প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা ~ ~ ~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

শারদ | উৎসবের অঙ্গীকার

  বাতায়ন/শারদ/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন , ১৪৩২ শারদ | সম্পাদকীয়   উৎসবের অঙ্গীকার "নারীতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে পুরুষতন্ত্...

Monday, September 15, 2025

শিউলির গন্ধ মাখা স্মৃতি | মৌমিতা সরকার

বাতায়ন/শারদ/অন্য চোখে/৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন, ১৪৩২
শারদ | অন্য চোখে
মৌমিতা সরকার
 
শিউলির গন্ধ মাখা স্মৃতি

"আমি ছুটে যেতাম ঠাকুরদালানে। ভাবতামআর কতদিন বাকিনিজের মনে মনে হিসাব কষতাম। তবে তখন স্কুলে ষাণ্মাসিক পরীক্ষা চলত পঞ্চমী বা তার আগ পর্যন্ত। পড়াশোনায় মন বসত নারাগ করে দুগ্গামাকে মনে মনে বলতাম, “তুমি আসছকিন্তু আগে থেকে ছুটি দিতে পার না?”


শারদোৎসব মানেই বাঙালির জীবনে আনন্দের এক বিশেষ অধ্যায়। আমার ছোটবেলার পুজো সেই আনন্দকে আজও রঙিন করে রাখে। পূজোর শুরু হত কাঠামো পুজো দিয়ে। রথের দিন থেকে অধীর আগ্রহে লক্ষ্য করতাম, কেমন করে মৃৎশিল্পীর নিপুণ হাতে গড়ে ওঠে মায়ের মূর্তি।

 
আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে, আমাদের বড় বাড়িতে। বাড়ির সামনেই ছিল ফুলকাকুর সযত্নে লালিত সুন্দর বাগান। সেই বাগানের পাশেই উঠত পুজোর প্যান্ডেল। তখন পুরো গ্রামে একটি মাত্র পুজো হত, আর মূর্তি গড়া শুরু হত কালিমন্দিরে। ছোট ছিলাম বলে দাদুর হাত ধরে গিয়ে দেখতাম মৃন্ময়ীর রূপের উন্মোচন। পরে, যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, তখন আমাদের ঘরের ঠিক সামনের রাস্তাতেই ঠাকুরদালান তৈরি হলো। কী আনন্দই না হয়েছিল তখন! সকালবেলা চোখ খুলেই ঠাকুর না দেখলে মন খারাপ হয়ে যেত।
 
মহালয়ার স্মৃতি আজও যেন চোখের সামনে ভাসে। সেদিন ভোরে বাড়ির সকলে সাড়ে তিনটেয় উঠে স্নান সেরে রেডিয়োর সামনে বসে পড়ত। আমি ছোট বলে মা স্নান করতে দিতেন না, বরং আগের বছরের নতুন জামা পরে বসতাম সবার সঙ্গে। ঠাকুমা উঠোনে আলপনা দিতেন, আমি বাগান থেকে কুড়িয়ে আনতাম শিউলি। সেই শিউলিগুলো আলপনার চারপাশে সাজিয়ে দিতাম। রেডিয়োর ধ্বনির সঙ্গে ঠাকুমার পূজা— গঙ্গাজল ছিটানো, ফুল দিয়ে প্রণাম করা, আজও মনে করলেই গা শিউরে ওঠে। মনে হত, যেন সত্যিই রেডিয়োতেই দুর্গা-মার আবির্ভাব ঘটেছে।
 
মহালয়া শেষ হলে বড়রা চা খেতে খেতে গল্প করতেন, আর আমি ছুটে যেতাম ঠাকুরদালানে। ভাবতাম, আর কতদিন বাকি? নিজের মনে মনে হিসাব কষতাম। তবে তখন স্কুলে ষাণ্মাসিক পরীক্ষা চলত পঞ্চমী বা তার আগ পর্যন্ত। পড়াশোনায় মন বসত না, রাগ করে দুগ্গামাকে মনে মনে বলতাম, “তুমি আসছ, কিন্তু আগে থেকে ছুটি দিতে পার না?”
 
আজ সব বদলে গেছে। সেই ঠাকুরদালান নেই, জায়গা জুড়ে উঠেছে কংক্রিটের দেওয়াল। পুজোও এখন থিমের চাকচিক্যে ভরা। শিউলি এখন ফোটে ছাদের গাছে। কিন্তু সেই শিউলিতে ভরে থাকা মাটির গন্ধ, সকালের শিশিরভেজা নীরবতা, আর পুজোর আগমনি আনন্দ, সব যেন হারিয়ে গেছে ছোটবেলার সঙ্গে।
 
সমাপ্ত

1 comment:

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 9 (Last 30 days)