প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Monday, October 2, 2023

শারদ | ঝড়ের রাতে ঝড় | অমলেশ কুমার ঘোষ

বাতায়ন/শারদ/ছোটগল্প/১ম বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১৯শে আশ্বিন, ১৪৩০

শারদ | ছোটগল্প
অমলেশ কুমার ঘোষ

ঝড়ের রাতে ঝড়


নিজের পোশাক নিয়ে বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে, অসীমার মনে এল সীমাহীন আধুনিকতা কী হারিয়ে গেল! না এখন সীমানায় বাঁধা পড়ে যাচ্ছে, ঝড় থেমেছে? আনমনে ইষৎ উষ্ণ শাওয়ারের জল গায়ে পড়তেই, মন হারিয়ে গেল অষ্টমীর রাতের ঝড়ে।

আজ শালা মুডটাই খারাপ করে দিল তোর কফি পার্টিটা, হাগ করতে করতে কাননকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়াতেই, কানন বারবার বলছিল “সীমা মনে কিছু রাখবি না, আমাদের এই গ্রুপের সবাই মজা আনন্দ তর্ক করে চা-কফির ঘন্টা কয়েকের আড্ডায়, কেউ কিছু মনে করে না।” ফিরে শক্ত করে কটু কথা শুনিয়ে মা’র চিৎকারের মধ্যে সোজা নিজের ঘরে।

বছরে একবার পুজো, তাও অষ্টমীর সকাল। লাঞ্চের পর কাননের সাথে বসাক থেকে কাপড় কিনে, ওদের একটা গ্রুপের সাথে কাকলিদির দোকানে চায়ের আড্ডা অষ্টমীর সন্ধ্যায় ঠিক ছিল। অপুদা ফোন করে পরে বদলে দেয় জৈনদের “দ্য ফান ইভিং” নামের কফিশপে। আগে একদিন এসেছিলাম, পুরোনো মান্না পরিবারের দোতলা-তিনতলার খোলা ছাদ আর দোতলার দুটো ঘর নিয়ে কফিশপ। খোলা ছাদের একটা অংশে কাচের দেওয়াল দিয়ে সাজানো আরেকটা ঘর। বাকি বাড়ির ভিতরে নাকি সাতটা পরিবার থাকে উপর নীচ নিয়ে, হেভি জায়গা, নতুন খুলেছে, বেশ চালু, বিকেল পাঁচটা থেকে রাত্রি ১১টা অবধি। তবে গলি দিয়ে ঢুকতে হয়, একাধিক সরু সরু সিঁড়ি। অপুদা, কানন একে একে পরিচয় করিয়ে দেয় গুড়েদার (সিনিয়র নাম প্রবীর, বেঁটে বলে গুড়ে ডাকে সবাই) লিভিদি ওসমান সাজেদা আপুর সাথে। একটা কফি নিয়ে সিগারেটে টান দিতে দিতে রমলা, কেশব অনিকেত মিলি ওদের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেয়। কফি স্ন্যাক্স খাবার নিয়ে আড্ডা জমে উঠেছে, হঠাৎ করে ঝড় তার সাথে বৃষ্টি। সব লন্ডভন্ড। ইলেকট্রিক লাইনের একটা ফেস চলে যাওয়ায় মিশল অন্ধকার। সবাই ভিতরের ঘরে নয় হলে কাচের ঘরটায় ঢুকে গেলেও অপুদা ওর বিদেশি বন্ধুর সাথে ঝড় জলে ভিজে ভিজে এক হাতে পেয়ারা গাছের ডাল অন্য হাতে কফির মগ। সবাই বলাবলি করছিল ওদের অদ্ভুত আচরণে, আমার তো বোকা বোকা লাগছিল, কানন বলেছিল “অনিকেত অপুর পুরোনো বন্ধু আড্ডাবাজ আবার এক স্কুল, পাড়াতো নয়। ঝড় বৃষ্টি ওকে আটকাতে পারবে না, অপু ওকে সাথ দেবে…”। বলছিল ওদের নিয়ে অনেক কথা।

অষ্টমীর ভেজা রাতে আবার টেবিল চেয়ার আলো, ঠান্ডা শীতল আমেজ। ওদিকে টাওয়েল এনে মুছে আবার আড্ডায়। আধুনিকতার পরিচয়ে আমি মড বলে তর্কে জড়িয়ে পড়লে অনিকেত তীব্র ভাবে বলেছিল, অর্থহীন এবং মাথার নাকি রোগ। কী প্রচণ্ড তর্ক ও তীব্র শব্দ বাণে দিশেহারা হয়ে আমি, খাবার ছেড়ে সিগারেট ধরিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথে কানে এসেছিল “আধুনিকা ঝড়ে উড়ে গেল, এই রাতে।”

অতিরিক্ত উত্তেজনার আগুনে পুড়ে যাচ্ছিলাম, মনে পড়ছে মাত্রারিক্ত সময় ঠান্ডা জলে স্নান আগে ঝড়ের ভেজা ভাব সঙ্গে উত্তেজনা, সর্দি জ্বরে বাকি পুজো মাটি, সব প্ল্যান বাতিল। সময়ে সময়ে মাথায় আসছিল “আধুনিকা শহুরে গেঁয়ো মড শব্দ মানুষকে অসম্মান করে বেশি, শব্দ প্রয়োগে সম্মানীয় বলে নিজে অতিরঞ্জিত হওয়া মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষণ। সবার সামনে আমাকে পাগল বলল, অথচ কত ছেলে আমার সাথে কথা বলতে পারলে পুলকিত হয়, এমনকি অনেক পুরুষও।” মা অনেক সময় দিয়ে, ভাবছিল মেয়েটার কী হল, মুখে কথা ছিল না।

কানন কয়েকবার এসে সঙ্গ দিয়ে গেছে, আরও সবাই, আমি ঘর বন্দি। একাদশীর দিন অপূর্বদার ফোন, ইভনিং পার্টিতে নিমন্ত্রণ, অপূর্বদাদের পারিবারিক কাকু প্রতিবছর আয়োজন করে কিছু বন্ধু সবাই মিলে। সেই সন্ধ্যায় অপূর্বদা আমাকে নিজেই নিয়ে যায় (এটা কাননের প্রচেষ্টা  আমার জন্য হতে পারে)। খোলা ছাদে হরেক রকমের খাবার, মিউজিক, দলে দলে গল্পের আসর। কাকু-কাকিমা দিদা রমলাদি সহাস্যে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছিল, মন ভাল রাখার অভিনব উদ্যোগ। অনেকের সাথে দেখা পরিচয়, মনটা অনেক ফ্রেশ লাগছিল। নজরে আসে কাকুর সাথে সুদর্শন সাহেবি পোশাকে আলোচনা করছে অনিকেত, তবে অসাধারণ উপস্থিতি নিয়ে কাকুর গণতন্ত্র-রাজতন্ত্র-বিচার জীবন নিয়ে উত্তরে জানান দেয়, “একটা চিন্তার বিষয় বটে,  দিকে দিকে বিচার আর তদন্ত আলাদা বিষয় কিনা ভিন্নমত হলেও, শুধুমাত্র শাস্তির জন্য শুধু বিচার নয়। অন্যায় করল কেন - এই সত্যটা সমাজের জানা দরকার। আইন নিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না বটে, তবে মানবিকতা সামাজিক বন্ধন অটুট রাখার জন্য ছোট ছোট পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন প্রতিনিয়ত চলছে চলবে। এসব আইন মোতাবেক। মনের স্বচ্ছতা বড় কথা… কাকু আরও অনেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল, কালকের বিমানে জার্মানি চলে যাবে, থাকে আমেরিকায়, ওখানে একটা কাজ দেখছে, সাত বছর বাদে কলকাতায় পুজো কাটিয়ে গেল। হেঁটে হেঁটে রোজ নাকি প্যান্ডেল প্যান্ডেল ঘুরেছে এমনকি একা একা। কাকু-কাকিমার আদর ও বন্ধুদের শুভেচ্ছা নিয়ে অপূর্বদার সাথে বেরিয়ে গেল, বালিগঞ্জ স্টেশনের দিকে। যাওয়ার আগে আমাকে ডেকে বলল, “সব কিছু বইতে নেই, চিনেদের একটা ছোট গল্প আছে। পরিবর্তন প্রতিনিয়ত হয়ে চলেছে, শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা।”

আধুনিকতার যে আগুনে পুড়ে যাচ্ছিলাম, ঘরে ফিরতে ফিরতে বদলে গেল আধুনিকতার মনের ঝড়। আহা ইষৎ উষ্ণ শাওয়ারের জলে যেন থেমে গেল ঝড়। মন বলছে নতুন শাড়িটাতে সুন্দর দেখাচ্ছে, তুই সীমাহীন অসীমা। বেশ মজা আনন্দে কফির মগ তুলে নিলাম আমি অসীমা।

সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)