা খেয়ে উঠে গেল। এমনকি বউয়া লাখিয়াকে এগিয়ে দিয়ে আসতে বলাতেও
গ্রাহ্য না করে হনহনিয়ে চলে গেল। বাড়ি ফাঁকা হতেই মনকলি আর বউয়া
পরস্পরের আদরে মগ্ন হলো। তারপর…
রাহুল ঘড়ি দেখল, বেশ দেরি হয়ে গেছে। সুচিকে ডেকে বলল,
-কী করছিস রে? তাড়াতাড়ি আয়
আমার দেরি হয়ে
যাচ্ছে।
হাঁপাতে
হাঁপাতে সুচি
এসে বলল,
-ঠাকুরকে ধূপ
দেখাচ্ছিলাম। এই তুমি কি আমাকে বিয়ের পরও তুই বলে ডাকবে না কি?
-ডাকলেই বা ক্ষতি কী?
রাহুল ঘড়ি দেখল, বেশ দেরি হয়ে গেছে। সুচিকে ডেকে বলল,
রাহুলের টোস্টে
মাখন লাগাতে লাগাতে সুচি বলল,
-লাঞ্চে কী খাবে?
রাহুল বলল,
-নিজে আগে
খাও তো।
বলে নিজেই
ওর টোস্টে মাখন লাগাতে লাগল,
-বেশ মজা।
সুচি হেসে বলল,
-একবার তুমি
মাখন লাগাবে একবার আমি।
-সুচি আমি ভাবছিলাম কী, আমরা যদি শান্তিনিকেতনে সেটল করি যেখানে তুমি-আমি প্রথম দুজনে ভালবাসার স্বাদ অনুভব করছিলাম।
-কী মিথ্যুক রে বাবা! আমি তো সেই ছোট থেকেই তোমার প্রেমে পাগল, প্রকাশ করিনি কারণ আমি জানতাম তুমি মনকলির জন্য পাগল।
-না রে আসলে ওটা ছিল মোহ ভালবাসা নয়।
-আহা রে যার জন্য দেশ ছাড়া হলে এখন বলছ ওটা মোহ?
-হ্যাঁ রে মোহই, দেশ ছাড়া হয়েছিলাম নিজের যোগ্যতা প্রমাণ দেওয়ার জন্য কিন্তু ফিরে এসে
সেই আমার
মায়ের জায়গা কবিগুরুর বিশ্বভারতীকে বেছেই নিলাম। যাক ছাড় না, তুইও পারিস! এখন কত কাজ
বলত? না
এখন বসল যতসব বাজে আলোচনা নিয়ে।
সুচরিতা রাহুলের আর একটা টোস্টে মাখন লাগিয়ে ডিমের খোসা ছাড়াতে লাগল,
-তুই ডিম খাবি না?
-খাব,
আমি তো বাড়িতেই আছি,
তুমি আগে খাও তো,
এবার তুই বললে কিন্তু কথা বলব না।
-আচ্ছা রে বাবা আচ্ছা অভ্যাস হয়ে গেছে আসলে।
-এবার তুমি বলার অভ্যাস করো।
রাহুল কলেজে গিয়েই আগে প্রিন্সিপালের ঘরে ঢুকল,
-আরে এসো এসো, তোমার কথাই ভাবছিলাম, শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে করছ?
-হ্যাঁ স্যার, আমার বাল্যবন্ধু আসলে নানান ঘাতপ্রতিঘাত পার হয়ে এতদিনে
দুজনে বিয়ের
কথা ভেবেছি।
-এতদিন বাধাটা কোথায় ছিল?
-সে অনেক কথা, আপনাকে আর একদিন বলব।
-এখন মনে হচ্ছে প্রেমের সাগরে ভাসছ?
রাহুল হেসে ফেলে বলল,
-আপনি পারেনও।
-কবে দিন ঠিক করছ?
-দিন দশেকের মধ্যেই স্যার।
-বাব্বা এ দেখছি ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে।
-হ্যাঁ এসব কলোনিয়াল কথাগুলো প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে, ছোটবেলা মায়ের মুখে খুব শুনতাম।
-আমাকে কী করতে হবে বলো?
