পাঠক ভাবছেন, এ-ও কি সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। আসলে এই ঘটনাটা আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগের। রাত এখন আটটা। গ্রামে আলোর অভাবে তাড়াতাড়ি রাত হয়ে যায়। জানলা খুলে ঝিল্লি দেখল, রাস্তায় কেউ নেই। শুধু ফাঁকা রাস্তায় বিদ্যুতের ঝলকানির আলোয় বৃষ্টির ফোঁটাদের আর তাদের বাচ্চা ফোঁটাদের নৃত্য দেখছে ঝিল্লি। এমন সময় একটা মানুষের চেয়ে চওড়া ছায়া মতো কিছু এগিয়ে আসছে ঝিল্লির এই ঘর তথা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দিকে। ভয়ে ও জানালাটা বন্ধ করে চেয়ারে বসে পড়ল। এখন, ও বৃষ্টির সাথে নিজের শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দও শুনতে পাচ্ছে। হঠাৎ দরজায় কেউ যেন ধাক্কা দিল। তারপর কড়া নাড়ার শব্দ। একটা ছেলের গলা, টিকা দিদি দরজা খোলো। টিকা দেয় বলে এখানকার লোকজন ঝিল্লিকে ওই নামেই ডাকে। ঝিল্লি চুপ করে রইল তারপর আবার একটা মেয়ের গলা, টিকা দিদি দরজা খোলো, আমাদের ভীষণ বিপদ। মেয়ের গলা শুনে ঝিল্লি একটু আশ্বস্ত হল। দরজা খুলে দেখে একটা পনেরো-ষোলো বছরের ছেলে আর কাছাকাছি বয়সেরই একটা মেয়ে। দু’জন দু’জনকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সারা গা ভিজে গেছে। মুখগুলো কাপড়ে ঢাকা। ওদের ভিতরে আসতে বলে দু’টো টিনের চেয়ার বসতে দিল।
ঝিল্লি জিজ্ঞেস করল, কী বিপদ ঘরে কেউ অসুস্থ?
বলে ওর দিদির মুখের কাপড় সরাতে ঝিল্লি দেখল মুখের মাংস কিছু নেই, শুধু খুলিটা কালো মতো।
ঝিল্লি গোঁ গোঁ শব্দ করে অজ্ঞান হয়ে গেল।
যখন জ্ঞান ফিরল তখন ভোর হয়ে গেছে। মাটিতে শুয়ে আছে ঝিল্লি। দরজাটা হাট করে খোলা। কেউ নেই। ও উঠে দরজা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় কাজের মাসি এসে বলল, কাল কী কাণ্ড ঘটে গেছে জানো দিদিমণি! মন্ডলদের দু' ছেলেমেয়ে রাত আটটার একটু আগে এক সাথে মাথায় বাজ পড়ে মনসাতলায় মারা গেছে। দু’জনের সারা শরীর বাজের আগুনে পুড়ে কালো হয়ে গেছে, চেনা যাচ্ছে না। শুনে ঝিল্লি ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment