প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

রং | প্রতিজ্ঞা

  বাতায়ন/ রং /সম্পাদকীয়/২য় বর্ষ/ ৩ ২তম সংখ্যা/ ২৯শে ফাল্গুন ,   ১৪৩১ রং | সম্পাদকীয়   প্রতিজ্ঞা "নির্ভীক একটি ফুলের মতো মেয়েকে চরম লাল...

Thursday, March 13, 2025

রঙিন মানুষ | সুশীল বন্দ্যোপাধ্যায়

বাতায়ন/রং/রম্যরচনা/২য় বর্ষ/৩২তম সংখ্যা/২৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১
রং | রম্যরচনা
সুশীল বন্দ্যোপাধ্যায়
 
রঙিন মানুষ

"সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বলেছিলেন 'কালো যদি মন্দ তবে চুল পাকিলে কান্দ কেনে?', চোখের মণিও তো কালোকীর্তন আছে 'কৃষ্ণ কালো তমাল কালো তাই তো তমাল বাসি ভাল'।"
 
কম বয়সে ছড়া লিখেছিলাম- "সাদার ভেতর সাতটি রং / হয়ে আছে জবরজং" দেখতে সাদা হলে কী হবে, সাত-সাতটি রং নিয়ে বসে আছে, একটি প্রিজমের ভেতর দিয়ে চালান করলেই বোঝা যাবে। 'বেনীআসহকলা'মানুষের মধ্যেও এরকম অনেক রং আছেদেখতে সাদা কিন্তু অনেক রঙের সমাহার, যখন যে রংটি দরকার সেটি সামনে আনবে। যখন ভয়ংকর রাগী রাগী তখন লাল, যখন কোনো কারণে বিষাক্ত তখন নীল, যখন ভালবাসার খেলায় লজ্জা লজ্জা ভাব তখন কমলা, যখন কৈশোরের সজীবতা তখন সবুজ, যখন দুর্জ্ঞেয় তখন বেগুনি, যখন উদাসীন তখন আকাশি আবার বৃদ্ধ বয়সে হলুদ হলুদ। এদিক দিয়ে গিরগিটির চেয়ে কম কিছু নয় মানুষ। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রং বদল। পেশায় রং বদল, নেশায় বদল, ব্যবসায় বদল, রাজনীতিতে বদল। কথায় বদল, আচরণে বদল, সম্পর্কে বদল, প্রেম ভালবাসায় বদল। কত রং যে মানুষ লুকিয়ে রাখে ভেতরে ভেতরে! তবে সময় এমন জিনি যে সারা জীবনে মানুষের থেকে কোনো-না-কোনোভাবে এই সব রংগুলি বের করেই ছাড়ে
 
কারো গায়ের রং দুধে-আলতা তো কারো দুধে-আলকাতরা। কেউ সাহেবদের মতো গোরা তো কেউ অমাবস্যার নিশীর মতো কালো। কেউ রঙে কালো কিন্তু অন্তরে ভাল, কেউ রঙে সাদা তো ভেতরে কুৎসিত কালো। কাগজের মতো সাদা তো আর হয় না, ওই একটু তামাটে তামাটে সাদাভাব আর-কী। কালো করে সাদা বা সাদা করে কালো এমন তো বলা যায় না। তাই একটা মাঝামাঝিতে আসতেই হয়। কাগজে পাত্রপাত্রী বিজ্ঞাপনে কালোকে তো আর কালো বলা যায় না, বলতে হয় 'উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ 'বিজ্ঞান বলে সূর্যের আলোতে যা যা রং থাকে মানুষের গায়ে পড়ে তার আসল যা রং সেটিই প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে, বাকিগুলো দেহে শোষিত হয়। যেমন কালোতে কালো রং ঠিকরে বেরিয়ে আসে, গোলাপিতে গোলাপি। তবে মানুষের সবুজ রং হতে নেই, হলে সে আর মানুষ থাকে না, অসুর হয়ে যায়। কিন্তু গায়ের রঙে কী এসে যায়, আসল রং তো ভেতরের। যায়, কারণ কিছু মানুষ আছে যারা বাইরের রংটি ধরেই বিচার করতে বসে। আসল রঙের খেলা তাদের কাছে অজানা। হিসেব এলোমেলো করে দেয়
 
সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বলেছিলেন 'কালো যদি মন্দ তবে চুল পাকিলে কান্দ কেনে?', চোখের মণিও তো কালো, কীর্তন আছে 'কৃষ্ণ কালো তমাল কালো তাই তো তমাল বাসি ভাল'রবি ঠাকুর তো কবিতাই লিখে দিয়েছেন 'তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ'বেশি সাদাই কি আর ভাল? সর্বমত্যন্তগর্হিতম। সাদা সাহেবরা শুনেছি রৌদ্র স্নান করে তামাটে হতে চায়। সাদা-কালো চোখের ভুল। আসল রং ভেতরে। তা কী করে বোঝা যায়? কেউ যদি কালো রং বেশি পছন্দ করে সে কী কলঙ্ক ভালবাসে? কেউ গোলাপি পছন্দ করলে সে কী ভালবাসা চায়? হতে পারে আবার নাও হতে পারে। তবে রঙেরই তো দিন এখন, সাদা কালোকেই বা পছন্দ করে? রঙিন চশমা, রঙিন পোশাক-আশাক, রঙিন আলাপচারিতা। সবেতেই রঙের ছোঁয়া। বেরসিক আর বেরঙিনে তেমন কোনো তফাৎ নেই এখন। বেরঙিন ঝরে যাওয়া পাতার মতো, কোনো সম্মান নেই। কে আর জহুরি আছে যে রতন চিনে চিনে বেড়াবে। তাই একবার রঙিন হওয়ার আশা মানুষ ছাড়তে পারছে না। রঙিন হওয়ার খেলা সংসারে চলছেই অবিরত। তবে রংটা সঠিক জায়গায় লাগছে কিনা  বিচার করার দাঁড়িপাল্লা কই? তাই হয়তো কবি বলে গেছেন
 
রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে
 
রং যেন মোর মর্মে লাগে, আমার সকল কর্মে লাগে
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

মোহিনীমায়া


Popular Top 10 (Last 7 days)