প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Wednesday, April 9, 2025

শেষ থেকে শুরু [পর্ব— ২৪] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক উপন্যাস/৩য় বর্ষ/৩য় সংখ্যা/১২ই বৈশাখ, ১৪৩২
ধারাবাহিক উপন্যাস
পারমিতা চ্যাটার্জি
 
শেষ থেকে শুরু
[পর্ব— ২]

"রাহুল ঘরে ঢুকে দেখলসুচরিতা সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছেরাহুল ঘুমন্ত সুচরিতাকে বুকের কাছে টেনে এনে জড়িয়ে নিলসুচরিতার আচমকা ঘুম ভাঙতেই দেখলও আষ্টেপৃষ্ঠে রাহুলের বাহুবন্ধনে বন্দি।"

 
পূর্বানুবৃত্তি ওরা আড্ডা দিচ্ছিল, এরমধ্যে দেখল সজল ফোনে হেসে হেসে কথা বলছে। ওরা খেয়াল করল সজল লিসার সঙ্গে কথা বলছে এবং ফোনেই আর ড্রিংক না করার কথা বলল। এদিকে ওদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ওরা গজাবুরু পাহাড় দেখে মুগ্ধ। তারপর…
 

পরেরদিন ওরা সকালে ফিরে এল, গেস্টহাউসে। আসার পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ওদের মুগ্ধ করল, সজল বলল,
-অসাধারণ তুলনা হয় না। বিয়ের পর আমি লিসাকে নিয়ে এখানে হানিমুনে আসব।
রাহুল বলল,
-আজকাল বিদেশে বেড়াতে যাওয়া একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে অথচ দেখ আমাদের এই ভারতবর্ষে কত সুন্দর সুন্দর বেড়ানোর জায়গা।

 
মাঝখানে একটা সুন্দর মনোরম জায়গা দেখে ওরা ফটো তুলল, রাহুল আর সুচরিতা অন্তরঙ্গ কিছু ফটো রাহুল আড়ালে গিয়ে তুলল, আলতো করে সুচরিতার গালে নিজের ঠোঁটটা ছোঁয়ালো, সুচরিতা কপট রাগের ভাঙ্গিতে বলল,
-কী হচ্ছে কী সবাই দেখবে যে
সজল ওদের কথা শুনে বলল,
-না আমরা কেউ দেখিনি, চোখ বুজে আছি।
প্রবীর মনকলিকে নিয়ে ব্যস্ত, বারবার জিজ্ঞেস করছে ব্যাথাটা কমেছে কিনা? শেষ পর্যন্ত একটা ওষুধ মনকলিকে খেতে হল ব্যথা কমাবার জন্য। তারপর আবার চলল, পাহাড়িপথ দিয়ে, এঁকেবেঁকে ক্রমশ নীচেরদিকে নামছে। মাঝে মাঝে তিরতির করে পাহাড়ের পাথর কেটে ঝর্নার জল চঞ্চল গতিতে নীচে পড়ছে। আস্তে আস্তে রোদের তীব্রতা কমে আসছে, সূর্য দেব পশ্চিম পাহাড়ের দিকে ঢলে পড়ছে, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ওরা গেস্টহাউসে এসে নামল। বাই বেশ ক্লান্ত। ফ্রেশ হয়ে নিয়ে চা বিস্কিট খেল, তাড়াতাড়ি ডিনার করে নিয়ে পরেরদিন বড়ন্তি জলাধার দেখতে যাওয়া হবে।
 
ডিনারে মেনু খুব সিম্পল দেওয়া হল, গরম ভাত ডাল আলু ভাজা আর পাতলা মুরগির ঝোল আজ ওদের ডিনারের যাবার সময় প্রিন্সিপাল প্রমোদবাবুকেও ডেকে নিল একসাথে খাওয়ার জন্য। নটার মধ্যে সবাই ডাইনিং হলে চলে গেল, স্যারও এসে গেলেন ওদের আমন্ত্রণ পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছেন, বারবার জানালেন। পরেরদিন বড়ন্তি যাবার জন্য বারবার বলতে লাগল সবাই, স্যার বললেন,
-আরে, আমার বয়স হয়নি? তোমরা সব ইয়ংম্যান তোমাদের সাথে কি আমি পাল্লা দিতে পারি?
উনি বড়ন্তি যেতে কিছুতেই রাজি হলেন না। খাওয়ার পর স্যারকে রাহুল আর সজল দুজনে মিলে এগিয়ে দিতে গেল, মনকলি আর প্রবীর ঘরে চলে গেল, এত ধকলের পর মনকলির শরীর একদম ভাল নেই। প্রবীর বলল,
-সেরকম হলে আমরা কাল বড়ন্তি যাব না।
মনকলিও বলল,
-সুচি তুই এসে আমাকে গল্প বলিস তোর গল্পে আমি বড়ন্তি দেখে নেব, আমারও মনে হচ্ছে আমি যেতে পারব না। মনকলি প্রবীরকে বলল,
-তুমি ওদের সাথে চলে যাও না, আমার জন্য তুমি কেন মিস করবে?
প্রবীর বলল,
-তোমাকে ছেড়ে গিয়ে কি আমি ওখানে শান্তি পাব? আর না, আগে যা হয়েছে তা হয়েছে এখন আর তোমাকে একলা কোথাও রেখে আমি বেড়াতে যাবার কথা ভাবতেও পারি না।
মনকলিকে নিয়ে প্রবীর ওদের রুমে গিয়ে যত্ন করে শুইয়ে গায়ে চাপা দিয়ে দিল। মনকলি ঘুমিয়ে পড়ল, প্রবীর কম্পিউটার নিয়ে বসল কত তাড়াতাড়ি ওখানে পৌঁছাতে পারে, বেস্ট অঙ্কোলজিস্ট ওখানে কে আছে, ইত্যাদি। ও মনে মনে ভাবছে ওখানে গিয়ে পৌঁছাতে পারলেই মনকলির ভাল ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করা যাবে আর তার মনকলি অনেকটা ভাল হয়ে যাবে। যদিও মনের দিক থেকে মনকলি খুব ভেঙে পড়েছিল, প্রবীরের প্রথম দিকের ব্যবহারে মোটেও সুবিচার ছিল না।
 
