রম্যরচনা
প্রদীপ কুমার দে
অভিনেত্রী
ঝিঙা
ঝিঙাফুল
সিরিজ— ১৫
"পাড়ার অনেক মেয়েকেই ওই রাকেশ প্রোডিউসার স্ক্রিন টেস্ট আগেও করেছেন। সারারাত ধরে টেস্ট করে ছেড়ে দেন।ভদ্রলোক! পয়সার জোরে আর বিরাট চক্রের ক্ষমতায় ওর গায়ে কেউ হাত লাগাতে পারেনি। উনি পুলিশ আদালত আর নেতাদের অন্নদাতা। সোনম ওর মক্ষীরানি।"
অফিসে আছি, মোবাইলে
ঝিঙাফুল ফোন করেছে। আমি একটু অবাকই,
-কী ব্যাপার,
কী হল?
-এই জানো তো, একটা ঘটনা
ঘটে গেছে। তুমি একবার ফোন করে ব্যাপারটা ফাইনাল করে দেবে?
-কিন্তু আমি
তো কিছু বুঝতেই পারলাম না।
-তুমি না কী? নিজের বউয়ের
কথাও বোঝো না? আচ্ছা
বাবা তাড়াতাড়ি বাড়ি এসো।
কেটে দিল।
ঠিক বুঝলাম না কী হয়েছে? ঝামেলার
ব্যাপারস্যাপার নয়তো?
ছুটি নিয়েই ট্যাক্সি ধরে সোজা এক ছুট বাড়িতে। বেল টিপে দিলাম। ভিতর থেকে ঘুমের
গলায় ঝিঙাফুল অস্ফুটে,
-এখন আবার
কে বেল টেপে?
-আমি
স্বামী!
-এ-মাহ্ এই দুপুরে তুমি? অফিস ছেড়ে
বাড়িতে কেন?
মাথা বিগড়েই
ছিল ফোন পেয়ে, এখন
বাড়িতে ঢুকেই বুঝে গেলাম ভুলটা আমারই। রেগে তাই বলেই দিলাম।
-দুপুরবেলা
রস বেড়ে গেছে, তাই
কাজটাজ ফেলে কমাতে এলাম।
ঝিঙাফুল তার
অসংলগ্ন শাড়ি টেনে নিল বুকে, ইঙ্গিত এমনই যে আমি তো আর তোমার অপেক্ষায় বসে নেই, উত্তরটাও
সেইরকমই,
-রাগ দেখিয়ে
কাজ হবে না কিন্তু? বলো
ফোন পেয়ে এসেছ। সে তো সন্ধেতে এলেই হত। তোমার ধান্দা কী?
-ফোন কেন
করলে?
-ওই একটা
সিনেমার অফার পেলাম তাই ভাবলাম দেরি করলে যদি হাত ফস্কে যায় তাই তোমাকে জানিয়ে
এখনই রাজি হয়ে যাই। তুমি
বললে একটা ফোন করে দিলেই আজকেই স্ক্রিনিং টেস্টটা হয়ে যেত।
তাড়াতাড়ি নায়িকা হতে চাই যে...
-বাবা-রে? এসব
এত হল কবে? এক্কেবারে
সিনেমায়? তাও
আবার নায়িকা?
অবাক হয়ে বড়
বড় চোখ তুলে তাকাল বউ,
গা থেকে শাড়িটা ফেলে দিল,
-এই তুমি
আমায় কী ভাবো বলো-তো? আমাকে ভাল
করে কোনদিন দেখেছ? সহজে
পেয়ে গেছ তাই আমার রূপ-যৌবনের কোন দাম দাওনি তুমি। তোমরা পুরুষরা
এরকমই। বউদের কেনা গোলাম করে রেখে দাও তোমরা। ইজ্জত দাও না যে তারও একটা রূপ আছে, যৌবন বা
নিজস্ব ইচ্ছে অনিচ্ছা আছে।
-কী হয়েছে আমায় খুলে বলো-তো? কেউ নিশ্চয়ই
তোমায় তাতিয়েছে?
-সে-তো বটেই। আজ ওই পাশের সোনাম বৌদি এসেছিল বাড়িতে। ও নাকি আমায় ফলো করত, বহুদিন ধরে
আমাকে দেখছে। ওর বর তো রাকেশ সিনেমার প্রোডিউসার। ওই রাকেশ ওর বউকে দিয়ে অফার
পাঠিয়েছে।
-উরি বাপ-রে? তারপর?
-আরে সোনম কী সুইটি মহিলা। ওই তো আমাকে বললে একটা স্বামী পুরুষের হাতে নিজের এত সুন্দর
চেহারাটার বলি দিচ্ছ? অনেক তো দিলে এবার নিজের জন্য কিছু করো। কেরিয়ার বানাও
লাইফটা এনজয় করো। বেরিয়ে এসো, আমার মতো লাইফস্টাইল তৈরি করো। নিজের
আকর্ষণীয় সেক্সি চেহারাটা একবার দেখো, সিনেমায়
তোমায় লুফে নেবে।
-বাহ্ বাহ্ কী ভাল বন্ধু পেয়েছ
তুমি? তারপর?
-বললে রাজি থাকলে এখনই ফোন করে জানাতে। আজ রাত্রেই স্ক্রিন
টেস্ট হয়ে যেতে পারে। তাহলে কাল থেকেই কাজ শুরু করা যাবে। তাই তোমায় ফোন করেছিলাম
আনন্দে। তুমি বললেই সব হয়ে যাবে...
-খুব ভাল।
পাড়ার অনেক মেয়েকেই ওই রাকেশ প্রোডিউসার স্ক্রিন টেস্ট আগেও
করেছেন। সারারাত ধরে টেস্ট করে ছেড়ে দেন। ভদ্রলোক! পয়সার
জোরে আর বিরাট চক্রের ক্ষমতায় ওর গায়ে কেউ হাত লাগাতে পারেনি। উনি পুলিশ আদালত আর
নেতাদের অন্নদাতা। সোনম ওর মক্ষীরানি। টোপ ফেলেন। আবার
কিছুক্ষেত্রে নিজেই চার হয়ে পুরুষের শয্যাসঙ্গিনীও হন, কাজ হাসিলের
জন্য। তা তুমিও ওর ফাঁদে পড়লে?
ঝিঙাফুল আরো
বড় বড় চোখ করে আমার কাছে চলে এল, আমি অফিস থেকে ফিরে ওই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি, ও আমাকে
জড়িয়ে ধরল,
-এই দুষ্টু, তুমি এত
কিছু কী করে জানলে?
আমি চুপ।
ঝিঙাফুলের ইঙ্গিত বুঝলাম। ও আমাকে জড়িয়ে ধরে টান মারল,
-তুমি আমায়
এমন ভাবো? আমি
এই ব্যাপারে আজই সব জানলাম উর্মি বৌদির কাছ থেকে। তুমি তো আমায় কোনদিন এই গল্প
বলোনি? ব্যাপারখানা
কী?
-আমি কিন্তু
রাস্তার জামাকাপড় পরে আছি...
কে শোনে কার
কথা! উত্তেজনা এমনই। ও ভীষণ ভীষণ উত্তেজিত, এটা আমি ওর স্বামী হিসেবে খুব ভাল
বুঝি।
সমাপ্ত
ভাল লাগছে। প্রশংসা করে ছোট করতে চাই না সম্পাদক মহাশয়কে, ওনার সহযোগিতার ফল আমার এই চেষ্টা আজ সফল হল। সকলকে আমার শ্রদ্ধা।
ReplyDeleteসকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই
ReplyDelete