প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

প্রথম ভালবাসা | অমল চ্যাটার্জী

বাতায়ন/ মাসিক / ছোটগল্প /২য় বর্ষ/২ ৮ তম সংখ্যা/ ২রা ফাল্গুন,   ১৪৩১ অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | ছোটগল্প অমল চ্যাটার্জী   প্রথম ভালবাসা ...

Tuesday, January 21, 2025

কলঙ্কিনী [৩য় পর্ব] | সঙ্ঘমিত্রা দাস

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক গল্প/২য় বর্ষ/২তম সংখ্যা/২৫শে মাঘ, ১৪৩১
ধারাবাহিক গল্প
সঙ্ঘমিত্রা দাস

কলঙ্কিনী

[৩য় পর্ব]

"তারপর ডুব দিত একে অপরের শরীরের অতলে। কামনার আগুনে পুড়ত। ছোট ছোট শরীরের চিহ্নগুলো খুঁজে নেবার মধ্যে দিয়ে একে অপরকে জানার উদ্দীপনা। নারী শরীরের আড়ালে যে এত রহস্য লুকিয়ে আছে সুনয়নাকে কাছে না পেলে বিলাস জানতেই পারত না। সুনয়নাও শারীরিক মিলনে যে সুখ তা অনুভব করল তো বিলাসের কাছেই।"


পূর্বানুবৃত্তি বাপের বাড়িতে বলেও কোন লাভ হয়নি। মা মেয়েকে বুঝিয়েছে, এখন ওটাই ওর আসল বাড়ি, এ বাড়িতে সুনয়না এখন অতিথি। ও মাকে আর বলতে পারেনি ওর কষ্টের কথা। রাতে বিছানায় সৌমেনের বলপ্রয়োগ ভালবাসাকে ধীরে ধীরে সহ্য করার চেষ্টা করতে থাকে। এর মধ্যে গোপীকাকার ফোন। তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এখন বাড়িতে সম্পূর্ণ বেডরেষ্ট। কাল থেকে তার ছেলে বিলাস দুধ পৌঁছে দেবে ওদের বাড়ি। তারপর…
 
সুনয়নাও রোজ যেন অপেক্ষা করতে থাকে ওর জন্যে। সন্ধ্যাবেলায় বেশ সুন্দর করে সেজে থাকে। নানা কথায়, কাজের অছিলায় ওকে দাঁড় করিয়ে রাখে। জিনি নেবার ছুতোয় স্পর্শ পাবার চেষ্টা করে। বিলাস সবটাই বুঝতে পারে। মাঝে মাঝে একটু এগিয়ে আবার পিছিয়ে নেয় নিজেকে। কখনও চড়া পারফিউমের গন্ধ নিয়ে খুব কাছে এগিয়ে এসে নিজেই বোতল থেকে দুধ ঢেলে দেয় সুনয়নার হাতে ধরে থাকা সসপ্যানে, সুনয়নার শরীরে ঝড় বয়ে যায়। একটা দুষ্টু হাসি ঠোঁটের কোণায় তখন বিলাসের। দুজনেই একে অপরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে
 
