বাতায়ন/মাসিক/ধারাবাহিক গল্প/২য় বর্ষ/২৮তম
সংখ্যা/২রা ফাল্গুন, ১৪৩১
অমরেন্দ্র চক্রবর্তী সংখ্যা | ধারাবাহিক
গল্প
ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য
পিছুটান রয়ে
যায়
[পর্ব – ১]
[পর্ব – ১]
"গনেশ নাকি লুকিয়ে ভালবাসে পাশের বাড়ির কণিকাকে। তখন গণেশদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল কণিকার। পাড়াঘরে কেউ মানেনি গণেশের নতুন বউয়ের কথা, সকলে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে।"
দেখতে দেখতে
দুবছর হয়ে গেল স্বামীর ঘর ছেড়েছে কণিকা। বুঝিয়ে নিয়েছে নিজেকে, ফিরবে না আর
কোনোদিন। তবে পিছুটান রয়েই গেছে, সে বুঝি আর যাবার নয়।
কণিকা বলে,
-আপনি বাড়িতে আসুন-না কাকিমা।
সদর দরজায় এসে দাঁড়ায় কণিকা। সিঁথিতে এক চিলতে সিঁদুর ছুঁইয়ে দেয় গণেশের মা। প্রণাম করে কণিকা। সিঁথির সিঁদুর মাটিতে পড়ে সামান্য। কুড়িয়ে নিতে চায় কণিকা। নিষেধ করে গণেশের মা। সজল চোখে বলে কণিকা।
-আজকের দিনটা আপনার ভুল হয় না কাকিমা।
-কী করে ভুলি বল বউ, আমিই তো তোকে বরণ করে ঘরে তুলেছিলাম। আজ যতই আমার গণেশের বিয়ে হোক, ছেলের বউয়ের সুখ তো পেলাম না। তোকে নিয়েই আমার...
কণিকাকে আশীর্বাদ করে বলে গণেশের মা।
-অথচ...
কথা শেষ করতে পারে না কণিকা। ফুঁপিয়ে ওঠে।
-এমন দিনে কাঁদিস না বউ। বেসপতিবার তায় দুপুরবেলা। স্বামী-মেয়ে নিয়ে সংসার। চোখের জল অমঙ্গল ডাকে। চুপ কর। দুঃখ করিসনে বদনাম আসে আবার ঘুচেও যায়। আমি গেলাম। এখুনি যদু চলে আসবে।
মাস খানেক হলো গণেশের বউ বাপের বাড়ি চলে গেছে এদিকের পাট এক্কেবারে চুকিয়ে। মনে সন্দেহ ছিল, গনেশ নাকি লুকিয়ে ভালবাসে পাশের বাড়ির কণিকাকে। তখন গণেশদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল কণিকার। পাড়াঘরে কেউ মানেনি গণেশের নতুন বউয়ের কথা, সকলে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে। আর যাই হোক, যদুর বউ এমন মেয়ে নয়, নিশ্চয়ই অন্য কোনো কারণ আছে তাই গণেশের বউ গণেশের ঘর করেনি। সে কথার সত্যতাও জানাজানি হয় পরে। গাঁ গঞ্জে কি আর কথা চাপা থাকে। সবাই জেনেছে যে তার ভালবাসার পাত্রকেই বিয়ে করেছে গণেশের বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে।
তবে লোকে যাই বলুক না কেন, যদু সাগ্রহে লুফে নিয়েছে গণেশের বউয়ের ফেলে যাওয়া কথা। উঠতে বসতে বাঁকা কথা শোনায় কণিকাকে। মেয়ের সামনে লজ্জায় মরে কণিকা। কান্নাকাটি করে আড়ালে। হাজার অনুরোধ করে যদুকে,
যদু শোনার পাত্র নয়। বলে,
মনে যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটে কণিকার। সামান্য কথাতেই স্বামীর গঞ্জনা শুনতে হয়। রোজ রোজ কার ভাল লাগে? গণেশের মা বোঝায়,
কথাটা মিথ্যে নয়। সেই ভেবেই মনে সান্ত্বনার পরশ পাবার চেষ্টা করে কণিকা। নাছোড় যদু বলে,
তখন একান্তে সজল চোখে স্বামীর পায়ে ধরে বলে কণিকা,
কে শোনে কার কথা! গণেশের মা একদিন বলে,
মনে আশা নিয়ে শান্ত করে নিজেকে কণিকা। স্বামী নিজের ভুল একদিন বুঝবে হয়তো। মাঝে মাঝে নির্জন দুপুরে কণিকা ভাবে বিবাহিত জীবন বড় জটিল। সহজ নয় দুটি মানুষের এক ছাদের তলায় ভাল থাকবার হিসাবনিকেশ। সম্পর্কে বিশ্বাস না থাকলে বিবাহিত জীবন যেন মূল্যহীন। সেখানে সুখে থাকবার ভাবনা ঢেউয়ের উপর মিনার গড়ার সামিল।
এরই মধ্যে একটা কাণ্ড বাধে একদিন। ইস্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল যদুর মেয়ে। মোটর সাইকেলে ধাক্কা মারে পিছন থেকে। জখম হয় মেয়ে। গায়ে-পায়ে রক্ত দেখে হাত-পা আসে না কণিকার। এদিকে যদু বাড়িতে নেই। গণেশ আসে দৌড়ে, মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতাল যায়। চিকিৎসা করিয়ে আনে।
হাউ হাউ করে কাঁদে কণিকা।
-এমন করে বোলো-না গো…
মাটিতে মাথা ঠোকে। যদু ফুটতেই থাকে রাগে। গলা তুলে সবাইকে শুনিয়ে বলে,
গণেশ শুনে রেগে মারতে আসে যদুকে। বাধা দেয় গণেশের মা। বলে,
তারপর থেকে গণেশের মা কণিকার বাড়ি আসে না। ছেলেকেও বারণ করেছে ওদের বাড়ির ধার মারাবি না, কারো ভাল করতে হবে না। বউটা মার খাবে নয়তো।
ক্রমশ…
খুব ভালো লাগলো
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো
ReplyDeleteধন্যবাদ। পরিচয় পেলে ভালো লাগতো।
ReplyDelete