বাতায়ন/মাসিক/রম্যরচনা/২য় বর্ষ/২৮তম
সংখ্যা/২রা ফাল্গুন, ১৪৩১
অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | রম্যরচনা
প্রদীপ কুমার
দে
মঙ্গলে
অমঙ্গল দশা
ঝিঙাফুল
সিরিজ— ৭
"কাকি এত ফাজিল জানতাম না, -ভাল চাষা নয় নিশ্চয়ই নাহলে এতদিনে ঝিঙাফুলে ফল আসতে না? শাশুড়ি আর শালা সরে গেল। বাড়ির, পাশেরবাড়ির সবাই ঘিরে ধরল আমায়, -জামাইবাবু কী খান, যে সার এত পাতলা?"
শনি গেল, রবি এল, সোম গিয়ে আজ
মঙ্গলবার। সংক্রান্তি,
মাসপয়লা কেটেছে কিন্তু আজ মঙ্গলে বাড়ি ফিরতে পারলে হয়? কেন এমন মনে
হচ্ছে?
শাশুড়ি,
খুড়শাশুড়ি সবাই দেখছি কেমন যেন খুঁতখুঁত করছে নিজেদের মধ্যেই,
-মঙ্গলবার!
মোটেই দিন ভাল নয়, যাওয়ার
জন্য।
-কী আর করবে? জামাইয়ের যে
অফিস কামাই হচ্ছে?
-সেইটাই তো
সমস্যা।
শ্যালজ বউয়ের ফুলঝুরি আরো এক কাটি,
-জামাইকে
অফিস ছাড়িয়ে ক্ষেতের কাজে লাগিয়ে দিন মা, তাহলে সব দিক দিয়ে সুবিধা হবে। আমরাও
তো আছি এভাবেই।
আমার মাথায়
বাজ পড়ার উপক্রম। এ মহিলা বলে কী?
পুস্পেন্দু
মানে আমার শালা পাশেই ছিল। ওর সঙ্গে আমার পুরানো বন্ধুত্ব। ও তো ওর বউয়ের কথায়
হেসে খুন,
-চল চল, চাকরিবাকরি
ছেড়ে দে। কেতাবি না মারিয়ে মাঠে চাষাবাদ করবি চল।
কাকি এত ফাজিল জানতাম না,
-ভাল চাষা নয়
নিশ্চয়ই নাহলে এতদিনে ঝিঙাফুলে ফল আসতে না?
শাশুড়ি আর শালা সরে গেল। বাড়ির, পাশেরবাড়ির সবাই ঘিরে ধরল আমায়,
-জামাইবাবু কী খান,
যে সার এত পাতলা?
কে একজন পাশ
থেকে বললে,
-জমিতে দিলে
তবে না?
ঝিঙাফুল
দৌড়ে এল,
-না, না, সেদিক দিয়ে
উনি বড় করিতকর্মা পাক্কা খেলোয়াড় লুকিয়ে আমার জলে ট্যাবলেট মিশিয়ে
খাইয়ে দেয়, ভাবে
আমি টের পাই না। তাই আজ সবার সামনে বলে দিলাম।
আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল। এ বউ তো কম চালাক নয়? ঠিক জায়গায়
ঠিক হাঁড়ি ভেঙে দিল।
কাকিমা গার্জেন হলেন,
-এমা! ছি! ছি! আর তুই সব জেনেশুনে
ওই জল খেয়ে নিচ্ছিস?
তোর তো আর কোনদিনই বাচ্চা হবে না। ও একটা পুরুষ হয়ে মেয়েদের সব সমস্যা কি জানে? তা বলে তুই
জেনেশুনে?
ঝিঙাফুলের
মুখে হাসি নেই,
-কী করব কাকিমা, ও যদি না
চায়?
সবাই
তারস্বরে চিৎকার জুড়ে দিল,
-এমা! তুই এত বোকা? ওকে শোধরাবি তো?
আর আমাকে
উদ্দেশ্য করে সংগ্রাম জারি হল,
-জামাই আমরা
সব জানলেম, খুব
খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু?
চারমাস সময় দিলাম,
ঝিঙাফুলের ভাল খবর চাই। নচেৎ অমঙ্গল হয়ে যাবে সব!
আমি জোড়হাতে
দণ্ডায়মান, উপায়হীন।
মারাত্মক বিপদ যে!
শ্যালজ বউ
ফুলঝুরি আমার হাত নামিয়ে দিল আর চেঁচিয়ে বাজিমাত করে বাড়ির সক্কলকে জানিয়ে দিল,
-জামাইবাবুর
অত্যাচার মানছি না মানব না।
আমিও
নিরুপায়,
-ভুল হয়ে
গেছে আর হবে না কথা দিলাম।
-ঠিক তো? প্রমাণ দিতে হবে
যে...
-একদম। যা
দেবার দেবো...
-মা, আপনি ঠিকই
বলেছেন মঙ্গলবার মানেই অমঙ্গল! ওদের দুজনের আজ আর বাড়ি ফেরা হবে না। খাওয়াদাওয়া
সেরে আজ থেকেই ওরা উঠে পড়ে লাগবে ফসল ফলানোর জন্য।
হো হো
আওয়াজে পরিবেশ পাল্টে গেল। সবার মুখে দেখি কী হাসি। কাকিমা এসে
আমার মাথার চুল ঘেঁটে দিল,
-আমাদের মতো এরকম আদরের জামাই আর কারোর আছে? সেইজন্যই তো না ছাড়ার এত
অজুহাত খুঁজি।
সমাপ্ত
আনন্দ শুভেচ্ছা রইল সকল গুনীজনে 💚
ReplyDeleteসম্পাদক মহাশয়, কবি লেখক সহ পাঠকবন্ধুদের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
আন্তরিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি পত্রিকার সম্পাদনা করার জন্য সম্পাদক সহ সকলকে
ReplyDelete👏👏👏