প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Saturday, February 15, 2025

পিছুটান রয়ে যায় [পর্ব – ১] | ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য

বাতায়ন/মাসিক/ধারাবাহিক গল্প/২য় বর্ষ/২তম সংখ্যা/২রা ফাল্গুন, ১৪৩১
অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | ধারাবাহিক গল্প
 
ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য
 
পিছুটান রয়ে যায়
[পর্ব – ১]

"গনেশ নাকি লুকিয়ে ভালবাসে পাশের বাড়ির কণিকাকে। তখন গণেশদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল কণিকার। পাড়াঘরে কেউ মানেনি গণেশের নতুন বউয়ের কথাসকলে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে।"


দেখতে দেখতে দুবছর হয়ে গেল স্বামীর ঘর ছেড়েছে কণিকা। বুঝিয়ে নিয়েছে নিজেকে, ফিরবে না আর কোনোদিন। তবে পিছুটান রয়েই গেছে, সে বুঝি আর যাবার নয়

 
সেদিন জৈষ্ঠ্য মাসের বৃহস্পতিবার। দুয়ারে বসেছিল কণিকা। মেয়েটা বাড়িতেই ছিল, ইস্কুলের ছুটি। যদু নাইতে গেছে পুকুরে। হাতের কাজ শেষ করে স্বামীর বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় বসে কণিকা। মেয়ে আর স্বামীকে খাইয়ে নিজে খাবে তারপর। সেই সময় গণেশের মা এসে দাঁড়ায় দরজার সামনে। এদিক সেদিক উঁকি দিয়ে গলা নামিয়ে ডাকে,
-কই রে বউ একবার বাইরে আয় তাড়াতাড়ি।
কণিকা বলে,
-আপনি বাড়িতে আসুন-না কাকিমা।
-তুই একটিবার আয়-না মা।
সদর দরজায় এসে দাঁড়ায় কণিকা। সিঁথিতে এক চিলতে সিঁদুর ছুঁইয়ে দেয় গণেশের মা। প্রণাম করে কণিকা। সিঁথির সিঁদুর মাটিতে পড়ে সামান্য। কুড়িয়ে নিতে চায় কণিকা। নিষেধ করে গণেশের মাসজল চোখে বলে কণিকা
-আজকের দিনটা আপনার ভুল হয় না কাকিমা।
-কী করে ভুলি বল বউ, আমিই তো তোকে বরণ করে ঘরে তুলেছিলাম। আজ যতই আমার গণেশের বিয়ে হোক, ছেলের বউয়ের সুখ তো পেলাম না। তোকে নিয়েই আমার...
কণিকাকে আশীর্বাদ করে বলে গণেশের মা
-অথচ...
কথা শেষ করতে পারে না কণিকা। ফুঁপিয়ে ওঠে
-এমন দিনে কাঁদিস না বউ। বেসপতিবার তায় দুপুরবেলা। স্বামী-মেয়ে নিয়ে সংসার। চোখের জল অমঙ্গল ডাকে। চুপ কর। দুঃখ করিসনে বদনাম আসে আবার ঘুচেও যায়। আমি গেলাম। এখুনি যদু চলে আসবে।
বলে চলে যায় গণেশের মা।
 
আজ পনেরোই জৈষ্ঠ্য। কণিকার বিবাহবার্ষিকী। প্রতি বছর আজকের দিনে গণেশের মা আসে। সিঁদুর দিয়ে রাঙিয়ে দিয়ে যায় কণিকার সিঁথি। এই বছর যদুর ভয়ে এই কাজটি লুকিয়েচুরিয়ে সারে গণেশের মা। কারণ আছে

