প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Monday, October 2, 2023

শারদ | অসূয়া | শংকর ব্রহ্ম

বাতায়ন/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১৯শে আশ্বিন, ১৪৩০

শারদ | ছোটগল্প
শংকর ব্রহ্ম

অসূয়া


শুধু মর্ত্যে কেন? পুরাণেও দেখা যায়, স্বর্গের দেবীরাও ঈর্ষা (অসূয়া) মুক্ত ছিলেন না।

অত্রি মুনির স্ত্রী ছিলেন, অনসূয়া ছিলেন অপূর্ব রূপবতী ও গুণবতী। যার গর্ভে দুর্বাসা মুনির জন্ম হয়েছিল। তার সতীত্বের খ্যাতি জগৎ-জোড়া। অনসূয়ার সতীত্বের খ্যাতি, এই মর্ত্যলোক ছাড়িয়ে, স্বর্গের দেবলোকেও ছড়িয়ে পড়েছিল।

স্বর্গের দেবীরা (সরস্বতী, লক্ষ্মী, দুর্গা) বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, অনসূয়ার সতী হিসাবে এতটা নামডাক হয়ে গেলে, কেউ আর তাদের মর্ত্যলোকে পূজাপাঠ করবে না।

ফলে তারা সেই ভয়ে ভীত ও ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়লেন। তারা তিনজনে একত্র হয়ে তাদের স্বামীদের - ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরকে মর্ত্যলোকে গিয়ে অনসূয়ার সতীত্বের পরীক্ষা নিতে বললেন। প্রথমে ত্রিদেব (ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর) কেউই মোটেও তাতে রাজি ছিলেন না।

কিন্ত শেষ পর্যন্ত তাদের স্ত্রীদের অবুঝ পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে, মর্ত্যলোকে অত্রি মুনির আশ্রমে এসে হাজির হলেন তরুণ সন্ন্যাসীর রূপ ধারণ করে। অত্রি মুনি তাদের রূপ-সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে পড়লেন। তাদের তিনজনকে সমাদর করে এনে, আশ্রমের ভিতরে বসালেন। এবং তাদের বললেন, আপনাদের জন্য আমি কী সেবা করতে পারি?

অত্রি মুনির কাছে, তিন সন্ন্যাসী জানালেন, তারা দীর্ঘদিন অভুক্ত থেকে তপস্যায় রত ছিলেন। এবার তারা অনসূয়ার স্তন্যপান করে তপস্যা ভঙ্গ করবেন বলে ঠিক করেছেন।

অত্রি মুনি তাদের মুখে শুনে একটু আশ্চর্য হলেও, অতিথিকে নারায়ণ ভেবে অনসূয়াকে আদেশ করলেন, তাদের ইচ্ছা পূরণ করবার জন্য।

অনসূয়ার প্রথমে তিন অচেনা অতিথিকে বক্ষ খুলে স্তন্যপান করানোর কথা ভেবে খুব সংকোচ হলেও, স্বামীর কথায় তিনি কোন আপত্তি করতে পারলেন না।

তিনি তাদের প্রস্তুত হতে বলে, আশ্রমের পর্ণকুটিরে ঢুকে বক্ষ আবরণী খুলে, বস্ত্র দিয়ে বক্ষ ঢেকে, তাদের সামনে এলেন।

স্বর্গ থেকে সেই দৃশ্য দেখে সরস্বতী, লক্ষ্মী, দুর্গার মনে আনন্দ আর ধরে না। তারা ভাবলেন, অনসূয়া এবার আর সতীত্ব রক্ষা করতে পারবে কী? তারা আনন্দে এ ওর গায়ে ঢলাঢলি করে পড়ে হাসতে লাগলেন খুশিতে। তিন তরুণ সন্ন্যাসী স্তন্যপান করার পর অনসূয়া আর তার সতীত্ব ধরে রাখতে পারবেন না নিশ্চিতৎ। উত্তেজিত হয়ে পড়ে সতীত্ব বিসর্জন দিতে বাধ্য হবেন তাদের কাছে।

যখনই অনসূয়া তাদের স্তন্যপান করাবার জন্য কাছে এলেন, তিন দেবতা ততক্ষণে শিশুতে রূপান্তরিত হয়ে গেছেন।

তারা স্তন্যপান করে তৃপ্ত হয়ে, অনসূয়াকে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের মধ্যে খেলায় মত্ত হয়ে উঠলেন।

স্বর্গ থেকে সেই দৃশ্য দেখে সরস্বতী, লক্ষ্মী, দুর্গার সম্বিত ফিরল এবার। তারা তখন নিরুপায় হয়ে মর্ত্যলোকে নেমে এসে, অত্রি মুনির আশ্রমে হাজির হলেন। অনসূয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে কাকুতিমিনতি শুরু করলেন, সেই তিন দেবতাকে স্বরূপে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। অনসূয়া প্রথমে তাদের কথায় রাজি হলেন না। তখন তিন দেবী অত্রি মুনির পায়ে এসে পড়লেন।

'এ কী করছেন, এ কী করছেন' - বলে অত্রি মুনি তিন হাত পিছিয়ে সরে গেলেন। দেবীরা তবু তাকে ছাড়ার পাত্র নন।

শেষে অত্রি মুনি অনসূয়াকে অনুরোধ করলেন দেবীদের ইচ্ছা পূরণ করবার জন্য।

অবশেষে অনসূয়া তার স্বামীর কথায়, সেই তিন দেবতাকে তাদের স্বরূপে ফিরিয়ে দিলেন। তখন তিন দেবী তাদের স্বামীদের নিয়ে মানে মানে স্বর্গে ফিরে গেলেন।

 

সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)