-এখানে একটা ছোটখাটো হল ভাড়া করে রেজিস্ট্রেশন আর ওই মালাবদল করে যে কজনকে
না বললে নয় একটু খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করব। জানাশোনা
কোন ক্যাটারার আছে আপনার?
-হ্যাঁ তা তো আছে
সেসব ব্যবস্থা আমার ওপর ছেড়ে দাও। তবে তুমি এ কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল তোমাকে তো
মোটামুটি সব স্টাফদের বলতে হবে। টিচিং এবং ননটিচিং স্টাফ কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না।
-স্যার একটা কথা ছিল।
-হ্যাঁ বলো।
-দিন দশেক বাদেই যখন বিয়ে তখন একটা দিন ঠিক করতে হবে সেই জন্যেই আমাদের বিহারি পুরুতের ঠিকানাটা খুঁজছিলাম।
-তা মা লক্ষ্মী এসে গেছেন শুনলাম?
রাহুল মাথা
চুলকে বলল,
-হ্যাঁ মানে
আমার ওখানেই আছে তবে আলাদা ঘ-ঘরে স্যা—র।
হো হো করে হেসে উঠলেন প্রিন্সিপাল প্রমোদ চন্দ্র বললেন,
-এত লজ্জা
পেলে চলে? হ্যাঁ
তুমি কী কথা বলবে বলছিলে?
-মানে আমি যদি ট্রান্সফার নিয়ে আবার বিশ্ব—
-না না এই আব্দারটা মানতে পারব না। বিশ্বভারতীতে তোমার এখন যাওয়া চলবে না। তার চেয়ে ম্যাডামকে এখানে নিয়ে আসব।
-না তার জন্য নয় এখানে অন্য একটা প্রবলেম হচ্ছে।
-কীসের প্রবলেম?
-এখানে বলাটা সেফ নয়, আজ রাতে আমার বাড়িতে ডিনারে আসুন
ওখানে আলোচনা করা যাবে।
-এখানে সেফ নয় মানে নতুন যে মেয়েটি জয়েন করল, কী যেন নাম?
রাহুল বলে
ফেলল,
-মনকলি।
-ও হ্যাঁ মিসেস মনকলি বোস, তার সাথে কী প্রবলেম? মনে হচ্ছে যেন ত্রিকোণ প্রেমের একটা ছবি ভেসে উঠছে—?
-না স্যার প্রেম নয় ছিল আমার এক চরম ব্যর্থতা চরম অপমান, যে এসেছে তার কাছ থেকে। বাড়িতে আসুন বাকিটা বলব।
-তা মা জননী রাঁধেন কেমন?
-না স্যার,
যে রাঁধে সে চুল বাঁধে না ও ঠিক সে-ধরনের নয়। সব কাজেই
দক্ষ।
-ও কে, তাহলে সেই কথাই থাকল সন্ধ্যা আটটা নাগাদ পৌঁছে যাব।
রাহুল বেরিয়েই দেখল, একটু দূরে মনকলি দাঁড়িয়ে আছে, সে অবাক হয়ে গেল মনকলিকে এসময়ে এখানে দেখে! তার মানে কী দরজার কাছে দাঁড়িয়ে শুনবার চেষ্টা করছিল কী কথা হচ্ছিল। রাহুল একদম অফিসিয়াল টোনে মনকলিকে বলল,
-আপনি এখানে কী করছেন?
আপনার ক্লাস নেই?
না থাকলে কমনরুমে গিয়ে বসুন।
রাহুল পেছন ফিরে যেতে যাবে আবার ডাক শুনল,
-বউয়াদা একটা
কথা ছিল শুনবে?