মাস খানেক হলো গণেশের বউ বাপের বাড়ি চলে গেছে এদিকের পাট এক্কেবারে চুকিয়ে। মনে সন্দেহ ছিল, গনেশ নাকি লুকিয়ে ভালবাসে পাশের বাড়ির কণিকাকে। তখন গণেশদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল কণিকার। পাড়াঘরে কেউ মানেনি গণেশের নতুন বউয়ের কথা, সকলে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে। আর যাই হোক, যদুর বউ এমন মেয়ে নয়, নিশ্চয় অন্য কোনো কারণ আছে তাই গণেশের বউ গণেশের ঘর করেনি। সে কথার সত্যতাও জানাজানি হয় পরে। গাঁ গঞ্জে কি আর কথা চাপা থাকে। সবাই জেনেছে যে তার ভালবাসার পাত্রকেই বিয়ে করেছে গণেশের বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে।
তবে লোকে যাই বলুক না কেন, যদু সাগ্রহে লুফে নিয়েছে গণেশের বউয়ের ফেলে যাওয়া কথা। উঠতে বসতে বাঁকা কথা শোনায় কণিকাকে। মেয়ের সামনে লজ্জায় মরে কণিকা। কান্নাকাটি করে আড়ালে। হাজার অনুরোধ করে যদুকে,
-কে কী বলল আর সেই নিয়ে তুমি...
যদু শোনার পাত্র নয়। বলে,
-থাম, আমি বুঝি সব। পিরিত আর ধরে না...
মনে যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটে কণিকার। সামান্য কথাতেই স্বামীর গঞ্জনা শুনতে হয়। রোজ রোজ কার ভাল লাগে? গণেশের মা বোঝায়,
-মন খারাপ করিসনে বউ। চরিত্র টেনে মেয়েমানুষকে ছোট করার মতো সহজ কাজ আর নেই। এরা সীতাকেও ছাড়েনি।
কথাটা মিথ্যে নয়। সেই ভেবেই মনে সান্ত্বনার পরশ পাবার চেষ্টা করে কণিকা। নাছোড় যদু বলে,
-বেহায়া বজ্জাত মেয়ে। লাজলজ্জার বালাই নেই, ঘরে স্বামী থাকতে পরপুরুষে মন মজেছে।
তখন একান্তে সজল চোখে স্বামীর পায়ে ধরে বলে কণিকা,
-এসব সত্যি নয় গো। মিথ্যে মিথ্যে মিথ্যে। তুমি এই সব কথা বলো, লোকে শুনে আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করে। আর মেয়েটা কষ্ট পায়।
কে শোনে কার কথা! গণেশের মা একদিন বলে,
-শোন বউ জীবন আমি কম দেখিনি। সন্দেহ এক রোগ, সে আপনি আপনিই ছড়িয়ে পড়ে মনের ভিতর। তখন বাতাসেও পাথর ভাসতে দেখে। এর কোনো ওষুধ নেই জানবি। চুপ থাক, যতদিন মনের বিশ্বাসের ভীত নড়বড়ে থাকে ততদিন সন্দেহ থাকে।

মনে আশা নিয়ে শান্ত করে নিজেকে কণিকা। স্বামী নিজের ভুল একদিন বুঝবে হয়তোমাঝে মাঝে নির্জন দুপুরে কণিকা ভাবে বিবাহিত জীবন বড় জটিল। সহজ নয় দুটি মানুষের এক ছাদের তলায় ভাল থাকবার হিসাবনিকে। সম্পর্কে বিশ্বাস না থাকলে বিবাহিত জীবন যেন মূল্যহীন। সেখানে সুখে থাকবার ভাবনা ঢেউয়ের উপর মিনার গড়ার সামিল।
 
মাঝে কয়দিন থমথমে পরিবেশে দিন কাটে। যদু মুখ খোলে কম। মেঘ বুঝি কাটল, ভাবে কণিকা। বিধি বাম!
এরই মধ্যে একটা কাণ্ড বাধে একদিন। ইস্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল যদুর মেয়ে। মোটর সাইকেলে ধাক্কা মারে পিছন থেকে। জখম হয় মেয়ে। গায়ে-পায়ে রক্ত দেখে হাত-পা আসে না কণিকার। এদিকে যদু বাড়িতে নেই। গণেশ আসে দৌড়ে, মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতাল যায়। চিকিৎসা করিয়ে আনে
 
সন্ধ্যাবেলায় বাড়ি ফেরে যদু। মেয়ের অবস্থা জানার আগেই মুখে গনগনে আগুন নিয়ে দাঁড়ায় কণিকার সামনে। গলা তুলে বলে,
-গনেশ এসেছিল শুনলাম! পাড়ায় আর লোক ছিল না তখন? মেয়ের জ্বালাযন্ত্রণার মধ্যেও তোর পিরিত করতে মন চায়! লাজ নেই তোর ছি ছি। পাক্কা ছিনাল তুই।
হাউ হাউ করে কাঁদে কণিকা।
-এমন করে বোলো-না গো
মাটিতে মাথা ঠোকে। যদু ফুটতেই থাকে রাগে। গলা তুলে সবাইকে শুনিয়ে বলে,
-তোর পিরিতের লোক...
গণেশ শুনে রেগে মারতে আসে যদুকেবাধা দেয় গণেশের মা। বলে,
-যদু সন্দেহবাতিক পুরুষ। ওর মনের আগুনে নিজেই পুড়বে।
তারপর থেকে গণেশের মা কণিকার বাড়ি আসে না। ছেলেকেও বারণ করেছে ওদের বাড়ির ধার মারাবি না, কারো ভাল করতে হবে না। বউটা মার খাবে নয়তো
 
ক্রমশ…
 

3 comments:

  1. খুব ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  3. ধন্যবাদ। পরিচয় পেলে ভালো লাগতো।

    ReplyDelete

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)