প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Wednesday, April 9, 2025

শেষ থেকে শুরু [পর্ব— ২৫] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক উপন্যাস/৩য় বর্ষ/৪র্থ সংখ্যা/১৯শে বৈশাখ, ১৪৩২
ধারাবাহিক উপন্যাস
পারমিতা চ্যাটার্জি
 
শেষ থেকে শুরু
[পর্ব— ২]

"সুচরিতা তুমি জানতেও পারবে না তুমি আমার এককোণে এক নীরব স্মৃতি হয়ে থেকে যাবেতোমাকে কিছুতেই ভুলে থাকতে পারব না কিন্তু আজকের দিনে আমি লিসাকে ভালোবাসি এটাও যেমন সত্যিসব সত্যির মাঝে এটাও পরম সত্যি যে তুমি আমার নীরব ভালোবাসাযা তুমিও কোনদিন জানতে পারবে না।"


পূর্বানুবৃত্তি একটা সুন্দর মনোরম জায়গা দেখে ওরা ফটো তুলল, রাহুল আর সুচরিতা অন্তরঙ্গ কিছু ফটো রাহুল আড়ালে গিয়ে তুলল, আলতো করে সুচরিতার গালে নিজের ঠোঁটটা ছোঁয়ালো। এদিকে প্রবীর মনকলিকে নিয়ে ব্যস্ত, বারবার জিজ্ঞেস করছে ব্যাথাটা কমেছে কিনা? শেষ পর্যন্ত একটা ওষুধ মনকলিকে খেতে হল ব্যথা কমাবার জন্য। তারপর…
 

পরেরদিন ভোরবেলা সুচরিতা চোখ মেলে দেখল, রাহুল তাকিয়ে আছে, যেই সুচরিতাকে চোখ মেলতে দেখল, সঙ্গে সঙ্গে ঘুমের ভান করে ওকে কাছে টেনে নিল, সুচরিতা বলল,
-খুব হয়েছে আমি দেখেছি তুমি মোটেই ঘুমিয়ে নেই, ছাড়ো আমাকে আজ বড়ন্তি যাবার কথা
-সে অনেকরকম কথা থাকে, কিন্তু আমাদের নতুন বিয়ে হয়েছে সেটাও তো একটা কথা
সুচরিতা হেসে রাহুলের বুকে কিল মারতে মারতে বলল,
-বাবা কী দুষ্টু হয়েছ তুমি, আগে তো কোনদিন বুঝতে পারিনি


রাহুল গান গেয়ে উঠল,
-সে তুমি যা খুশি তাই বলো, আমার সুচি কাছে এস
বেশ কিছুক্ষণ পর ওদের দরজায় ধাক্কা পড়ল,
-রাহুল ওঠ এবার, পরে প্রেম করিস এবার এখন ওঠ
-এই দাঁড়া আসছি এখন তৈরি হয়ে।
আধঘন্টার মধ্যে রাহুল আর সুচরিতা তৈরি হয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে চলে এল, ওদের দেখে সজল বলল,
-তোদের দেখে আমি লিসা খুব মিস করছি
-সত্যি বিয়েটা করে নিলেই পারতিস আসার আগে
-হ্যাঁ রে তাই ভেবেছিলাম কিন্তু বিয়ের কথা বলবার জন্য যদি আমি যাই তাহলে যেন আমি না যাই, আমার মনে হয় কী জানিস রাহুল, বাবারও হয়তো খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু নিজের ইগোর কাছে হার মানবেন না
-যাকগে ও নিয়ে আর ভাবিস না যখন বিয়ে করবি জানাস আমরা চলে আসব ঠিকই
-না রে কলকাতায় এনেই বিয়ে করব, দেখি একবার নিজে দেখা করে বাবার মান ভাঙাবার চেষ্টা করি, যতই হোক বাবাই তো কত আর রেগে থাকবেন বল?
সুচরিতা বলল,
-মনকলিরা কই? ওরা যাবে না?
-না সে কথা তো বলাই হয়নি, মনকলির কাল ঘুরে এসে শরীরটা একদম ভালো নেই তাই ওরা এই ট্রিপটা যাবে না, একটু বিশ্রাম নিলে আশা করি পরেরটা যেতে পারবে।
প্রবীর ক্রমশ চিন্তিত হয়ে পড়ছে, ওর মনে হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মনকলিকে নিয়ে বিদেশে চলে যেতে পারে, ওর কাছে এক এক ঘন্টা মনে হচ্ছে অনেক। কাল ওরা ফিরলে ওদের বলেই চলে যেতে হবে, আর দেরি করা ঠিক হবে না, এই চিন্তা করে ও মনকলিকে বলল,
-মন আমার মনে হচ্ছে কালই আমরা কলকাতা ফিরে যাই, ভিসাও আমাদের হাতে এসে গেছে টিকিটও আমাদের ওপেন আছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদেশে পারি দেব, তোমার শরীরটা ভালো লাগছে না না?
-ভালো তো লাগছে না সমানে ওষুধ খেয়ে ব্যথা কমিয়ে রাখছি, তার চেয়ে চলো এখন কলকাতায় গিয়ে কলকাতার ডাক্তার দেখিয়ে নি তারপর বাইরে যাবার কথা ভাবা যাবে, খরচের কথাটাও তো ভাবতে হবে?
-না কিছু ভাবতে হবে না, আমি তো কাজ পেয়ে গিয়েছি, তুমি এত চিন্তা কোরো না।
এদিকে ওরা বড়ন্তি যাবার জন্য ব্রেকফাস্ট খেয়ে প্রস্তুত হয়ে নেমে এল, যাবার আগে সুচরিতা বলল,
-যাবার আগে একবার মনকে দেখে যাই
তখন সজল ও রাহুলও বলল,
-হ্যাঁ চলো, কিন্তু বেশি দেরি করা যাবে না।
মনকলিকে আশ্বাস দিয়ে সজল বলল,
-পরের ট্রিপটা আবার আমরা সবাই মিলে যাব
সাথে সাথে প্রবীর বলল,
-না আমরা ভাবছি কালকেই চলে যাব
তারপর ওদের কাছে এসে প্রবীর বলল,
-ওর শরীরটা একদম ভালো বুঝছি না, তাই কালকেই কলকাতা রওনা হব। ওখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাইরে চলে যাব
-ও তাহলে আমিও কাল ওদের সাথে চলে যাই রে রাহুল, বন্ধুকে বিপদের মধ্যে একা ছেড়ে দেওয়ার মধ্যে কোন লজিক নেই, এখানে আবার আাসব রাহুল, অনেক স্মৃতি রেখে যাচ্ছি, আসতে তো হবেই, এবার লিসাকে নিয়ে আসব
রাহুল বলল,
-হ্যাঁ নিশ্চয়ই আমরা অপেক্ষায় থাকব
-পারলে আজ রাতেই ফিরতে হবে নয়তো কাল ওদের সাথে ফিরতে পারব না
রাহুল সুচরিতা মুখ কালো করে বলল,
-আমাদের মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে
-না না কোন মন খারাপ নয়, বললাম যে সামনের বার লিসাকে নিয়ে আসব, আশা করব লিসাও মা হয়ে যাবে, সন্তান সমেত লিসাকে দেখলে বাবা আর রাগ করে থাকতে পারবেন না আর শিশু কোলে সুচরিতাকেও দেখতে চাই।
সুচরিতার মুখটা লাল হয়ে গেল।

সজল মনে মনে ভাবতে লাগল, সুচরিতা তুমি জানতেও পারবে না তুমি আমার এককোণে এক নীরব স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে, তোমাকে কিছুতেই ভুলে থাকতে পারব না কিন্তু আজকের দিনে আমি লিসাকে ভালোবাসি এটাও যেমন সত্যি, তুমি আমার জীবনের অন্যতম প্রিয় বন্ধুকে বিয়ে করেছ, সেটাও তেমনি সত্যি, সব সত্যির মাঝে এটাও পরম সত্যি যে তুমি আমার নীরব ভালোবাসা, যা তুমিও কোনদিন জানতে পারবে না।

রাহুল সুচরিতা আর সজল তিনজনে মিলে রওনা হল বড়ন্তির দিকে। বড়ন্তি এখনও অনেকের কাছে অজানা রাস্তা। রাঙমাটির রাস্তার দুধারে কৃষ্ণচূড়া আর লাল পলাশের সারি। মাঝখান দিয়ে চলছে ওদের গাড়ি। তিনঘন্টা সময় লাগবে। ওদের বার হতে একটু সময় বেশি লাগল, আসলে আচমকা মনকলিরা ড্রপ করে যাওয়ায় সবাই একটু চুপচাপ হয়ে গেছে।

সুচরিতা ভাবে, কে জানে আর মনকলির সাথে দেখা হবে কি না? মাঝখানে ও আর রাহুলও ওর সাথে খুব একটা ভালো ব্যবহার করেনি, মেয়েটা দুঃখও পেয়েছে অনেক। প্রেমের জীবনে সজলদাকে খুব ভালোবাসত কিন্তু সজলদা তার মর্যাদা দেয়নি, রাহুল ভালোবাসত কিন্তু রাহুলকে ও নিজেই অপমান করে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। বাবা-মা দুজনেই চলে গেছে, দাদা ট্রেনে উঠিয়ে দিল বোনটাকে একটা অজানা জায়গায় একা ছেড়ে দিল, যে বোনটার এত বড় একটা অসুখ, এখনও কোন খবর নেয়নি দাদা, মনকলিই বলছিল,
-তোর জ্যাঠতুতো দাদারা এসে দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে দিয়ে গেল আর আমার নিজের দাদা একবার কেমন আছিস বলে ফোনও করেনি।
প্রবীর হয়তো ভালোবাসত কিন্তু সেসময় নিজের ব্যস্ত ও আনন্দের জীবন ছেড়ে ওকে সময় দেয়নি, অনেক মেয়ে বন্ধুও ছিল প্রবীরের। আসার সময় নেহাত বারণ করতে হয় তাই করেছিল, এখন অবশ্য মনকলিকে বাঁচাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। নিজের জীবনযাত্রা পুরো বদলে ফেলেছে। দেখতে দেখতে তিনঘন্টা পথ কেটে গেল,
-রাহুল তিনঘন্টা পথ পার হয়ে আমরা বড়ন্তিতে কেমন নিশ্চুপ হয়ে চলে এলাম
সজল বলল,
-আসলে আচমকা মনকলিরা না আসায় একটা নিঃশব্দ ছায়া পড়েছে আমাদের মধ্যে
রাহুল বলল,
-সজল তুই কি ভুলে গেছিস? সুচরিতাও মনে হয় এই মুহূর্তে মনে করতে পারছে না আমাদের স্বয়ং রবি কবি কী বলে গেছেন এবং তার চেয়ে সত্য আর নেই
সুচরিতা তার মিষ্টি নরম গলায় গেয়ে উঠল,
-আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। / তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।
 
ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)