প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দেবীর বিসর্জন | বিশ্ব প্রসাদ ঘোষ

বাতায়ন/মাসিক/কবিতা/২য় বর্ষ/১৮তম সংখ্যা/২৩শে কার্ত্তিক , ১৪৩১ চৈতালী চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা | কবিতা বিশ্ব প্রসাদ ঘোষ দেবীর বিসর্জন তুমি ...

Saturday, August 5, 2023

বর্ষা | ঝিল্লির বিপদ | নির্মল ভানু গুপ্ত

 

বাতায়ন/ছোটগল্প/বর্ষা/১ম বর্ষ/১৫তম সংখ্যা/১৯শে শ্রাবণ, ১৪৩০

ছোটগল্প
বর্ষা
নির্মল ভানু গুপ্ত

ঝিল্লির বিপদ

বর্ষার রাত। বাইরে ঝমঝম করে বজ্রপাত সহ একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে। এই রকম বৃষ্টির শব্দের একটা তাল আছে। শুধু তাই নয়, এর একটা সুরও আছে বলে মনে হয় ঝিল্লির। বর্ধমানের এই প্রত্যন্ত গ্রামে ঝিল্লি স্বাস্থ্যকর্মীর কাজ নিয়ে এসেছে মাস ছয়েক হল। ওর বাড়ি মুর্শিদাবাদ। যাতায়াত করার কোনও সুবিধা নেই বলে এখানেই থাকে। এই গ্রামেরই পঞ্চায়েত সদস্য বনমালী দাসকে ঝিল্লি একটা ভাড়া ঘর খুঁজে দিতে বলাতে উনি বললেন, আপনি তো একাই থাকবেন, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই থেকে যান। এটাচড টয়লেটের সুবিধা আছে। আশা করি আপনার অসুবিধা হবে না।

ঝিল্লির কাজ মা ও বাচ্চাকে টিকা দেওয়া আর প্রসূতি মায়েদের হাসপাতালে পাঠানো ও স্বাস্থ্য শিক্ষা দেওয়া। যদিও সরকারের নির্দেশ সব ডেলিভারি ইনস্টিটিউশনে (হাসপাতালে) করাতে হবে, তবু কিছু কিছু ডেলিভারি বাড়িতেই হয়ে যায়। তার মূল কারণগুলো হল, যাতায়াতের সমস্যা, বাড়িতে সব সময় পুরুষ মানুষ না থাকা, এছাড়া অর্থের অভাব তো রয়েইছে। সেই প্রসবগুলোও যাতে ঠিক মতো হয়, তার চেষ্টা করাও ঝিল্লির কাজের মধ্যেই পড়ে।

পাঠক ভাবছেন, এ-ও কি সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। আসলে এই ঘটনাটা আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগের। রাত এখন আটটা। গ্রামে আলোর অভাবে তাড়াতাড়ি রাত হয়ে যায়। জানলা খুলে ঝিল্লি দেখল, রাস্তায় কেউ নেই। শুধু ফাঁকা রাস্তায় বিদ্যুতের ঝলকানির আলোয় বৃষ্টির ফোঁটাদের আর তাদের বাচ্চা ফোঁটাদের নৃত্য দেখছে ঝিল্লি। এমন সময় একটা মানুষের চেয়ে চওড়া ছায়া মতো কিছু এগিয়ে আসছে ঝিল্লির এই ঘর তথা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দিকে। ভয়ে ও জানালাটা বন্ধ করে চেয়ারে বসে পড়ল। এখন, ও বৃষ্টির সাথে নিজের শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দও শুনতে পাচ্ছে। হঠাৎ দরজায় কেউ যেন ধাক্কা দিল। তারপর কড়া নাড়ার শব্দ। একটা ছেলের গলা, টিকা দিদি দরজা খোলো। টিকা দেয় বলে এখানকার লোকজন ঝিল্লিকে ওই নামেই ডাকে। ঝিল্লি চুপ করে রইল তারপর আবার একটা মেয়ের গলা, টিকা দিদি দরজা খোলো, আমাদের ভীষণ বিপদ। মেয়ের গলা শুনে ঝিল্লি একটু আশ্বস্ত হল। দরজা খুলে দেখে একটা পনেরো-ষোলো বছরের ছেলে আর কাছাকাছি বয়সেরই একটা মেয়ে। দু’জন দু’জনকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সারা গা ভিজে গেছে। মুখগুলো কাপড়ে ঢাকা। ওদের ভিতরে আসতে বলে দু’টো টিনের চেয়ার বসতে দিল।

ঝিল্লি জিজ্ঞেস করল, কী বিপদ ঘরে কেউ অসুস্থ?

- না। আমার এই দিদিই অসুস্থ।
- কী হয়েছে?
- আজ তিন দিন হল বমি করছে শুধু। কোনো ওষুধে কমছে না।
- কোনো ডাক্তার দেখিয়েছিলে?
- না।
- আজ এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে কেন এলে?
- মা দিদিকে, কুলাঙ্গার তোর জন্য আমার মুখ পুড়বে। বলে খুব মেরেছে আর ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। আমি দিদিকে নিয়ে তোমার কাছে আসছিলাম। পথে কী হয়েছে দেখো, বলে ওর মুখের কাপড় সরাতে ঝিল্লি দেখে মুখটা পুরো কালো হয়ে গেছে।
- কী করে হল?
- হঠাৎ একটা আলো দেখলাম। তারপর কিছু মনে নেই। দিদিরও অবস্থা আরো খারাপ, দেখো।

বলে ওর দিদির মুখের কাপড় সরাতে ঝিল্লি দেখল মুখের মাংস কিছু নেই, শুধু খুলিটা কালো মতো।

ঝিল্লি গোঁ গোঁ শব্দ করে অজ্ঞান হয়ে গেল।

যখন জ্ঞান ফিরল তখন ভোর হয়ে গেছে। মাটিতে শুয়ে আছে ঝিল্লি। দরজাটা হাট করে খোলা। কেউ নেই। ও উঠে দরজা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় কাজের মাসি এসে বলল, কাল কী কাণ্ড ঘটে গেছে জানো দিদিমণি! মন্ডলদের দু' ছেলেমেয়ে রাত আটটার একটু আগে এক সাথে মাথায় বাজ পড়ে মনসাতলায় মারা গেছে। দু’জনের সারা শরীর বাজের আগুনে পুড়ে কালো হয়ে গেছে, চেনা যাচ্ছে না। শুনে ঝিল্লি ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল।

 

সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)