বাতায়ন/মাসিক/রম্যরচনা/৩য় বর্ষ/১ম সংখ্যা/১লা
বৈশাখ, ১৪৩২
ঝড়
| রম্যরচনা
প্রদীপ কুমার দে
বইপ্রেমী জিন্স
পরা বউ
ঝিঙাফুল
সিরিজ— ১৩
"তোমরা একশ্রেণিরা ভাবো গ্রাম থেকে টাটকা মেয়ে এনে ঘরে কাপড় জড়িয়ে রেখে সংসারের কাজ থেকে নিজের শরীরের সুখ পর্যন্ত সব মিটিয়ে নেবে। আর বউটা স্বামীকে দেবতা মেনে কেবলই নিজেকে বিলিয়ে অন্যদের খুশি করবে। তা আর হচ্ছে না মশাই।"
সন্ধ্যায়
বাড়ি ফিরে চক্ষু চড়কগাছ! এটা কী দেখছি? নিজের
ফ্ল্যাটে এলাম তো? না কী অন্যের?
ওটা আমার বউ তো না অন্য কেউ?
হাল্কা ফেড
হওয়া জিন্সের টাইট প্যান্ট পাছা হাঁটু ফাটিয়ে দিচ্ছে আর বুকে টাইট
হয়ে চেপে বসা সাদা গেঞ্জিতে একটি যুবতী মেয়ের বড়ো আর ভরাট
বুক আমার চোখকে ছানাবড়া করে দিচ্ছে।
-কী দেখছ অমন করে? আগে ভেতরে এসো, দরজা বন্ধ করো, নিজের হাতে
গড়া বউকে চিনতে পারলে না?
বুঝতে বাকি রইল না ঝিঙাফুল কথার মারপ্যাঁচ দিয়ে আমাকেই ঠোকড়াচ্ছে, আমার হাতে
পড়েই নাকি ওর এই বিশ্রী চেহারা। আমি ওদিকে না গিয়ে অন্যদিকে খেললাম,
-ভিতরে যেতে
এখন ভয় লাগবে যে ম্যাডাম! এ কী সেজেছ?
-আধুনিকা
সাজছি।
-মানে?
-তোমরা
পুরুষরা প্রাচীনকালে আমাদের দাসী করে রাখতে, পরে লোভে পড়ে লক্ষ্মী হিসাবে চাইতে, এবার যুগ
বদলে গেছে এখন আমরা কালী!
-হ্যাঁ সে-তো সর্বত্রই দেখছি।
-তোমরা একশ্রেণিরা ভাবো গ্রাম থেকে টাটকা মেয়ে এনে ঘরে কাপড় জড়িয়ে রেখে সংসারের কাজ থেকে
নিজের শরীরের সুখ পর্যন্ত সব মিটিয়ে নেবে। আর বউটা স্বামীকে দেবতা মেনে কেবলই
নিজেকে বিলিয়ে অন্যদের খুশি করবে। তা আর হচ্ছে না মশাই।
-বাপরে! হয়ে
গেল সব! তা এত জানলে কী করে?
-বই পড়ে।
ভুলে গেলে? কতদিন
হল বইগুলো এনেছি? তা
দুমাস হল। অনেক পড়েছি। আধুনিক গল্প কবিতায় আর প্রবন্ধে নারীদের এই দাবিই স্বীকৃত হয়েছে। পুরুষদের অত্যাচারের দিন শেষ।
-এবার তাহলে
কী নারীরা বদলা নেবে?
-তা কেন? স্বাধীন
হবে। শুধুমাত্র অত্যাচারের শিকার হবে না।
-কী ভাবে?
-শোনো আমি
বাইরে বেরবো। চাকরি করার ইচ্ছে আছে।
-তা ভালো
কথা। তুমি অনেক শিখেছ। বই থেকে জ্ঞান নেওয়া ভালো। তবে সাবধানে।
-রাখো তোমার
জ্ঞান। চলো বাইরে গিয়ে রেস্টুরেন্টে চা-জলখাবার খেয়ে আসি।
-তুমি
এভাবেই যাবে?
-হ্যাঁ। আর
তোমার জন্যও জিন্সের জামাপ্যান্ট কিনে এনেছি পরে নাও তাড়াতাড়ি।
-সেকী?
বউ চোখ
পাকালো। বাধ্য ছেলের মতো জামাপ্যান্ট খুলে
উদোম হতেই বউ নিজের হাতে ওর কেনা জামাপ্যান্ট পরাতে লাগল। আরে সে কী এত সহজ?
অনেক কষ্টে এই প্রথম জিন্স পরলাম।
রাস্তায় বেরিয়ে দেখলাম তেমন বিরাট কোন রিঅ্যাকশন কিছু হলো না।
স্থানীয় রেস্তরাঁয় চাউ আর কফি খেয়ে বেরিয়ে এলাম। বউ ঝিঙাফুল আমাকে বলল,
-চলো এবার
বাড়ি ফিরি।
-কেন? এত তাড়াতাড়ি?
-বাড়ি ফিরে
বলব?
বাড়ি ফিরে
এসে জামাপ্যান্ট ছেড়ে নিলাম। ঝিঙাফুল দেখলাম খুব গম্ভীর। একমনে রাতের খাবার বানিয়ে
নিল। তারপর খাওয়াদাওয়া হল। আমি জানতে চাইলাম,
-তুমি কী যে বলবে বলেছিলে?
-বলছি।
আলোটা নিভিয়ে বিছানায় এসো।
আমি
একমিনিটও সময় নষ্ট না করে ওর অর্ডার মতো একেবার লাফিয়ে
বিছানায়। ও আমাকে টেনে কাছে নিল, আমার বুকে সরে এসে জানতে চাইল,
-তুমি রাগ
করলে?
-না, না গো!
-আমি দেখতে
চাইছিলাম তাই। তোমার সাথে মজা আর আনন্দ করতেই এইসব... একঘেয়েমি জীবন থেকে কিছুটা
হলেও একটা ব্রেক নেওয়া আর কী?
বুঝতে বাকি রইল না বই মানুষকে কত ভালো আর উপযুক্ত শিক্ষা দিতে
পারে। জীবনের মূল্যবোধ পুরো পাল্টে দেয়। ঝিঙাফুল অনেক শিখছে আর ভালো শিক্ষাই
নিচ্ছে যা দিয়ে জীবনযাপন সহজ হয়। আমার একটু ভুল থাকলেও ও চোখ খুলে দিল। আমি ওকে আনন্দে টেনে বুকে চেপে নিলাম, ও চোখ বুজে নিল।
সমাপ্ত
বড় আনন্দ আমার। আর আপনাকে শুভেচ্ছা। সকলের জন্য ভালবাসা।
ReplyDelete