বাতায়ন/রং/ছোটগল্প/২য় বর্ষ/৩২তম সংখ্যা/২৯শে
ফাল্গুন, ১৪৩১
রং
| ছোটগল্প
মৌসুমী
চক্রবর্তী
লাল
সাদা
"উফ্ কী শান্তি, স্বামীটাকে বাড়ি পাঠিয়ে। এখন জবাবৌদি দোকানে একা। নিজের মতো চুল শুকাবে, দাঁত দিয়ে নখ খুঁটবে, ব্লাউজের হুক লাগাবে। বাড়িতে থাকলেই তো শুধু দেবতাদের সেবা করো।"
মুখ হাঁড়ি করে
জবাবৌদি দোকানে এসে ঢুকল। তাচ্ছিল্যের স্বরে স্বামীকে বলল, “অনেকক্ষণ
ধরে মাছি তাড়িয়ে তাড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে
গেছ, যাও বাড়ি গিয়ে জলখাবার খেয়ে নাও।
রুটি আর পরশুদিনের বাসি রসগোল্লা ঢাকা দেওয়া আছে।
দেখো আদিখ্যেতা করে নাতির মুখে আবার
দিতে যেও না।
মিষ্টির দোকানটা
চলে না বললেই চলে। খানদশেক অমৃতি, গোটাকতক গুজিয়া আর আর ভেজালে ঠাসা রসগোল্লার ট্রেগুলো মাছিবাহিনীর
আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে, তবু
রোজ সকালসন্ধে স্বামী-স্ত্রী পালা করে এসে দোকানে বসে। মাছি
তাড়ায়, হাই তোলে আবার শাটার ফেলে ফিরে যায়।
বর্ণহীন দোকানের একমাত্র শোভা জবাবৌদির কাঁচাপাকা চওড়া সিঁথের মাঝখানে আঁকা এক
হাত লম্বা ডগডগে সিঁদুরের রেখা। দোকানের
নামের দিকে খরিদ্দাররা বোধহয় তাকিয়েও দেখেনি কখনো। তবে
বৌদির সিঁদুরটা সবার নজর কাড়ে। পাড়ার বখাটেগুলো মাঝে মাঝে টোন কাটে— কী বৌদি সিঁদূর কি রোজ দাদা পড়িয়ে দেয়? জবা আমল দেয় না, দেওয়ালে
টাঙানো ছোট হাত-আয়নায় নিজেকে দেখে ঘুরিয়েফিরিয়ে।
বাড়িতে পঙ্গপালগুলোর জ্বালায় দেখার জো আছে?
উফ্ কী শান্তি, স্বামীটাকে
বাড়ি পাঠিয়ে। এখন জবাবৌদি দোকানে একা। নিজের
মতো চুল শুকাবে, দাঁত
দিয়ে নখ খুঁটবে, ব্লাউজের হুক লাগাবে।
বাড়িতে থাকলেই তো শুধু দেবতাদের
সেবা করো। পান সাজো, চা দাও, লেপের ওয়ার ভরো, লুঙ্গি, গেঞ্জি ভাঁজ করে তুলে রাখো।
নাতির পায়খানার জল দাও, ছেলের
অফিসের ভাত দাও, বৌমার হাঁড়ি মুখে তেল দাও।
শুধু দাও দাও, দিয়েই যাও।
তবেই-না বাড়ি মন্দির হয়ে উঠবে।
পনেরোদিন পর
আজ জবাবৌদি দোকান খুলেছে। পাড়ার
রকবাজ ছেলেরা এসেছে সহানুভূতি জানাতে। জবার
মনে হচ্ছে উফ্ এরা গেলে বাঁচি। বরাদ্দ
সময়ের অনেকটা খরচ হয়ে যাচ্ছে। বর
মরেছে আমার তোদের এত দরদ কীসের রে।
বাড়ি গিয়ে বৌমার ম্যাক্সি, ছেলের
বারমুডা কাচতে হবে। কাচার লোকের মাইনে দিতে গেলে নাকি
বাড়িতে হাঁড়ি চড়বে না। বৌমা বলছিল পাশের বাড়ির মাসিমাকে। তারপর নাতির স্কুল ড্রেস রিফু করতে হবে।
একা হতেই
ছোটো হাত-আয়নাটা নিয়ে বসল জবাবৌদি।
না সব একই আছে শুধু এক হাত লম্বা লাল রঙের সরল রেখাটা যা নেই সিঁথিতে।
সমাপ্ত
No comments:
Post a Comment