ধারাবাহিক উপন্যাস
পারমিতা চ্যাটার্জি
শেষ থেকে শুরু
[পর্ব— ২৩]
পারমিতা চ্যাটার্জি
শেষ থেকে শুরু
[পর্ব— ২৩]
"লিসা অবশ্য খুব ঠান্ডা মাথার মেয়ে। ‘হেসে হেসে বলছ কী হয়েছে তোমার সজল? কেন এত ড্রিংক করছ? আর কোরো না, এবার ছেড়ে দাও’। ‘সরি লিসা আমি এখনি ছেড়ে দিচ্ছি।’"
পূর্বানুবৃত্তি পরোপকারী প্রমোদবাবুর
একমাত্র পুত্র আমেরিকায় পড়ে আছে। পুত্রসম রাহুল কলেজে জয়েন করার পর এবং তার মেধা, প্রখর
স্মৃতিশক্তি দেখে মোহিত হয়ে যান। তাদের বহু সন্ধ্যা রিসার্চ সমৃদ্ধ আলোচনায় কেটে যায়।
এদিকে রাহুল সজলদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে হঠাৎ খেয়াল করে সুচরিতা নেই। ঘরে উপুর হয়ে
শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। তারপর…
রাহুল আর
সুচরিতা দুজনে চলে এল,
যেখানে সজলরা বসে আড্ডা দিচ্ছিল। সেইসময় সুচরিতার হাত ধরে রাহুল উপস্থিত হয়ে, এক গাল হেসে বলল,
-এমন কথা
ভাবলে কী করে বন্ধু? এক প্লেট কখন শেষ হয়ে গেছে এখন চিকেন
পকোড়া নিয়েছি, নে
বল এবার এখানে কী কী দেখার জিনিস আছে?
-দেখার জিনিস তো অনেক আছে, আমি আসার সময় ট্যুরিজম থেকে এই বইটা নিয়ে এলাম, তোদের তো এক সপ্তাহ সময় আছে এরমধ্যে
দেখি কোথায় কোথায় যাওয়া যায়!
সজল বলল,
-তুই দেখ আমি
আর এক রাউন্ড চা আর ফুলকপির পকোড়া বলে আসি।
প্রবীর চেঁচিয়ে বলল,
-সজল আমার
জন্য কফি বল,
-ঠিক আছে।
বলে সজল
এগিয়ে গেল। রাহুল আর সুচরিতা মন দিয়ে ভ্রমণ পত্রিকা দেখছিল, হঠাৎ রাহুল
যেন চমকে উঠে মনকলি আর প্রবীরের দিকে চেয়ে
বলল,
এই নাও
তোমরাও দেখো।
-হ্যাঁ এই যে দেখি,
বলে প্রবীর একটা ভ্রমণ গাইডের বই টেনে নিল।
-কোথায় কোথায় যাবে আগে ঠিক করে নাও, তোমাদের হাতে সময় কিন্তু সাতদিন।
-হ্যাঁ সাতদিনের মধ্যে তিন-চার দিন যেতে পারি, প্রতিদিন যাওয়া সম্ভব নয়।
এরমধ্যে ওরা দেখল, সজল ফোনে কার সাথে যেন খুব হেসে হেসে কথা বলছে, রাহুল বলল,
-নিশ্চয়ই ওর
প্রেমিকার সাথে।
প্রবীর বলল,
-হ্যাঁ তাই
হবে, কাল
সন্ধ্যাবেলা বেশ ভাল ড্রিংক করেছে সজল দা, তারপর লিসার সাথে ফোনে কথা বলেছে, লিসা অবশ্য
খুব ঠান্ডা মাথার মেয়ে। ‘হেসে হেসে বলছ কী হয়েছে তোমার সজল?
কেন এত ড্রিংক করছ?
আর কোরো না, এবার ছেড়ে দাও’। ‘সরি লিসা আমি এখনি ছেড়ে দিচ্ছি।’
সজল আবার হাতে স্কচের বোতল নিয়ে চলে এসেছে, রাহুল ওর হাত থেকে বোতলটা সরিয়ে নিয়ে আলাদা রেখে দিল। ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে ভাঙা ভাঙা বাংলায় লিসার কণ্ঠ শোনা গেল,
-আমাকে কথা
দাও, তুমি
আর ড্রিংক নেবে না?
-না লিসা আমি আর নেব না, তাছাড়া আমার বন্ধু কাম ভাই রাহুল
আমার হাত থেকে বোতলটা কেড়ে নিয়েছে।
আবার লিসার কণ্ঠ ভেসে এল,
-O great, give my thanks and
regards to him.
তারপর ফোন ছেড়ে বলল,
-কী হল! ঠিক
হয়েছে তোদের যাবার জায়গা?
