বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক/২য় বর্ষ/১৯তম সংখ্যা/৩০শে
কার্ত্তিক, ১৪৩১
ধারাবাহিক উপন্যাস
পারমিতা চ্যাটার্জি
শেষ থেকে শুরু
[৫ম পর্ব]
"মনকলি বলল, আমি ভেঙে পড়িনি শুধু একটা দুঃখ থেকে গেলো যে তোমাকে একটি সন্তান দিতে পারলাম না,
সময় কি চলে গেছে? সবার কি সব সুখ পূরণ হয়?"
পূর্বানুবৃত্তি কেউ বোঝে না
সদা হাস্যময় মানুষটির জীবনের অন্দরে গোপনে রক্তক্ষরণ হয়ে চলেছে, শুধু যে না
পাওয়ার বেদনা তা তো নয় তার সাথে আছে অপমান, কিন্তু যা পেলেন তা যে অনেক দামী। কয়েকদিন
পর সুচরিতাকে ফোন করেছিলেন, বড় ভাল মেয়েটি,
সুচরিতা তাকে সত্যি ভালবাসে, বাইরের
চাকচিক্যের প্রতি ওর কোনো মন টানে না, যা মনকলিকে টানত।
সুচরিতা একজন সত্যিকারের মানুষ চায়। তারপর…
মনকলি তার বাড়ির ছোট্ট গ্রীল দেওয়া চৌখুপি বারন্দায় বসে ভাবছে, বউয়াদা আসলে তাকে ভালই বাসেনি, তা না হলে এত তাড়াতাড়ি কেউ অন্য কাউকে ভালবেসে ফেলে।
কিন্তু বউয়াদা জানে না আজ সে এখানে এসেছে শুধু সেদিনের সেই ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিতে আর সুচরিতাকে তার হাতে তুলে দিতে।
মনকলি তার বাড়ির ছোট্ট গ্রীল দেওয়া চৌখুপি বারন্দায় বসে ভাবছে, বউয়াদা আসলে তাকে ভালই বাসেনি, তা না হলে এত তাড়াতাড়ি কেউ অন্য কাউকে ভালবেসে ফেলে।
কিন্তু বউয়াদা জানে না আজ সে এখানে এসেছে শুধু সেদিনের সেই ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিতে আর সুচরিতাকে তার হাতে তুলে দিতে।
তার এখন হৃদয় ভরা ভালবাসা থাকলেও সময়টা অনেক পেরিয়ে গেছে।
সে এখানে বেশিদিন থাকবে না, একবার শুধু মন থেকে বউয়াদার সাথে গাইতে চায় ফেলে আসা দিনের সেই পুরানো গানটা।
নিজের মনকে নিজেই বলে, বউয়াদা তোমার মনকলি এখন অন্য মানুষ। সে যখন নিজেকে বুঝতে শিখল, জানতে শিখল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
যার হাত ধরে সে জীবনকে সাজাতে চেয়েছিল সে পারেনি তার সাজানো বাগানের মূল্য দিতে। সে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল গিয়েছিল মনকলির শিক্ষা সংস্কার সব কিছু নিয়ে। তার তো দোষ নেই মনকলি তো সেদিন ভেসে গিয়েছিল এক ভরা প্লাবনে তাই কুল খুঁজে পায়নি।
দিদিমণি— চাঁপার ডাকে চমকে ওঠে, ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবের মাটিতে পা রেখে চাঁপার ডাকের উত্তরে তার দিকে ক্লান্ত দৃষ্টি মেলে তাকায়—
নিজের মনকে নিজেই বলে, বউয়াদা তোমার মনকলি এখন অন্য মানুষ। সে যখন নিজেকে বুঝতে শিখল, জানতে শিখল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
যার হাত ধরে সে জীবনকে সাজাতে চেয়েছিল সে পারেনি তার সাজানো বাগানের মূল্য দিতে। সে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল গিয়েছিল মনকলির শিক্ষা সংস্কার সব কিছু নিয়ে। তার তো দোষ নেই মনকলি তো সেদিন ভেসে গিয়েছিল এক ভরা প্লাবনে তাই কুল খুঁজে পায়নি।
দিদিমণি— চাঁপার ডাকে চমকে ওঠে, ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবের মাটিতে পা রেখে চাঁপার ডাকের উত্তরে তার দিকে ক্লান্ত দৃষ্টি মেলে তাকায়—
চাঁপা তার গ্রাম্য সরল ভঙ্গিতে বলে, তু নাইবি না? মু জল ভইরে রাখছি, তার
একরাশ কালো চুলের দিকে তাকিয়ে বলে, তুহাকে খুউব ভাল দেখতেটা অছে। কী সোন্দর চুল তুহার, আমি তেল দিয়া দিমু অনে।
মনকলি যেন চমকে উঠল, চোখে মুখে একরাশ বিরক্তিতে নিয়ে বলল, না না একদম আমার চুলে হাত দেবে না। কে বলেছে আমার চুলে তেল দিয়ে দিতে?
চাঁপা অবাক হয়ে তাকাল, কেহো তো বলে লাই। তুহার সোন্দর চুল দেইখ্যে মুর মনে হইল। তু না চাইলে দিমু না তা অত আগ (রাগ) কিসের লাইগ্যে। কিছুটা আশাহত হয়েই চাঁপা যেন চলে গেল। মনকলি আনমনে গিয়ে জানলা ধরে দাঁড়াল। সামনে চলে গেছে সুদূর পথ আর দু ধারে অসংখ্য শিমূল আর পলাশ গাছের সারি। তার বাড়ির পাশেই রয়েছে একটি ফুল ভর্তি পলাশ গাছ। সে ভাবছে জীবন তাকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়ে দিল। একসময়ের চঞ্চল দাম্ভিক মনকলি আজ নিঃস্ব। সে ভেবেছিল জীবনের কিছুটা দিন যদি সব ভুলে বউয়াদার সাথে একটু সময় দিয়ে যাই খুব কি ক্ষতি হবে তাতে? অন্তরালে থাকা সুপ্ত প্রেমের ওপর হয়তো একটু প্রলেপ পড়বে।
বউয়াদার সাথে আবার নতুন করে সংসার? না এ সে একবারের জন্য ভাবেনি। সে জানে তা আর কোনদিন সম্ভব হবে না। আপনি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার।
শেষ দিন যখন স্বামীকে বলেছিল, আমি কি তোমার ভার হয়ে যাচ্ছি না?
তার স্বামী খুব উদাসীন ভাবে উত্তর দিয়েছিল, তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে আজকাল খুব ক্লান্ত বোধ করি। যাতে তোমার বা আমার কারুরই কোন হাত নেই তখন সে প্রশ্ন কেন কর?
মনকলির চোখ দিয়ে নীরবে জলের ধারা বয়ে চলেছে, প্রবীর দেখে ওর পাশে এসে বসে বলল, কেন এত ভেঙে পড়ছ?
মনকলি বলল, আমি ভেঙে পড়িনি শুধু একটা দুঃখ থেকে গেলো যে তোমাকে একটি সন্তান দিতে পারলাম না,
সময় কি চলে গেছে? সবার কি সব সুখ পূরণ হয়?
মনকলি যেন চমকে উঠল, চোখে মুখে একরাশ বিরক্তিতে নিয়ে বলল, না না একদম আমার চুলে হাত দেবে না। কে বলেছে আমার চুলে তেল দিয়ে দিতে?
চাঁপা অবাক হয়ে তাকাল, কেহো তো বলে লাই। তুহার সোন্দর চুল দেইখ্যে মুর মনে হইল। তু না চাইলে দিমু না তা অত আগ (রাগ) কিসের লাইগ্যে। কিছুটা আশাহত হয়েই চাঁপা যেন চলে গেল। মনকলি আনমনে গিয়ে জানলা ধরে দাঁড়াল। সামনে চলে গেছে সুদূর পথ আর দু ধারে অসংখ্য শিমূল আর পলাশ গাছের সারি। তার বাড়ির পাশেই রয়েছে একটি ফুল ভর্তি পলাশ গাছ। সে ভাবছে জীবন তাকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়ে দিল। একসময়ের চঞ্চল দাম্ভিক মনকলি আজ নিঃস্ব। সে ভেবেছিল জীবনের কিছুটা দিন যদি সব ভুলে বউয়াদার সাথে একটু সময় দিয়ে যাই খুব কি ক্ষতি হবে তাতে? অন্তরালে থাকা সুপ্ত প্রেমের ওপর হয়তো একটু প্রলেপ পড়বে।
বউয়াদার সাথে আবার নতুন করে সংসার? না এ সে একবারের জন্য ভাবেনি। সে জানে তা আর কোনদিন সম্ভব হবে না। আপনি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার।
শেষ দিন যখন স্বামীকে বলেছিল, আমি কি তোমার ভার হয়ে যাচ্ছি না?
তার স্বামী খুব উদাসীন ভাবে উত্তর দিয়েছিল, তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে আজকাল খুব ক্লান্ত বোধ করি। যাতে তোমার বা আমার কারুরই কোন হাত নেই তখন সে প্রশ্ন কেন কর?
মনকলির চোখ দিয়ে নীরবে জলের ধারা বয়ে চলেছে, প্রবীর দেখে ওর পাশে এসে বসে বলল, কেন এত ভেঙে পড়ছ?
মনকলি বলল, আমি ভেঙে পড়িনি শুধু একটা দুঃখ থেকে গেলো যে তোমাকে একটি সন্তান দিতে পারলাম না,
সময় কি চলে গেছে? সবার কি সব সুখ পূরণ হয়?
তুমি ভাল হয়ে উঠলে আমি
তোমাকে সন্তান এনে দেবো,
মনকলি তার সুন্দর মিষ্টি হাসিটা ছড়িয়ে দিয়ে বলল, তুমি কি ম্যাজিক জানো না কি?
প্রবীর ওর দিকে একটু ঝুঁকে পরে বলল, হাসলে তোমাকে এখনও খুব সুন্দর দেখায়। তারপর আবার উঠে একটা সিগারেট ধরিয়ে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
মনকলি তার সুন্দর মিষ্টি হাসিটা ছড়িয়ে দিয়ে বলল, তুমি কি ম্যাজিক জানো না কি?
প্রবীর ওর দিকে একটু ঝুঁকে পরে বলল, হাসলে তোমাকে এখনও খুব সুন্দর দেখায়। তারপর আবার উঠে একটা সিগারেট ধরিয়ে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
মনকলি বলল আমি পুরুলিয়ায় যাচ্ছি, ওখানকার কলেজের চাকরি নিয়ে।
সে কী! কাল যাচ্ছ আর আজ বলছ! ওখানে ডাক্তারের কীরকম ব্যবস্থা আছে জানি না তো? এভাবে কী করে যেতে দিই?
তোমাকে আমার ভার আর বইতে হবে না। আমি মুক্তি দিচ্ছি তোমাকে, আর এত কষ্ট করে ভার বহন করতে হবে না।
আবার সেই একই কথা?
আমি সব জানি যে তাই তোমাকে মুক্তি দিচ্ছি। সত্যি তো একটা সুন্দর সুস্থ জীবন পাওয়ার অধিকার সবারই আছে তোমারও আছে তাই আমি স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছি।
প্রবীর বলেছিল, সবাই সব পায় না, কিন্তু আমি পেয়েও হারাতে চলেছি। একদিন সত্যি ভেবেছিলাম আর কতদিন? কিন্তু আজ তোমার এই স্বেচ্ছা নির্বাসন আমাকে পীড়া দিচ্ছে। মেনে নিতে পারছি না।
মনকলি বলেছিল, দুদিন হয়তো একটু ফাঁকা লাগবে তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। ব্যাগ থেকে মিউচুয়াল ডিভোর্স পেপার বার করে বলল সই করে জমা দিয়ে দিও এখন যাকে ভালবাসো তাকে নিয়ে আনন্দ করে ঘর করো।
প্রবীর আকুল হয়ে তার হাত চেপে ধরে বলেছিল, মন আরেকবার কি সুযোগ দেওয়া যায় না?
আমি তোমাকে মুক্তি দিতে চাই। আর কী জানো-তো কারও দয়ার
পাত্রী হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভাল। আজ যা আবেগের বসে বলছ কাল
তার জন্য আক্ষেপ হবে। তোমার সংসারে কয়েকদিনের অতিথি হয়ে এসে তোমাদের অনেক বিব্রত
করে গেলাম পারলে ক্ষমা করে দিও।
তারপর মনকলি চলে এসেছিল কয়েকদিনের জন্য দাদার সংসারে। দাদার সংসারই বলবে কেন-না এখন তার শৈশবের স্বপ্নের ঘরটা আর নেই। নেই বাবার অসীম স্নেহ, মায়ের শীতল আঁচলের ঠান্ডা বাতাস, নেই স্নেহময়ী দিদির মমতা। দিদি বহুদূরে আমেরিকায় পড়ে আছে, আর বাবা-মা তো পরপারের যাত্রী হয়ে চলে গেছেন বহুদূরে। যাবার সময় মা তার শৈশব আর প্রথম যৌবনের সুখস্মৃতিময় ছবিগুলো সব নিয়ে গেছেন।
দাদা সাদরে বোনকে গ্রহণ করলেও বৌদির নিরুত্তাপ ব্যাবহার তাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিলো তাই বৌদিকে আশ্বস্ত করার জন্য মনকলি বলল, আমি এখানে কয়েকদিন থাকব মাত্র, পুরুলিয়ায় আমার চাকরি ঠিক হয়ে আছে, কিছু জিনিসপত্র কিনে গুছিয়ে নিতে যেটুকু সময় সেটুকুই আর কী।
বৌদি অপ্রস্তুত হয়ে বলল না না এসো তুমি বসো-না।
দাদা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, পাগল না কী! পুরুলিয়ায় কোথায় ডাক্তার কোথায় কী আছে কিছুই জানিস না, যাবো বললেই আমি যেতে দেবো না কি?
ম্লান হেসে মনকলি বলেছিল, তোর কাছে রাখলেই কি আমাকে ধরে রাখতে পারবি দাদা? আজ নয় কাল যেতে তো আমাকে হবেই।
সে কী! কাল যাচ্ছ আর আজ বলছ! ওখানে ডাক্তারের কীরকম ব্যবস্থা আছে জানি না তো? এভাবে কী করে যেতে দিই?
তোমাকে আমার ভার আর বইতে হবে না। আমি মুক্তি দিচ্ছি তোমাকে, আর এত কষ্ট করে ভার বহন করতে হবে না।
আবার সেই একই কথা?
আমি সব জানি যে তাই তোমাকে মুক্তি দিচ্ছি। সত্যি তো একটা সুন্দর সুস্থ জীবন পাওয়ার অধিকার সবারই আছে তোমারও আছে তাই আমি স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছি।
প্রবীর বলেছিল, সবাই সব পায় না, কিন্তু আমি পেয়েও হারাতে চলেছি। একদিন সত্যি ভেবেছিলাম আর কতদিন? কিন্তু আজ তোমার এই স্বেচ্ছা নির্বাসন আমাকে পীড়া দিচ্ছে। মেনে নিতে পারছি না।
মনকলি বলেছিল, দুদিন হয়তো একটু ফাঁকা লাগবে তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। ব্যাগ থেকে মিউচুয়াল ডিভোর্স পেপার বার করে বলল সই করে জমা দিয়ে দিও এখন যাকে ভালবাসো তাকে নিয়ে আনন্দ করে ঘর করো।
তারপর মনকলি চলে এসেছিল কয়েকদিনের জন্য দাদার সংসারে। দাদার সংসারই বলবে কেন-না এখন তার শৈশবের স্বপ্নের ঘরটা আর নেই। নেই বাবার অসীম স্নেহ, মায়ের শীতল আঁচলের ঠান্ডা বাতাস, নেই স্নেহময়ী দিদির মমতা। দিদি বহুদূরে আমেরিকায় পড়ে আছে, আর বাবা-মা তো পরপারের যাত্রী হয়ে চলে গেছেন বহুদূরে। যাবার সময় মা তার শৈশব আর প্রথম যৌবনের সুখস্মৃতিময় ছবিগুলো সব নিয়ে গেছেন।
দাদা সাদরে বোনকে গ্রহণ করলেও বৌদির নিরুত্তাপ ব্যাবহার তাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিলো তাই বৌদিকে আশ্বস্ত করার জন্য মনকলি বলল, আমি এখানে কয়েকদিন থাকব মাত্র, পুরুলিয়ায় আমার চাকরি ঠিক হয়ে আছে, কিছু জিনিসপত্র কিনে গুছিয়ে নিতে যেটুকু সময় সেটুকুই আর কী।
বৌদি অপ্রস্তুত হয়ে বলল না না এসো তুমি বসো-না।
দাদা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, পাগল না কী! পুরুলিয়ায় কোথায় ডাক্তার কোথায় কী আছে কিছুই জানিস না, যাবো বললেই আমি যেতে দেবো না কি?
ম্লান হেসে মনকলি বলেছিল, তোর কাছে রাখলেই কি আমাকে ধরে রাখতে পারবি দাদা? আজ নয় কাল যেতে তো আমাকে হবেই।
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment