চাকুরে বউ | ঝিঙাফুল সিরিজ— ১৬ | প্রদীপ কুমার দে

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/রম্যরচনা/৩য় বর্ষ/৪র্থ সংখ্যা/১৯শে বৈশাখ, ১৪৩২

রম্যরচনা

প্রদীপ কুমার দে

 

চাকুরে বউ

ঝিঙাফুল সিরিজ— ১৬

"-কেন কীট কিনে জানলুম। এখন মনে হচ্ছে কনসিভ করে নেব। তুমি কী বলো?
রাগে গা জ্বলে উঠল। মনে হলো আজই ঝিঙাফুলকে খুন করে দিই।"

অফিস থেকে ফিরে ঘেমেনেয়ে একশা! এত গরম?
-বাপরে! আর পারা যাচ্ছে না গো…
-এসি লাগিয়ে নাও!
-তা যা বলেছ! তবে এখনই হবে না আরো কিছু পরে।
-কেন অসুবিধা কী?
-তুমি না একটা বোকা বউ আমার। ফ্ল্যাটের ইন্সটলমেনটটা আগে শেষ হতে দাও। তারপর তোমার ইস্যুর ব্যাপারে খরচ অনেক… ওইগুলো তো আগে মানে প্রায়োরিটি ম্যাটার…

 

ঝিঙাফুলের চোখে অবাক করা দৃষ্টি,

-বাপরে বাপ! তোমার মাথায় আসেও সব... তোমায় অত গভীরে যেতে হবে না। আর ফাইন্যান্স তো আমি করব।

স্মাইল হার্ট অ্যাটাক হল আমার যেন! ও কী বলছে? ফাইন্যান্স? আমার চোখ ছানাবড়া। ঝিঙাফুল বুঝে নিল,

-ঘাবড়াবার কোন কারণ এখনও ঘটেনি। আগামী সোমবার টের পাবে।

-সোমবার কী হবে? তুমি কি লটারি পাচ্ছ?

ঝিঙাফুল আমার গায়ে ঘেঁষে বসল। আমার মুখে গালে আঙুল দিয়ে সুড়সুড়ির আদর চালালো,

-তার থেকেও বেশি সাব! আমি চাকরি পেয়ে গেছি। মাস কাটলেই মাহিনা পঁচিশ হাজার!

দ্বিতীয় অ্যাটাক না হয়ে যায়। বুক ধড়ফড় করছে যেন! এ কী শুনছি?

ঝিঙাফুল সব বোঝে, বুকে হাত বুলিয়ে দিল,

-আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হবে না। আমি তোমাকে ভালোবাসি না? তোমায় আমি আগলে রাখবো।

-সে নাহোক হল, কিন্তু এত সহজে কী চাকরি পেলে তুমি? কোথা দিয়ে হল? কে করে দিল? কোন অফিসে? কী কাজ? নোংরামি নয়তো?

আমি লাফিয়ে উঠলাম। ঝিঙাফুল আমাকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। নিজে পাশে আধশোয়া অবস্থায় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জানালে,

-একেবারেই অসুস্থ তুমি। এত অধৈর্য কেন? আমি তো তোমায় সব বলছি না কি?

-হ্যাঁ হ্যাঁ তাড়াতাড়ি বলো আমি আর থাকতে পারছি না।

-জানি তো। এইজন্য আসল কাজেও তুমি ভীষণ তাড়াতাড়ি করো…

-এখন ওসব বাজে কথা...

ঝিঙাফুল কত আদরই না করল যেমন আমি করি, তেমনটি আজ ও করল, চাকরি পাওয়ার আনন্দে বোধহয়।

-বলাইচাঁদের অফিসে রিসেপশনিস্ট হচ্ছি। ক্লায়েন্টদের দেখতে হবে। ওদের একটু খুশি করে দেওয়াই আমার মূল কাজ। বলাইদা বললে তোমার যা রূপ ওতেই হবে। কাজ ফাইনাল। আমি দেখে এলাম।

-সব ফাইনাল হয়ে গেছে? তারপর আমায় জানাচ্ছ? তা ভাল!

-আরে তুমিই তো আমার সব—

বলেই চকাম্ করে একটা হামি খেয়ে নিল যাতে আমি জলে গল না থুরি গলে জল হয়ে যাই। বউ অন্যকে খুশি বিলাতে যাবেন তাই আগে আমায় খুশি করে দিচ্ছেন।

-বসকেও খুশি করতে হবে কিন্তু, পঁচিশ হাজার বার...

-সে-তো তোমাকেও করতে হয়। মেয়েরা কিশোরী হলেই ছেলেরা চায়। যাক সেসব কথা, আমি অন্য একটা বিপদে পড়েছি, কী করে যে অফিসে জয়েন করব?

-কেন আবার কী?

-তোমায় তো বলিইনি। আমার দুমাস।

আমি লাফিয়ে উঠলাম। বউ চেপে রাখল। রাগে গর্জে উঠলাম,

-এটাও জানাওনি। কী করে জানলে?

-কেন কীট কিনে জানলুম। এখন মনে হচ্ছে কনসিভ করে নেব। তুমি কী বলো?

রাগে গা জ্বলে উঠল। মনে হলো আজই ঝিঙাফুলকে খুন করে দিই।

-ছি ছি তুমি এত নোংরা?

ঝিঙাফুল আমাকে জাপটে ধরল,

-খুব রাগ হয়েছে না? জানো আমি তোমায় একমিনিটে ঠান্ডা করে দিতে পারি। আমি শুধু দেখছিলাম তুমি আমায় কীভাবে নাও। কাল একটা কীট কিনে এনো। মিথ্যা কথাও বোঝে না কার সাথে মজা করব?

ঝিঙাফুল অঝোরে কাঁদছে। আমার ভুল ভেঙে গেল আমি ওকে অনেক কষ্টে টেনে কাছে নিলাম ওর চোখ মুছিয়ে দিলাম,

-তুমি সত্যিই...

বউ জাপটে ধরে আমার বুকে অনেক কিল মারল,

-এখনও নিজের বউকে চেনে না?

 

সমাপ্ত