প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

প্রথম ভালবাসা | অমল চ্যাটার্জী

বাতায়ন/ মাসিক / ছোটগল্প /২য় বর্ষ/২ ৮ তম সংখ্যা/ ২রা ফাল্গুন,   ১৪৩১ অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | ছোটগল্প অমল চ্যাটার্জী   প্রথম ভালবাসা ...

Wednesday, February 12, 2025

শেষ থেকে শুরু [১৭তম পর্ব] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক উপন্যাস/২য় বর্ষ/৩১তম সংখ্যা/২৩শে ফাল্গুন, ১৪৩১
ধারাবাহিক উপন্যাস
 
পারমিতা চ্যাটার্জি
 
শেষ থেকে শুরু
[পর্ব – ১৭]

"ও বলেছিল আমার নাকি একটা সুন্দর সহজ সরল মন আছে তুমি সেই মনটার সন্ধান পেয়ে গেছসেদিনও আমি ওর কথা বিশ্বাস করিনিএখন দেখছি ও ঠিকই বলেছিল। তারপর সজল বিদেশে পাড়ি দেয়ওর খোঁজ করতে হবে।"


পূর্বানুবৃত্তি প্রিন্সিপাল স্যার পুরোহিত, ক্যাটারার, অনুষ্ঠান-বাড়ির সব ব্যবস্থা করে সন্ধ্যায় রাহুলের বাড়িতে এলেন। সুচরিতাকে দেখে, তার হাতের রান্না খেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন। মনকলিকে ট্রান্সফার করার ব্যাপারেও দেখবেন কথা দিলেন। তারপর…
 

পরের দিন রাহুল আর সুচরিতা মোটামুটি একটু কেনাকেটা করল। দুজনে দুজনকে কিনে দিল। সুচরিতার প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও রাহুল ওকে চারটি শাড়ি  কিনে দিল। দুটো জমজমাট কাঁথা-কাজের শাড়ি তসরের ওপর, আর একটা বাটিক কাঁথা মেশানো তসরের ওপর খুবই জমকালো অথচ রুচিসম্মত শাড়ি, আর একটা শুধু বাটিক সিল্কের শাড়ি দিল, হালকা তাঁতের ওপর বুটিক কাজের নানাধরণের শাড়ি সুতি তাঁত হ্যান্ডলুম শাড়ির ওপর বেশ কয়েকটা শাড়ি নেওয়া হল।

 
সুচরিতাও  রাহুলের জন্য তসরের পাঞ্জাবির সাথে ধুতির সেট, সুতির পাঞ্জাবি আর পাজামা একটা ভাল দেখে শার্ট আর প্যান্ট নিল। সুচরিতা বলল,
-আমাকে একদিনের জন্য হলেও কলকাতা যেতে হবে
রাহুল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
-কেন?
-কেন কী? আমার জন্য মা কত যত্ন করে গয়না গড়িয়ে রেখে গেছেন সেগুলো তো আনতে হবে
-হ্যাঁ আমার মা-ও আমার বউয়ের জন্য গহনা রেখে গেছেন, বড়বউদির কাছে আছে সেগুলো, তাও নিতে হবে সেই সাথে ওদের জানাতেও হবে। এমনিতেই যোগাযোগ কম রাখা হয় এরপর বিয়েটাও যদি না জানাই তবে সেটা খুব খারাপ হবে
-না না জানাবে না কেন?
-নিজের লোকেরা না এলে কি হয়? ভাইবোনের সবচেয়ে ছোট বলে সবাই আমাকে ভালবাসে, তাই তাদের অমর্যাদা করতে চাই না। কিন্তু কথাটা হচ্ছে এত লোক এসে গেলে রাখব কোথায় তাদের?
-গেস্ট হাউস একটা ভাড়া করতে হবে
রাহুল সুচরিতার মাথায় একটা চাঁটি মেরে বলল,
-বোকা হলে কী হবে বুদ্ধি আছে।
সুচরিতা বালিশ দিয়ে রাহুলকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল,
-কী আমি বোকা!
-না না তুই বোকা কেন হবি? বোকা আমিই, চরম বোকা, আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও আমি বুঝতে চাইলাম না।
-তুমি কী বলছ বল তো? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না
-আমার বোকামির জন্যে তো আমাদের জীবন থেকে পাঁচটা বছর নষ্ট হয়ে গেল জানিস সজলকে তোর মনে আছে?
-হ্যাঁ সজলদাকে তো মনে আছে, হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
-তুমি কি জানো! সজল তোমাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসত, ওই  তো আমাকে বলেছিল সুচরিতা তোকে ভালবাসে ওর জীবনে আমার কোন জায়গা নেই, আমি ওকে হেসে বলেছিলাম যাহ্‌ আমি তোর মতন সুন্দরও নই ব্রিলিয়ান্টও নই, আমাকে কী করতে ভালবাসতে যাবে? ও বলেছিল আমার নাকি একটা সুন্দর সহজ সরল মন আছে তুমি সেই মনটার সন্ধান পেয়ে গেছ, সেদিনও আমি ওর কথা বিশ্বাস করিনি, এখন দেখছি ও ঠিকই বলেছিল। তারপর সজল বিদেশে পাড়ি দেয়, ওর খোঁজ করতে হবে
-কেন?
-কেন কী? এত বন্ধু ছিল আমাদের, একবার জানাব না? তুমি কি জানতে সজল তোমাকে ভালবাসে?
-সে কথা জেনে তোমার লাভ?
-কার কীসে লাভ হয়, কীসে লোকসান হয় তা কী বলা যায়?
-বাবা একেবারে দার্শনিকের মতন কথা বলছ যে
-বলো-না জানতে?
-হ্যাঁ জানতাম
-কী করে জানলে?
-আমাকে বলতে এসেছিল
-তুমি রাজি হওনি তাই তো?
-হ্যাঁ যদিও জানি তোমার মন জুড়ে তখন মনকলি, কিন্তু আমার ভালবাসা একপেশে ছিল, ঠিক করেছিলাম, কোনদিন তোমাকে জানতে দেব না, তোমাদের বিয়ে পর্যন্ত অপেক্ষা করব তারপর নিজের মতন একা থেকে যাব, একটাই তো জীবন কেটে যাবে ঠিক। সজলদা যখন আমাকে বলতে এসেছিল, আমি বলেছিলাম তোমাকে হ্যাঁ বললে তোমায় ঠকানো হবে, তোমায় ভালবাসতে না পারলেও আমি রেসপেক্ট করি তাই—না না ঠিক আছে, ভাল থাকিস রে খুব ভাল থাকিস বলে আস্তে আস্তে চলে গেল, তারপরই শুনলাম সজলদা বিদেশ পাড়ি দিয়েছে।
-হ্যাঁ তুমি কত সুন্দর করে সভ্যভাবে ওকে না বলেছিলে আর মনকলি কী বিশ্রীভাবে অপমান করেছিল, ওর মধ্যে দাম্ভিকতা প্রচণ্ড। ওর ওই দাম্ভিকতাই ওর পতনের কারণ। সেদিনের পর থেকে মনটা আমার ঘৃণায় ভরে গিয়েছিল, মনে হত এ কাকে আমি ভালবাসতে গিয়েছিলাম! তারপর  বিদেশ চলে যাই, প্রাণপাত করে পড়াশোনা করে এ জায়গায় এসেছি, বিশ্বভারতীতে তোমাকে দেখে আনন্দে মন ভরে গিয়েছিল, কিন্তু বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না, হতেও তো পারে ততদিনে তুমি অন্য কাউকে কথা দিয়েছ
-এই চিন্তা তোমার, আমি অন্য কাউকে ভালবাসব?
-বাসবে বলিনি, বলেছি হতেও তো পারে
-নাও ওঠো এবার, রান্নাঘরে যাই দেখি লাখিয়া আবার কী করছে?
-কী আবার করছে, রান্না করছে, না তুমি যাবে না এখন, রাহুল সুচরিতাকে বুকের ওপর টেনে নিয়ে এল,
সব আদর এখন করে ফেললে, ফুলশয্যার রাতে কী করবে?
-আদর করব, সারারাত প্রাণভরে আদর করব আমার ভালবাসাকে।
 
মনকলি পাগলের মতন খুঁজছে একটা ফোন নাম্বার। হাইল্যান্ডে যখন ছিল তখন দেখা হয়েছিল তো, ফোন নাম্বার দেওয়া-নেওয়াও হয়েছিল, কোথায় গেল সেই ফোন নাম্বার? এখন তাকে খুঁজে পেতেই হবে সেই নাম্বার। অবশেষে পেলও তখন ওর স্বামীর সাথে হাইল্যান্ডে ছিল। ইউনিভার্সিটি অফ্ হাইল্যান্ডসের রিসার্চ ইন্সটিটিউটে দেখা হয়েছিল একটা সেমিনারে। মনকলি নিজেকে খুবই অ্যাট্রাকটিভ ভাবত, যতটা সে নয়। হাইল্যান্ডস রিসার্চ ইন্সটিটিউটে মনকলি সফল হতে পারেনি। তার দুবছর আগে সজলদা ওর স্বামী খুবই ভালভাবে সফল হয়। মনকলির এই অসফলতা স্বামীর কাছে খুব ছোট করে দেয়। স্বামী অসন্তোষ প্রকাশ করে ওকে বলেছিল, ‘দিনরাত রূপচর্চা আর সজলদা সজলদা না করে নিয়ম করে ইন্সটিটিউটে গিয়ে ঠিকমতন প্রজেক্টগুলো করতে পারলে আজকের দিনটা দেখতে হত না। মনকলি অনায়াসে উত্তর দিয়েছিল, এবারে হয়নি তো কী হয়েছে পরেরবার হবে। স্বামী রেগে গিয়ে বলেছিল, ‘তোমার কোনদিনই হবে না, তোমার বাবা প্রচুর টাকা দিয়ে মাস্টার রেখে পড়িয়ে তোমাকে এই অবধি নিয়ে এসেছেন। টায় টায় তো এমএতে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলে, তাই নিয়ে গর্বের শেষ নেই।’ এত কড়া কথা শোনা ওর অভ্যাস ছিল না, ওর চোখদুটো জলে ভরে গেল অপমানেওর স্বামী প্রবীরও ভাবল, এতটা বলা ঠিক হলো না বেচারাকে, কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে বলতে গিয়েছিল সরি, মনকলি সজোরে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েছিল। সেই থেকে ওদের মনমালিন্যর সূত্রপাত। মনকলি ভালবাসতে জানত না। ও মনে করত ওর রূপের জন্য সবাই ওর পায়ে পড়ে থাকবে।
 
মনকলির অসুখ ধরা পড়ার পর ওর স্বামী প্রাণপণ চিকিৎসা করিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ ও জেদ করে পুরুলিয়ায় চলে আসে। মনকলি সজলকে ফোন করে রাহুল আর সুচরিতার বিয়ের কথা বলেছিল, সজল উত্তর দিল,
-আমি তো এইমাত্র রাহুলের ফোন পেলাম এই বিয়ের কথা ও বলল আমাকে, তুই ওখানে আছিস তাও জানাল
-তুমি কি আসছ এখানে?
-হ্যাঁ আসছি তো। এতদিনে একটা পবিত্র নির্মল ভালবাসার পরিপূর্ণতা পেতে যাচ্ছে আর আমি আসব না তা কি হয়? তোর বরও আসছে, আমার কাছে শুনল তুই ওখানে আছিস তাই তোকে আনতে যাচ্ছে।
-আমি কিছুতেই যাব না ওর সাথে, আমি ডিভোর্স দেব ওকে
-তুই সেই একরোখা মেজাজই থেকে গেলি, একটুও বদলালি না।
-ও আমাকে ভালবাসে না সজলদা বিশ্বাস করো।
বলে কান্নায় ভেঙে পড়ল মনকলি,
-ও শুধু ওর কর্তব্য করতে আসছে, আমি ওর এই নীরস কর্তব্য আর দায়িত্ববোধে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম, তাই পুরুলিয়ায় চলে এসেছি, ছমাস পর বম্বে যাব ট্রিটমেন্টের জন্য।
-তা তুই দেখছি খুব স্বাবলম্বী হয়ে গেছিস?
-হয়েছি তো, রবীন্দ্রনাথের গানটা কি ভুলে গেলে? ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ক্রমশ
 

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)