সেদিন শাশুড়ি-মায়ের জ্বর ছিল। বিলাস এলে ওকেই ডাক্তার ডেকে আনার জন্য বলল সুনয়না। ডাক্তার দেখানো, ওষুধ কেনা সব সারতে সন্ধে‌ পেরিয়ে রাত হয়ে গেল। শাশুড়ি-মা ঘুমিয়ে পড়েছেন ততক্ষণে। বিলাস চলে যাচ্ছিল, সুনয়নার আবদারে চা খেতে বসল একটু।  চা নিয়ে ওরা বসল সোফায় পাশাপাশি। এক কথা, দু কথায় ওদের মধ্যে দূরত্ব কমতে থাকে। বিলাস খুব গা ঘেঁষে বসেছে। ওর পারফিউমের গন্ধে ঘরটা ভরে আছে। সুনয়না টের পায় সোফার পিছনে হাত ঘুরিয়ে ওর ব্লাউজের খোলা পিঠে পৌঁছেছে বিলাসের হাত। আঙুলগুলো খেলা করছে পিঠের ওপর। সুনয়না লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায়, একটু সরে যাবার চেষ্টা করার আগেই বিলাসের অন্য হাত শাড়ির ফাঁক গলে ওর কোমরে। দুজনেই সব ভুলে মেতে ওঠে এক উদ্দাম শরীরী খেলায়। এরপর আর পিছু হটার অবকাশ থাকে না। এক বেকার যুবকের সফল না হওয়া স্বপ্ন, আর একাকিত্বে জর্জরিত গৃহবধূর না পাওয়া শারীরিক চাহিদা ওদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে, এই খেলাই ছিল ওদের সব না পাওয়ার যন্ত্রণা ভুলে আনন্দ উপভোগের সহজ পথ। যা কেউই অগ্রাহ্য করতে পারেনি। শুরু হলো প্রতিদিনের রাসলীলা। একে অপরকে তৃপ্ত করার প্রবল প্রয়াস। শাশুড়ির খাবারের সাথে দুপুরে, রাতে মিশতে থাকল কড়া ঘুমের ওষুধ। আর তারপর ডুব দিত একে অপরের শরীরের অতলে। কামনার আগুনে পুড়ত। ছোট ছোট শরীরের চিহ্নগুলো খুঁজে নেবার মধ্যে দিয়ে একে অপরকে জানার উদ্দীপনা। নারী শরীরের আড়ালে যে এত রহস্য লুকিয়ে আছে সুনয়নাকে কাছে না পেলে বিলাস জানতেই পারত না। সুনয়নাও শারীরিক মিলনে যে সুখ তা অনুভব করল তো বিলাসের কাছেই। এভাবেই চলতে থাকল দিনের পর দিন। বিলাস যে কখনো-সখনো নিজেকে এই অবৈধ সম্পর্ক থেকে সরিয়ে নেবার চেষ্টা করেনি তা নয় কিন্তু সুনয়নার ওই খোলা পিঠ, পাতলা সিফন নাইটিতে শরীরী আবেদন অস্বীকার করার ক্ষমতা ওর ছিল না। কে কাকে কতটা ভালবাসে এই প্রশ্ন ছিল এখানে অবান্তর, মেতেছিল শুধু এক অবৈধ নেশায়। যেখানে মনের কোন জায়গা নেই। সব ভুলে শুধু উজার করা ফুর্তি, দুজনের সহমতে
 
কানাঘুষো শুরু হয়েছিল পাড়ায়। অনেকের নজরেই পড়েছিল ব্যাপারটা। কেউ হয়তো খবরটা সৌমেনের কানে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করেছিল
 
দুপুরের খাওয়াদাওয়া শেষে শাশুড়ি-মাকে শুইয়ে দিয়ে এসে সুনয়না তখন বেডরুমের দিকে। সামনে টিভিতে উচ্চস্বরে হিন্দি সিনেমার গান চলছে, মোহময়ী নায়িকার শরীর দুলছে তার সাথে। খাটে আধশোয়া বিলাস রিমোটে আঙুল চালাতে চালাতে সুনয়নার অপেক্ষায়। বাইরের দরজায় কলিং বেলের আওয়াজ। সুনয়না বিরক্ত হয়ে দরজা খোলে। সৌমেন দাঁড়িয়ে দরজায়"কোন খবর না দিয়ে হঠাৎ এমন করে?" মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় ওরসৌমেন কোন জবাব দেয় না। গটগট করে ঘরের ভেতর ঢুকে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় সুনয়না বুঝতে পারে না কী করবে।
 
সৌমেন সোজা শোবার ঘরে ঢোকে। বিলাস কিছু বুঝে ওঠার আগেই কলার টেনে নীচে নামিয়েই মুখে সজোরে এক ঘুসি। বিলাস হাত ছাড়িয়ে পালাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ঘরের মধ্যে শুরু হয়ে যায় মারামারি, চিৎকার। ঘরের আবহাওয়া গরম হতে থাকে। সুনয়না কাঁদতে শুরু করে। ভয় পেয়ে যায় তার ধরা পড়ে যাওয়াতে। কী হবে এবার? ওদের চিৎকার, মারামারির শব্দে সৌমেনের মায়ের ঘুম ভেঙে যায়। ছেলের গলার আওয়াজ পেয়ে খোকা খোকা করে হুইলচেয়ার ঠেলে সুনয়নার ঘরের দিকে আসার চেষ্টা করেন। তিনিও আন্দাজ করে ফেলেন ভয়ংকর কিছু ঘটতে চলেছে। আশেপাশের বাড়ির কানগুলোও সজাগ। কেউ কেউ রাস্তায় বেরিয়ে ওদের বাড়ির দিকে ইতিউতি উঁকি দিতে থাকে।
 
সৌমেন হঠাৎ পকেট থেকে পিস্তল বার করে তাক করে বিলাসের দিকে। সুনয়না ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সৌমেনকে, "তুমি আমাকে যা ইচ্ছে শাস্তি দিও, এমন মারাত্মক কিছু করো না। সব শেষ হয়ে যাবে" সৌমেনের মাথায় তখন আগুন। কোন কথাই কানে ঢুকছে না। বিলাসও নিজেকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে কেড়ে নিতে চায় বন্দুকটা। হাতাহাতি হয় দুজনের। সুনয়না প্রাণপণ ওদের ঠেকানোর চেষ্টা করে। হঠাৎ তীব্র একটা গুলির আওয়াজ। বাইরের লোকেরা দেখল পিছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে পাঁচিল টপকে একজন ছুটে পালাচ্ছে। ঘরের দরজার মুখে এসে সৌমেনের মা চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন। ঘরের মেঝে তখন রক্তে ভেসে যাচ্ছে। খাটের পাশে পড়ে আছে সৌমেনের নিথর দেহ। এক কোণে মাথায় হাত দিয়ে কেমন ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে আছে সুনয়না সৌমেনের দেহটার দিকে
 
বাইরে থেকে মানুষজন শুনতে পাচ্ছে বুড়ি শাশুড়ি চিৎকার করে শাপশাপান্ত করছেন সুনয়নাকে "ওরে সর্বনাশী, বরটাকে তো খেয়ে বসে আছিস বেশ পা ছড়িয়ে। আর কেন? বন্দুকটা তুলে আর একটি গুলি আমার বুকে মার। তবে তো তোর শান্তি হবেকে কোথায় আছ আমার ছেলেটাকে বাঁচাও। এখনো হয়তো ওর প্রাণটা আছে"
 
বুকের বাঁ দিকের পাঁজর ভেদ করে গুলি বেরিয়ে গেছে। পাড়াপ্রতিবেশী ততক্ষণে পুলিশকে খবর দিয়েছে। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। তড়িঘড়ি অ্যারেস্ট করে সুনয়নাকে। ক্রাইমের জায়গাটা ঘিরে দেয়। উৎসাহী লোকজনকে বাইরে বের করে দিয়ে বডি মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ। লোকেরা মহা উৎসাহে বয়ান দিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বয়স্কা মাকে অন্য ঘরে সরিয়ে নিয়ে যায় একজন মহিলা কনেস্টবল। তিনি মূল সাক্ষী। তার থেকে সব ঘটনা জেনে কেস ডায়েরি সাজাতে হবে পুলিশকে। এই মুহূর্তে উনি কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। পালিয়ে যাওয়া যুবক, মানে বিলাসের নাম, নাড়ি নক্ষত্র জানার চেষ্টা চলতে থাকে চাক্ষুষ দেখা জনসাধারণের মধ্যে থেকে। ওকে ধরতে পারলেই জলের মতো সহজ হয়ে যাবে সব। পুলিশকে আর অহেতুক দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না কেসটা নিয়ে। পাড়ায় প্রচুর সাক্ষী। সোজাসাপটা পরকীয়া আর তার জেরে খুনের মামলা।
 
পুলিশের কালো ভ্যান পাড়ার মোড়টা ঘুরে বড় রাস্তায় চোখের আড়ালে চলে গেল। পুলিশও কয়েকজন সাক্ষীর তাৎক্ষণিক বয়ান রেকর্ড করে জিপ স্ট্রার্ট দিল। পিছনে পড়ে রইল সুনয়নার জীবনের একটা কালিমালিপ্ত অধ্যায়। গুজগুজ ফিফিগুলো ধীরে ধীরে আলগা হয়ে আবার যে যার পথ ধরল। আর পরবর্তী অধ্যায়ের কাহিনি? সে তো ভবিষ্য বলবে।
 

সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)