প্রবীরও ভাবছে প্রথম দিক থেকে সে যদি এরকম কেয়ারিং হত তাহলে হয়তো মনকলির শরীর এতটা ভেঙে পড়ত না। তাকে সাহস দেবার পরিবর্তে, তাকে একা রেখে নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। পারত না কি একটু সমুদ্রের ধারে বেড়াতে নিয়ে যেতে অথবা পাহাড়ের কোলে কোন ছোট ডাকবাংলোয় ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে অথবা অনেকটা আদর ভালবাসা সঙ্গ দিয়ে ওর পরমায়ুটাকে আর একটু এগিয়ে নিয়ে যাবার কথা ভাবতে! ছেলেরা সত্যি ভারি স্বার্থপর হয়, যতদিন মনকলি সুন্দরী ছিল তখন ওকে আদর আর ভালবাসায় ভাসিয়ে দিত, যে মুহূর্তে ওর কেমো দেওয়া শুরু হল, মাথার চুল উঠে গেল, পরচুলো ব্যবহার করত, তখনই প্রবীর দূরত্ব বাড়াতে আরম্ভ করল অথচ সেইসময় মনকলির তাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল।
 
সুচরিতা ঘরে এসেই প্রথমে শুয়ে পড়ে ঘুমিয়ে পড়ার ভান করল, এদিকে রাহুল আর সজল দুই বন্ধু হাঁটতে হাঁটতে বহুদূর চলে গেছে। সজল রাহুলকে বলছে,
-লিসাকে যদি তার বাড়ি মেনে নিত তাহলে তার বিয়েটাও ঘটা করে হতে পারত
রাহুল বলল,
-তুই আয়-না লিসাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি, দেখবি আমরাই অনেক ঘটা করে তোর বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি।
-আসলে কী বলত! বাবা-মা বেঁচে থাকতেও এরকমভাবে ওদের বাদ দিয়ে অনুষ্ঠান করতে ভাল লাগে না রে!
-আমি বুঝতে পারছি সজল তোর মনের অবস্থাটা, কিন্তু কী করা যাবে বল! তোর ভাইবোনেরাও যদি একটু বোঝাতো বাবা-মাকে—
-আরে, মা কোন ফ্যাক্টর নয়, মাকে আঙুল নেড়ে বাবা যা বোঝাবে মা তাতেই ঘাড় নাড়ে, মায়ের নিজস্ব কোন বক্তব্য নেই, বুক ফেটে গেলেও মায়ের মুখ ফুটবে না। মাঝে মাঝে মায়ের জন্য খুব মন খারাপ করে জানিস, একটা মানুষ সারাজীবন মুখ বুজে কাটিয়ে দিল সব অন্যায় মেনে নিয়ে নীরবে শুধু চোখের জল ফেলে।
রাহুল বলল,
-আমার মা-ও একরকম তাই, তবে মা খুব জেদি ছিলেন, জেদ করে শান্তিনিকেতনে গিয়ে থাকলেন, আমিও থাকতাম মায়ের সাথে, ওখান থেকেই তো আমার রবীন্দ্রসংগীত শেখা আরম্ভ। আমার গানের প্রথম শিক্ষাগুরু তো আমার মা-ই।
হঠাৎ রাহুল বলল,
-চল এবার রুমে যাই
-হ্যাঁ চল।
রাহুলের মনে হল অনেকক্ষণ সে সুচরিতাকে একলা রেখে এসেছে। রাহুল ঘরে ঢুকে দেখল, সুচরিতা সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছে, রাহুল ঘুমন্ত সুচরিতাকে বুকের কাছে টেনে এনে জড়িয়ে নিল, সুচরিতার আচমকা ঘুম ভাঙতেই দেখল, আষ্টেপৃষ্ঠে রাহুলের বাহুবন্ধনে বন্দি। সুচরিতা আদুরে গলায় বলল,
-ও এতক্ষণে আসা হল, আমি কতক্ষণ ধরে জেগে অপেক্ষা করছিলাম জানো?
-সরি সরি লক্ষ্মীমেয়ে রাগ করে না।
তারপর কোথায় রাগ আর কোথায় কী? দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে যেন হারিয়ে গেল বহুদূরে, কোন সুদূর প্রান্তে। আশেপাশে আর কেউ নেই শুধু দুজনে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়ল।
 
 
ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)