বাতায়ন/মাসিক/যুগলবন্দি/২য় বর্ষ/২৮তম
সংখ্যা/২রা ফাল্গুন, ১৪৩১
অমরেন্দ্র
চক্রবর্তী সংখ্যা | যুগলবন্দি | সুচরিতা চক্রবর্তী ও অজয় দেবনাথ
সুচরিতা চক্রবর্তী
অনন্ত
সখা
"বিজীত আবার যদি ইউনিভার্সিটির দিনগুলো ফিরে আসে কী করবে? তোমার মুনিয়া তোমার চূর্ণি তোমার পর্ণা আবার কি সব হারিয়ে ফেলবে আবার কি নিজের ইচ্ছেমতো একলা জীবন টেনেটুনে নিয়ে যাবে ছাপোষা অফিসে?"
"আর একটা পর্ণার খোঁজ নিয়ে জানিয়ো পর্ণা। চিরকৃতজ্ঞ থাকব নিশ্চয়ই। আর হ্যাঁ, ঘটকালি বাবদ পাওনা ঘটকবিদায় নিয়ে ভয় পেয়ো না। দিয়ে দেব। আমি চিটার নই, ঠকাব না।"
আমাদের কথা
ছিল প্রতি নভেম্বরে একটা করে চিঠি দেবার। তবে কি পরস্পরের টান পুনরায় বৃদ্ধি পাচ্ছে
বিজীত? নদী
কি সমুদ্রের কাছাকাছি এসে গেছে? আমাদের ঘন ঘন চিঠি আদানপ্রদান সেই কথাই তো বলছে তাই না!
জানো তো আজকাল ভীষণ কবি হতে ইচ্ছে করে। রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ব্যালকনিতে এসে বসি।
ইলেকট্রিক আলো ভাল লাগে না। মনে হয় জীবনানন্দের সেই ধূসর মাঠ
পেরিয়ে সোনালি ডানার চিল আর শান্ত পেঁচার সাথে দেখা করি। কেমন ছিল ধান ভরা মাঠ, মৃত
নক্ষত্রের সারি, কেমন ছিল কবির কুয়াশার পথ!
আচ্ছা কবি
হতে গেলে কি এমন আমার মতো দুঃখী হতে হয়? এমন প্রেমে
আকুল হতে হয়? এমন
না পাওয়ার যন্ত্রণায় গোপনে কাঁদতে হয় আজীবন?
তোমার মনে
আছে বিজীত ইউনিভার্সিটিতে ফাইনাল ইয়ারে আমার জার্নালিজমের রেজাল্ট ইনকমপ্লিট এলো
তুমি আমার মন ভোলাতে আমাকে নিয়ে চলে গেলে সেই কুর্চি গাছের কাছে। খুব মনে পড়ে
সেদিনের কথা। আবৃত্তি করলে বুদ্ধদেব গুহর লেখা 'কুর্চিকে লেখা পৃথুদার চিঠি'। কী অপূর্ব কন্ঠ! কী দরদ! এখন প্রায় আমি শিমুল
মুস্তাফার কন্ঠে শুনি তোমার সেই কবিতা। কিন্তু ওই। নেতাকে ভালবাসার যন্ত্রণা। নেতা
তো একজনের জন্য জন্মায় না সে তো সকলের। তাই হয়তো সময়ে আমার গুরুত্ব বুঝলে না।
এখন বলছ
পার্টি করতে আর ভাল লাগে না, কিন্তু সেই বোধ সেদিন কেন এলো না তোমার? মাস্টার্স
করার পর তিন-তিনটে বছর তুমি হাওয়ায় গা ভাসিয়ে মনের সুখে
দলের জন্য কাজ করলে ভেবেছিলে পর্ণা তো তোমার অলিখিত সম্পত্তি সারাজীবন তোমার জন্য
অপেক্ষা করবে। অপেক্ষায় থাকবে কবে তুমি একটা চাকরি করবে ঘর বাঁধার জন্য। আজ যে ঘর
বাঁধা হলো তা কেবলই কংক্রিট কেবল কংকাল আর আমি এক চলন্ত লাশ। আচ্ছা বিজীত আবার যদি
ইউনিভার্সিটির দিনগুলো ফিরে আসে কী করবে? তোমার
মুনিয়া তোমার চূর্ণি তোমার পর্ণা আবার কি সব হারিয়ে ফেলবে
আবার কি নিজের ইচ্ছেমতো একলা জীবন টেনেটুনে নিয়ে যাবে ছাপোষা অফিসে? বলো-না বিজীত আমরা কি আবার সব হারাব যদি ফিরে আসে অতীত?
থাক, অবান্তর কথা
বাড়িয়ে লাভ নেই। কথায় বলে পুরুষ মানুষের বয়স বাড়ে না। দেখো-না যদি আর একটা পর্ণাকে খুঁজে পাও। কেন একলা আছ? এ অপরাধবোধ
তো ভয়ংকরভাবে আমাকে গ্রাস করছে। লক্ষ্মীটি একটু ভেব। আমাকে দায়মুক্ত করো এ জন্মের
মতো।
ইতি পর্ণা।
যুগলবন্দি | অজয়
দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী
অজয় দেবনাথ
পর্ণা,
তোমাকে কি বেঁধে রেখেছি নাকি! শিকলে
না খাঁচায়? যে স্বেচ্ছায় ফাঁদে পা দেয় তাকে মুক্তি দেবে কে? হাসালে। আর জন্ম তো একটাই,
তুমি দেখেছ নাকি জন্মান্তর! তবে তো মানতেই হয় আমি অসম্ভব ভাগ্যবান, তোমার মতো অবতার
মাপের মহামানবীর সঙ্গে মিশেছি, অন্তরঙ্গ হয়েছি।
হ্যাঁ ভেবে দেখলাম, বোকার মতো একা-একা
জীবন কাটানো সত্যিই অর্থহীন। তবে আমার পক্ষে মেয়ে দেখতে যাওয়া যে সম্ভব নয় তা ভাল করেই
জানো। তাই তোমাকেই সেই দায় নিতে হবে। আর একটা পর্ণার খোঁজ নিয়ে জানিয়ো পর্ণা। চিরকৃতজ্ঞ
থাকব নিশ্চয়ই। আর হ্যাঁ, ঘটকালি বাবদ পাওনা ঘটকবিদায় নিয়ে ভয় পেয়ো না। দিয়ে দেব। আমি
চিটার নই, ঠকাব না।
না, চূর্ণি বা মুনিয়া তোমার আর হওয়া
হলো না। সে-সব হতে গেলে হৃদয় আড়েবহরে অন্যরকম হতে হয়, তোমার তা নেই। বোধ করি তুমি তা
বুঝবে না, কাজেই বৃথা স্বপ্ন দেখো না।
তাহলে তোমার মনে হয়েছে বা তুমি জানো
তিন বছর পার্টি করলে অনেক কিছু পাওয়া যায়। জানতে পারি এমন ধারণা হলো কী করে তোমার? এমন কথা আমি তো কখনও
বলিনি বা আমার পার্টি করার সময়সীমাও জানাইনি তোমাকে। তবে?
তোমার চিঠি পড়ে মনে হলো, জার্নালিজমের
পাশাপাশি কাব্যচর্চাও যথেষ্ট করেছ। সত্যি তুমি কবি হলে মন্দ হতো না। আচ্ছা, তুমি বিয়ে
করার জন্য জার্নালিজম পড়েছিলে! কী আশ্চর্য না! তা এখন নিশ্চয়ই বাড়িতেই সাংবাদিকতা করো।
কাগজের অফিসটফিস খুললে কিংবা কোনও চ্যানেল? যতদূর জানি তোমার বর তো এক ধনকুবের, তা
তিনি তোমাকে ফাইনান্সিয়াল সাপোর্ট দিতেই পারেন। বেশ, বেশ…
আর কী! ভাল থেক, সুখে থেক, সর্বহারার
প্রাক্তন প্রেমিকা এবং বর্তমানে ধনকুবেরের স্ত্রী। চলি।
বঞ্চিত সর্বহারা।
কতোটা কাল্পনিক হলে এমন চিঠি লেখা যায় তাই ভাবি, এ যেনো পত্র মিতালিকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে।
ReplyDeleteকার কথা বললেন? আপনারটা তো? সত্যিই ভাল লিখছেন পর্ণা।
ReplyDeleteচমৎকার।
ReplyDeleteআন্তরিক ধন্যবাদ। পরিচয় পেলে ভাল লাগত।
Deleteধন্যবাদ জানাই
ReplyDeleteস্বাগত...
Delete