প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

প্রথম ভালবাসা | অমল চ্যাটার্জী

বাতায়ন/ মাসিক / ছোটগল্প /২য় বর্ষ/২ ৮ তম সংখ্যা/ ২রা ফাল্গুন,   ১৪৩১ অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | ছোটগল্প অমল চ্যাটার্জী   প্রথম ভালবাসা ...

Wednesday, February 12, 2025

পিছুটান রয়ে যায় [পর্ব – ৩] | ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক গল্প/২য় বর্ষ/৩০তম সংখ্যা/১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১
ধারাবাহিক গল্প
 
ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য
 
পিছুটান রয়ে যায়
[পর্ব৩]

"একমাত্র মেয়ের কথার রেশ ধরে বিয়েসংসারসুখদুঃখআনন্দবদনামযন্ত্রণা আরো কত হাজারো বর্ণময় অনুভূতি দোলা দিয়ে যায় মনে। তখন আবেগের চোরা স্রোত পিছনে টেনে নিয়ে যায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয় কণিকা।"

 
পূর্বানুবৃত্তি অশান্তি সহ্য করতে না পেরে বাপের বাড়ি, দাদার সংসারে আশ্রয় নিয়েছে কণিকা। দাদার নিজেরই অভাবের কারণে এক দিদিমণির বাড়িতে কাজে লেগেছে। তারপর…
 
সে দিনের সন্ধ্যার সেই ঘটনার পর থেকে কতবারই তো দাদাবাবু এলো ফ্ল্যাটে। মাস্টারমশাইও পড়াতে আসে। দিদিমণি সেই একই স্কুলে রোজ যায়। সব কিছুই যেন স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে। তাহলে দুজনের মনের তাপ-উত্তাপ, ক্ষোভ-বিক্ষোভের আগুন কি মুদে এলো? ভুল ভাঙল পরে। বেশ কিছুদিন পর।
 
সেদিন দিদিমণি আর দাদাবাবুর বিবাহবার্ষিকী। দুজনেরই চেনাপরিচিত মানুষজন এসেছে। অতিথিদের আপ্যায়নের ত্রুটি ছিল না দুজনের তরফে। প্রিয়জনদের পাশে নিয়ে এমন বিশেষ দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চেষ্টার ত্রুটি ছিল না কারোই। দুজনই দুজনকে যথাযথভাবেই হাজির করেছিল সবার সামনে। দূর থেকে নজর রেখেছিল কণিকা। স্বাভাবিকতার মাঝে কৃত্রিমতার প্রলেপ সবার নজর এড়িয়ে গেলেও কণিকা চিনতে পেরেছিল ছোট ছোট মুহূর্তগুলিকে
 
বিকালের মধ্যে ফ্ল্যাট ফাঁকা। ফিরে গেছে অতিথি-অভ্যাগতরা। সন্ধ্যাবেলায় ব্যাগ গুছিয়ে দাদাবাবুও তৈরি। অফিসের জরুরি কাজ, তাই আজই চলে যেতে হবে
-আজকের দিনটাতে এখানে থাকবে না। গত বছর তো ছিলে। কত হই-হুল্লোড়...।
চোখের জল ফেলে দিদিমণি
-গত বছরটা এই বছরের থেকে আলাদা ছিল। তাছাড়া সবার সামনে তোমাকে ছোট করেছি কি? সে তো করিনি। সাজানো অনুষ্ঠান শেষ, আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে বলেই মনে হয়। এইবার আমাকে যেতে দাও।
দাদাবাবুর গলার সুর গম্ভীর
-তুমি বলছ সাজানো অনুষ্ঠান?
দুই চোখ জলে ভরে ওঠে দিদিমণি
-অবশ্যই। জিজ্ঞাসা করো নিজেকে। লোক দেখাতে এইসব আয়োজন, প্রাণ নেই এখানে...।
 
কত সহজভাবে কথাগুলো বলে চলে গেল দাদাবাবু। অবাক হয়ে ওঠে কণিকা। বুক কাঁপানো একটা মুহূর্তকে কী সাবলীলভাবে উপস্থাপন করল দাদাবাবু! রাত হয়েছে। একটু আগেই মেয়েটা ফোন করেছিল কণিকাকেইদানীং মেয়েটা অন্য কথা বলে।
-বাবা রোজ বলে ফিরে আয়। মাকে বলো...।
আজও সেই কথাই বলছিল মেয়েটা। তবে কি বদলে গেল যদু? বিশ্বাস করতে মন মানে না কণিকার। হয়তো মেয়েকে কাছে পেতেই এমন কথা বলে যদু, সবাই নিজের সন্তানকে কাছে পেতে চায়। আবার বাবাকে কাছে পেতে চেয়ে মেয়েটাই হয়তো এমন কথা বলে, অস্বাভাবিক তো নয়
 
নিজের মেয়েটার কথা ভেবে খারাপ লাগে কণিকার। বাবা-মা একসঙ্গে থাকলে সে পরিবেশ মেয়ের কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে। আবার কণিকা আর যদুর দুই পৃথক জগৎ যন্ত্রণা দেয় মেয়েটাকে। সে-কথা বোঝে কণিকা। তারপরে কল্পনাতেও মন সায় দেয় না চার দেওয়ালের ঘেরাটোপে যদুর পাশে নিজেকে সাজিয়ে রাখতে। এ যে কী এক পরিস্থিতি! সত্যি সন্তানই বোধহয় এই সংসারের একমাত্র পিছুটান, যাকে কোনভাবেই ভুলে থাকা চলে না। সারাদিন নানা কাজের মধ্যে থেকে যদুকে ভুলেই থাকে কণিকা। রাতের বেলায় মেয়েটা ফোন করলেই সদ্য অতীত হওয়া দিনগুলো যেন হুড়মুড়িয়ে হাজির হয় মনে। একমাত্র মেয়ের কথার রেশ ধরে বিয়ে, সংসার, সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বদনাম, যন্ত্রণা আরো কত হাজারো বর্ণময় অনুভূতি দোলা দিয়ে যায় মনে। তখন আবেগের চোরা স্রোত পিছনে টেনে নিয়ে যায়। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয় কণিকা
 
স্বামীর কথা ভাবতে মন চায় না আর। যা পুড়ে গেছে তা নিয়ে বৃথা আপশোশ কেন? সুখের চেয়ে শান্তি ভাল। এখানে কীসের শান্তি পেয়েছে কণিকা? অনিবার্য এক প্রশ্ন আসে মনে। আর যাইহোক মারধর খেয়ে যদুর খেউড় তো শুনতে হয় না, এই বা কম কী। বাকি জীবনটাকে ছাইভস্ম থেকে দূরেই রাখতে চায়। স্বামীর কাছে ফিরে যাবার কথা স্বপ্নেও ভাবে না আর। দাম্পত্যে বিশ্বাস যেখানে নেই, সুখ সেখানে স্বপ্নেরও অতীত। থাক, বেশ আছি ভাবে কণিকা, আপন কক্ষপথে।
 
রাতের খাওয়া শেষে বিছানায় বসে কণিকা। আজ শ্রান্ত ভীষ। নিদ্রা অপেক্ষামান চোখের পাতায়। তবুও অভ্যাস। রাতের আকাশে ভাবনার ভেলায় ভেসে যাওয়া। জানালার রেলিং টপকে অসীম আকাশের সীমিত ক্ষেত্রে একমনে চেয়ে থাকে। সারাদিনের প্রতিটা মুহূর্ত মনে পড়ে। চলমান চিত্র যেন ফুটে ওঠে নক্ষত্রখচিত আকাশের ক্যানভাসে। দাদাবাবু আর দিদিমণির সম্পর্কের টানাপোড়েন ভাবতে থাকে। মুখের হাসি অটুট রেখে কথা বলেছে দুজনে। আশ্চর্য লাগে কণিকার। সাত-আট মাস ধরে চলতে থাকা দাম্পত্যের অবিন্যস্ততাও কতখানি বিন্যস্ত! দেখে অবাক হতে হয়। দুটি জীবনের তীব্র যন্ত্রণাও এখানে বেসুরে বাজে না। নিঃশব্দে বদলে যায় চলচিত্র। নিজের জীবনের ফেলে আসা দিনলিপি ফুটে ওঠে সুস্পষ্ট হয়ে। কণিকা আর যদুর দাম্পত্যের বেআব্রু কর্কশ চেহারাটা রোজদিনের মতোই ভেসে ওঠে চোখের সামনে।
 
ক্রমশ…
 

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)