ভীষণ বিরক্ত হয়ে পিছন ফিরে বলল,
-শুনুন এটা
কলেজ এখানে কিছু ডিসিপ্লিন মেনটেন করে চলতে হয়, আশা করি
আপনাকে নিয়মটা শিখিয়ে দিতে হবে না, আর আমাকে স্যার এবং আপনি বলে সম্মোধন
করবেন আশা করি এরপর আর ভুল হবে না।
রাহুল গটগট করে নিজের রুমে চলে গেল, ভাবতে লাগল এখানে এইচওডিদের জন্য আর একটা আলাদা রুমের ব্যবস্থা করতে হবে তা না হলে সুচিকে এই মেয়েটা এখানে থাকতে দেবে না। আজ স্যার যখন রাতে ডিনারে আসবেন তখন এ ব্যাপারে কথা বলে নিতে হবে।
সুচি হেসে বলল,
-সুচি আমি ভাবছিলাম কী, আমরা যদি শান্তিনিকেতনে সেটল করি যেখানে তুমি-আমি প্রথম দুজনে ভালবাসার স্বাদ অনুভব করছিলাম।
-কী মিথ্যুক রে বাবা! আমি তো সেই ছোট থেকেই তোমার প্রেমে পাগল, প্রকাশ করিনি কারণ আমি জানতাম তুমি মনকলির জন্য পাগল।
-না রে আসলে ওটা ছিল মোহ ভালবাসা নয়।
-আহা রে যার জন্য দেশ ছাড়া হলে এখন বলছ ওটা মোহ?
সুচরিতা রাহুলের আর একটা টোস্টে মাখন লাগিয়ে ডিমের খোসা ছাড়াতে লাগল,
-আচ্ছা রে বাবা আচ্ছা অভ্যাস হয়ে গেছে আসলে।
-এবার তুমি বলার অভ্যাস করো।
রাহুল কলেজে গিয়েই আগে প্রিন্সিপালের ঘরে ঢুকল,
-এতদিন বাধাটা কোথায় ছিল?
-এখন মনে হচ্ছে প্রেমের সাগরে ভাসছ?
-কবে দিন ঠিক করছ?
-বাব্বা এ দেখছি ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে।
-হ্যাঁ এসব কলোনিয়াল কথাগুলো প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে, ছোটবেলা মায়ের মুখে খুব শুনতাম।
-আমাকে কী করতে হবে বলো?
-স্যার একটা কথা ছিল।
-দিন দশেক বাদেই যখন বিয়ে তখন একটা দিন ঠিক করতে হবে সেই জন্যেই আমাদের বিহারি পুরুতের ঠিকানাটা খুঁজছিলাম।
-তা মা লক্ষ্মী এসে গেছেন শুনলাম?
হো হো করে হেসে উঠলেন প্রিন্সিপাল প্রমোদ চন্দ্র বললেন,
-না না এই আব্দারটা মানতে পারব না। বিশ্বভারতীতে তোমার এখন যাওয়া চলবে না। তার চেয়ে ম্যাডামকে এখানে নিয়ে আসব।
-না তার জন্য নয় এখানে অন্য একটা প্রবলেম হচ্ছে।
-কীসের প্রবলেম?
-এখানে সেফ নয় মানে নতুন যে মেয়েটি জয়েন করল, কী যেন নাম?
-ও হ্যাঁ মিসেস মনকলি বোস, তার সাথে কী প্রবলেম? মনে হচ্ছে যেন ত্রিকোণ প্রেমের একটা ছবি ভেসে উঠছে—?
-না স্যার প্রেম নয় ছিল আমার এক চরম ব্যর্থতা চরম অপমান, যে এসেছে তার কাছ থেকে। বাড়িতে আসুন বাকিটা বলব।
-তা মা জননী রাঁধেন কেমন?
-ও কে, তাহলে সেই কথাই থাকল সন্ধ্যা আটটা নাগাদ পৌঁছে যাব।
রাহুল বেরিয়েই দেখল, একটু দূরে মনকলি দাঁড়িয়ে আছে, সে অবাক হয়ে গেল মনকলিকে এসময়ে এখানে দেখে! তার মানে কী দরজার কাছে দাঁড়িয়ে শুনবার চেষ্টা করছিল কী কথা হচ্ছিল। রাহুল একদম অফিসিয়াল টোনে মনকলিকে বলল,
রাহুল পেছন ফিরে যেতে যাবে আবার ডাক শুনল,
রাহুল গটগট করে নিজের রুমে চলে গেল, ভাবতে লাগল এখানে এইচওডিদের জন্য আর একটা আলাদা রুমের ব্যবস্থা করতে হবে তা না হলে সুচিকে এই মেয়েটা এখানে থাকতে দেবে না। আজ স্যার যখন রাতে ডিনারে আসবেন তখন এ ব্যাপারে কথা বলে নিতে হবে।
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment