প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Thursday, April 4, 2024

শিল্প-সংস্কৃতি | নাটক | অন্তিম | কৃপাণ মৈত্র

বাতায়ন/শিল্প-সংস্কৃতি/১ম বর্ষ/৩২তম সংখ্যা/২৩শে চৈত্র, ১৪৩০

শিল্প-সংস্কৃতি | নাটক

কৃপাণ মৈত্র

অন্তিম

[চরিত্রঃ- বিজ্ঞানী- (বয়স- ৬০), রিপোর্টার - (যুবক), রমলা -বিজ্ঞানীর স্ত্রী। (রুগ্ন শীর্ণ চোখের কোলে কালি। বয়স- ৫৫)]

[চেয়ারে উপবিষ্ট এক বিজ্ঞানী। টেবিলের উপর একটি ফানেল এবং বুনসেন বার্নার। বিজ্ঞানী ফানেলের নীল জলের দিকে তাকিয়ে আছেন এবং পরীক্ষা করছেন। তিনি একটি যৌগ ফানেলে ঢাললেন। ধোঁয়া উঠল। (পাশের একটি পাত্রে পটাশের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে ধোঁয়া তৈরি করা যেতে পারে।) বিজ্ঞানী চেয়ার ছেড়ে উঠে নাচতে নাচতে চিৎকার করেন]


বিজ্ঞানী:      এটলাস্ট এট লাস্ট, আই হ্যাভ ওয়ান। আই এম দা ডিটারমিনেটর অফ দিস ওয়ার্ল্ড।              আমি আমিই এই পৃথিবীর নিয়ন্তা। আই হ্যাভ ডান দিস। আমিই পৃথিবীর স্রষ্টা।                    আমিই বিনাশক। আমি ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। পৃথিবী জরাগ্রস্ত, ব‍্যাধিগ্ৰস্ত। অসুস্থদের                  বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই এই পৃথিবীতে। পৃথিবীরও নেই। এই পৃথিবী                      বীরত্বের, পৌরুষের।  হিরোইজম ইজ লস্ট।  আমি ধ্বংস করব এই পৃথিবীকে।                    আমি বাতাসে বিষ ছড়িয়ে দেবো। ছটফট করতে করতে সমস্ত প্রাণীকুল মৃত্যুর                    কোলে ঢলে পড়বে। গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাবে। জল কালো হয়ে যাবে। পানের                অনুপযুক্ত হবে। শ্বাসে মৃত্যু। পানে মৃত্যু। এমনকি পৃথিবীর অভ্যন্তরের জল শুকিয়ে               যাবে। আকাশে মেঘ থাকবে না, সব শুকিয়ে পাথর হয়ে যাবে। মানুষ মানুষের মাংস               খাবে। কেঁচো, সাপ, ইঁদুর বাঁদর পর্যন্ত বাদ যাবে না।  হা হা হা হা। আই উইল                  ডেসট্রয় দিস ওয়ার্ল্ড। আমি সব ধ্বংস করে দেবো। ও গড আই উইল ডিফিট ইউ।               আমি তোমাকে হারিয়ে দেবো। ইউ উইল লুজ গ্ৰেটনেস। মানুষ তোমাকে নয়,                      আমাকে পুজো করবে। হা হা হা আই এম দা ক্রিয়েটর অ্যান্ড ডেস্ট্রয়র।                          (কলিংবেলের শব্দ) হু? কে, কে? প্লিজ কাম। আই উইল শো ইউ মাই ভিক্টরি। মাই               নিউ ইনভেনশন অফ কিলিং দিস ওয়ার্ল্ড।

[রিপোর্টার প্রবেশ করেন।]

বিজ্ঞানী:      এসো রিপোর্টার আই হ্যাভ বিন ওয়েটিং ফর ইউ। তুমি খবর করে দাও পৃথিবী                 ধ্বংস হবে। আমি পৃথিবীকে খুন করব। হা হা হা-

রিপোর্টার:    কিন্তু কেন? কীভাবে?

বিজ্ঞানী:      কেন, কেন? পৃথিবীর সারা শরীরে মারণ ভাইরাস। আমি শুধু তার মৃত্যু সম্পূর্ণ করব। আই মিন যে পৃথিবী ধ্বংস হতে চলেছে হয়তো আর কিছুদিন লাগবে ধ্বংস হতে, আমি তাকে ত্বরান্বিত করব।

[নেপথ্যে এক মহিলার কণ্ঠ]

মহিলা:       শুনছ, প্লিজ একবার এসো। পাশে বসো।

বিজ্ঞানী:      ওই ওই শুনছ। আর্তনাদ। আমার স্ত্রীর। ক্যানসার খোকলা করে দিয়েছে ওর শরীর। অবশ্যই এর জন্য আমি দায়ী।

রিপোর্টার:    মানে!

বিজ্ঞানী:      আমি ওর উপর পরীক্ষা করেছিলাম। অবশ্য শুধু আমার স্ত্রীর উপর নয়। আমার ছেলের উপরেও- ওর শরীর থেকে মাংস খসে পড়ছে। সারা শরীরময় দুর্গন্ধ।

রিপোর্টার:    ওঃ আপনি কি নিষ্ঠুর! আপনি মানুষ না...

 বিজ্ঞানী:      নরখাদক। হা হা হা। আই এম এ ক‍্যানবল। হা হা হা...

রিপোর্টার:    প্লিজ, স্টপ ইট।

বিজ্ঞানী:      নো, নেভার। আমি যেখানে পৌঁছে গেছি সেখানে থামার প্রশ্নই উঠে না। তাছাড়া থামবই বা কেন। আমি পৃথিবীর ওয়েল উইসার। মৃত্যুর আগে ভয়ানক যন্ত্রণা থেকে পৃথিবীকে অব্যাহতি দিতে চাই। এতে পৃথিবীবাসীর খুশি হওয়া উচিত।

রিপোর্টার:    ডোন্ট ফরগেট, বিজ্ঞানী তুমি ও বাঁচবে না। তাহলে...

বিজ্ঞানী:      হা হা হা হা। নো আই উইল নট ডাই। আমি মরব না।

রিপোর্টার:    বাট হাউ? কীভাবে?

বিজ্ঞানী:      কীভাবে? হা হা হা। আই হ‍্যাভ মেড এ স্যাটেলাইট। আমি একটি কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করেছি। আমি এবং আমার ক্যারিবিয়ান গার্লফ্রেন্ড সেখানে উড়ে যাব যখন পৃথিবী তার অন্তিম শ্বাস নেবে।

রিপোর্টার:    ওঃ হাউ সেলফিশ ইউ আর! হাউ ইন হিউম্যান!

 

[বিজ্ঞানী উত্তেজনায় নাচতে থাকেন। নেপথ্যে নারী কণ্ঠ]

 

মহিলা:       প্লিজ একটু জল দিয়ে যাও।

রিপোর্টার:    আপনার স্ত্রী জল চাইছে। 

বিজ্ঞানী:      ও মরীচিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে মরে যাবে। হা হা হা।

[নেপথ্যে নারী কণ্ঠ]

মহিলা:       প্লিজ, একটু জল দিয়ে যাও।

রিপোর্টার:    ও না আপনার সন্তানের মা।

বিজ্ঞানী:      আমাদের একমাত্র সন্তান এখন মৃত্যুর দুয়ার গোড়ায়।

রিপোর্টার:    আপনার স্ত্রী আপনাকে সেবা দিয়েছিল...

বিজ্ঞানী:      বিজ্ঞানী মরুভূমির ক্যাকটাস। ওর জলের দরকার হয় না।

[নেপথ্যে পুরুষ কণ্ঠ]

ছেলে:        বাবা, একটু ওষুধ দিয়ে যাও।

বিজ্ঞানী:      আমার ছেলে। একটু ওষুধের জন্য ছটফট করছে। ও মাই সন, ওয়েট ফর এ হোয়াইল। মৃত্যুতে কোন কষ্ট নেই, কোন শোক নেই। হা হা হা হা মৃত্যুর নরম কোলে সারা বিশ্ব ঢলে পড়বে, আর আমার গার্লফ্রেন্ড এবং আমি ছাড়া বিশ্ববাসীর জন্য কাঁদবার কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।

রিপোর্টার:    আপনি কি মনে করেন, আমি খবর করে দেওয়ার পর কেউ আপনাকে আস্ত রাখবে।

বিজ্ঞানী:      (চিন্তিত হয়ে) ইয়েস ইয়েস, ইউ আর রাইট। কেউ আমাকে... ওহ্ আমি কি ভুল করলাম। (হাত জড়ো করে) রিপোর্টার, প্লিজ কাউকে বলো না।

রিপোর্টার:    তুমি পৃথিবী ধ্বংস করবে, আর সে খবর আমি কাউকে দেব না সে কি কখনো হয়! আমি কি ধরিত্রী মানে পৃথিবী-মায়ের সঙ্গে কখনো বেইমানি করতে পারি।

বিজ্ঞানী:      বেইমানি করতে পারো না, তাই না কিন্তু আমি যা পারি তাই করি।

রিপোর্টার:    আপনি আর কী করবেন?

বিজ্ঞানী:      কী করব? তোমাকে খুন করব। কেউ টের পাবে না। ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড, রিপোর্টার? আই উইল কিল ইউ। হা হা হা হা...

[বিজ্ঞানী টেবিলের ড্রয়ার থেকে রিভলবার বের করে রিপোর্টারের দিকে তাক করেন।]

রিপোর্টার:    (হাত জোড় করে) আমি কথা দিচ্ছি আমি কাউকে আপনার এই জঘন্য আবিষ্কারের                কথা বলব না। প্লিজ লেট মি গো।

বিজ্ঞানী:      নো নেভার। আই ডোন্ট বিলিভ ইউ। আই উইল শুট ইউ। আমি তোমাকে গুলি করে হত্যা করব। হা হা হা...

রিপোর্টার:    (হাত জড়ো করে) ডোন্ট ডিসবিলিভ মি। আই অ্যাম আ ম্যান অফ ওয়ার্ড। আমি কথা দিচ্ছি, কাউকে কিচ্ছু বলব না।

বিজ্ঞানী:      ভেবেছ, মিষ্টি কথায় আমাকে ভোলাবে। নো, ডোন্ট থিঙ্ক মি আ নিনকমপুপ।

[রিপোর্টার টেবিল উল্টে দেয়। সারা ঘর ধোঁয়ায় ভরে যায়।]

বিজ্ঞানী:      ওহ্ তুমি আমার আবিষ্কার ধ্বংস করে দিয়েছ। আই মাস্ট কিল ইউ।

[গুলির শব্দ। রিপোর্টার বিজ্ঞানীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পিস্তল থেকে গুলি ছোঁড়ে। এমন সময় বিজ্ঞানীর স্ত্রী আলুথালু বেশে মঞ্চে প্রবেশ করে এবং বিজ্ঞানীর দিকে পিস্তল তাক করে।]

বিজ্ঞানী:      (হাত জড়ো করে) রমলা, এটা খেলনা নয়। পিস্তল।

রমলা:        আমি জানি।

বিজ্ঞানী:      তুমি না আমার স্ত্রী।

রমলা:        সে আমার দুর্ভাগ্য।

বিজ্ঞানী:      না না তুমি ভুল ভাবছ। ভুলে যাচ্ছ কেন আমি মরলে তুমি বিধবা হবে।

রমলা:        হা হা হা বিধবা! কী ভুলই না করেছিলাম আমি। কোন এক দুর্বলতায় তোমার সন্তানের মা হতে হয়েছিল আমাকে।

বিজ্ঞানী:      (হাত জড়ো করে) প্লিজ রমলা। প্লিজ...

রমলা:        হে ঈশ্বর আমাকে আশীর্বাদ করো। আমি পৃথিবীর জঞ্জাল পরিষ্কার করতে চলেছি।

বিজ্ঞানী:      প্লিজ রমলা, প্লিজ...

রমলা:        হা হা হা হা...

[দুটি গুলির শব্দ হয়। বিজ্ঞানী রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়েন। রমলা স্থিরচিত্রের মতো পিস্তল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। রিপোর্টার স্যালুট করে।]

 

যবনিকা

No comments:

Post a Comment

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)