-আরে তুই দেখ একবার, সব জায়গা দেখা যাবে না।
সজল বলল,
-কেন যাবে না?
প্রবীর বলল,
-মনকলিকে অত
স্ট্রেইন করাতে চাই না।
-ঠিক আছে দেখ রাহুল, যেসব জায়গা বেশি ফেমাস সেইখানে অ্যারেঞ্জ কর, আমারও খুব বেশিদিন আর থাকতে ইচ্ছে করছে না। I miss liza very much. এরপর আমরা দুজন আসব তখন সব দেখব। ছৌ নাচে লিসার আগ্রহ খুব।
মনকলি
লাফিয়ে উঠল,
-ঠিক তাই
আমারও ছৌ নাচের ইতিহাসের ওপর কাজ করার খুব আগ্রহ ছিল, কিন্তু এখন
তো প্রবীর আমাকে ইউএসএ-তে নিয়ে যাবে ট্রিটমেন্টের জন্য তাই ও আর
বেশি দেরি করতে চাইছে না।
-তাহলে চল কালকে প্রথম কোথায় যাওয়া যায় তাই দেখি।
-তাহলে প্রথমে চল, অযোধ্যা পাহাড়, এখানে ঘুরে দেখার জন্য সাতটি দ্রষ্টব্য জায়গা আছে।
রাহুল বলল,
-দেখা যাক
কোনখান দিয়ে আরম্ভ করলে সহজ হয়, অযোধ্যা পাহাড় দলমা পাহাড়ের অংশ বিশেষ, কাল চল, আমরা তাহলে
অযোধ্যা পাহাড়ে যাই। অয্যোধ্যা পাহাড়ের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে গাজাবুর পাহাড়।
সজল বলল,
-তাহলে গাজাবুর
পাহাড় দিয়ে আরম্ভ করা যাক। রাহুল সেটাই ভাল, কী সুচি তাই
তো?
-সে তোমার যা ইচ্ছে।
-এই তো মুশকিলে ফেলে দিলে, সব কেন আমার ইচ্ছে মতন হবে, তোমারও তো একটা মতামত থাকবে।
সবার কান বাঁচিয়ে সুচরিতা বলল,
-এটা তো
গ্রুপ ট্রিপ এখানে সবার মতে চলতে হবে যখন তুমি-আমি হানিমুনে যাব, তখন আমরা
নিজেদের ইচ্ছে মতন ঘুরব।
-ঠিক আছে তবে যা দেখার এখনই ভালভাবে দেখে নাও, তখন আমি
কতটা ঘরের বার হব তা জানি না।
-কেন?
-ঘরের মধ্যে সুচিকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে শুধুই আদর করব আর খাব।
সুচরিতার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল,
-ধ্যাৎ অসভ্য।
শেষ পর্যন্ত ঠিক হল প্রথম ট্রিপটা গজাবুরু পাহাড়ে যাওয়া হবে। শান্ত মনোরম পরিবেশ। এটির একটি স্বর্গীয় সৌন্দর্য আছে। যারা ট্রেকিং করে রোমাঞ্চকর কিছু আবিষ্কার করতে চান তাদের জন্য এই পাহাড় একটি সুন্দর আশ্রয়স্থল। পরেরদিন সকাল আটটার মধ্যেই বেরোনো হবে ঠিক হল। সজল বেশ ভালই ড্রিংক করেছে একটু ঝিম মেরে বসে আছে, রাহুল ওর চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছে। প্রবীর বলল,
-ও ড্রিংকসের
সাথে সমানে পকোড়া খেয়ে গেছে এখন লাঞ্চ খেলে বমি করতে পারে, চল ওকে ঘরে
শুইয়ে দিয়ে আসি, বিকেলে
ঘুম থেকে উঠে চা টোস্ট কিছু খেয়ে নেবে।
রাহুল আর
প্রবীর ওকে ওর রুমে পৌঁছে ভাল করে শুইয়ে দিল। সবারই স্ন্যাকস খেয়ে বিশেষ কিছু খিদে
নেই, গেস্ট
হাউসের লোকগুলো খুবই ভাল ওরাই সাজেস্ট করল, আপনারা এককাজ করুন এখন টকদই আর
স্যালাড খেয়ে নিন, রাতে
ভাল করে ডিনার করবেন,
ওদেরও মনে হল, ঠিকই
স্ন্যাকস খেয়ে পেটের অবস্থা খুবই খারাপ তাই সবাই লাঞ্চ স্কিপ করে দই খেয়ে নিল।
রাহুল বলল,
-সজলটা মানে
মানে বিয়ে করে নিলেই ভাল,
আমরা সবাই তো বিদেশে ছিলাম কারুর তো এত ড্রিংকসের অভ্যাস নেই, হ্যাঁ খেতাম
অল্পস্বল্প কখনো-সখনো কিন্তু এভাবে খেতাম না।
সজল আর
প্রবীরের রিসার্চের জায়গা একই ছিল রাহুলের ওদের থেকে দূরে ছিল। গেস্টহাউস থেকে
পরেরদিন গজাবুরু পাহাড়ে যাবার গাড়ি আর গাইডের ব্যবস্থা করে দিল।
গজাবুরুর স্বর্গীয় সৌন্দর্যে ওরা মুগ্ধ। গজাবুরুর পাহাড়ে ট্রেকিং ও ক্যাম্পিংয়ের দৃশ্য অসাধারণ, কিছু সময়ের জন্য যেন এক অনাবিল শান্তি প্রদান করল। ডুবে গেল পশ্চিম দিকের সূর্যটা নেমে এল শান্ত স্নিগ্ধ সন্ধ্যা। সন্ধ্যার আকাশে অসংখ্য তারার সাথে ঠান্ডা মৃদু বাতাস খুব সুন্দর এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে থাকল। পরেরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট খেয়ে ওরা তৈরি হয়ে নিল গেস্টহাউসে ফেরার জন্য।
সজল বলল,
প্রবীর চেঁচিয়ে বলল,
-হ্যাঁ এই যে দেখি,
বলে প্রবীর একটা ভ্রমণ গাইডের বই টেনে নিল।
-কোথায় কোথায় যাবে আগে ঠিক করে নাও, তোমাদের হাতে সময় কিন্তু সাতদিন।
-হ্যাঁ সাতদিনের মধ্যে তিন-চার দিন যেতে পারি, প্রতিদিন যাওয়া সম্ভব নয়।
এরমধ্যে ওরা দেখল, সজল ফোনে কার সাথে যেন খুব হেসে হেসে কথা বলছে, রাহুল বলল,
সজল আবার হাতে স্কচের বোতল নিয়ে চলে এসেছে, রাহুল ওর হাত থেকে বোতলটা সরিয়ে নিয়ে আলাদা রেখে দিল। ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে ভাঙা ভাঙা বাংলায় লিসার কণ্ঠ শোনা গেল,
আবার লিসার কণ্ঠ ভেসে এল,
তারপর ফোন ছেড়ে বলল,
সজল বলল,
-ঠিক আছে দেখ রাহুল, যেসব জায়গা বেশি ফেমাস সেইখানে অ্যারেঞ্জ কর, আমারও খুব বেশিদিন আর থাকতে ইচ্ছে করছে না। I miss liza very much. এরপর আমরা দুজন আসব তখন সব দেখব। ছৌ নাচে লিসার আগ্রহ খুব।
-তাহলে চল কালকে প্রথম কোথায় যাওয়া যায় তাই দেখি।
-তাহলে প্রথমে চল, অযোধ্যা পাহাড়, এখানে ঘুরে দেখার জন্য সাতটি দ্রষ্টব্য জায়গা আছে।
রাহুল বলল,
সজল বলল,
-এই তো মুশকিলে ফেলে দিলে, সব কেন আমার ইচ্ছে মতন হবে, তোমারও তো একটা মতামত থাকবে।
সবার কান বাঁচিয়ে সুচরিতা বলল,
-কেন?
সুচরিতার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল,
শেষ পর্যন্ত ঠিক হল প্রথম ট্রিপটা গজাবুরু পাহাড়ে যাওয়া হবে। শান্ত মনোরম পরিবেশ। এটির একটি স্বর্গীয় সৌন্দর্য আছে। যারা ট্রেকিং করে রোমাঞ্চকর কিছু আবিষ্কার করতে চান তাদের জন্য এই পাহাড় একটি সুন্দর আশ্রয়স্থল। পরেরদিন সকাল আটটার মধ্যেই বেরোনো হবে ঠিক হল। সজল বেশ ভালই ড্রিংক করেছে একটু ঝিম মেরে বসে আছে, রাহুল ওর চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছে। প্রবীর বলল,
গজাবুরুর স্বর্গীয় সৌন্দর্যে ওরা মুগ্ধ। গজাবুরুর পাহাড়ে ট্রেকিং ও ক্যাম্পিংয়ের দৃশ্য অসাধারণ, কিছু সময়ের জন্য যেন এক অনাবিল শান্তি প্রদান করল। ডুবে গেল পশ্চিম দিকের সূর্যটা নেমে এল শান্ত স্নিগ্ধ সন্ধ্যা। সন্ধ্যার আকাশে অসংখ্য তারার সাথে ঠান্ডা মৃদু বাতাস খুব সুন্দর এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে থাকল। পরেরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট খেয়ে ওরা তৈরি হয়ে নিল গেস্টহাউসে ফেরার জন্য।
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment