রম্যরচনা
প্রদীপ কুমার দে
রাজনীতিবিদ ঝিঙাফুল
ঝিঙাফুল
সিরিজ— ১৭
"ঝিঙাফুল হাসছে, আর আনন্দে লাফাচ্ছে। আর আমার হাত-পা ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে ভয়ে। রাত কাটল জেগেই ও আনন্দে আর আমি ভয়ে। পরেরদিন ভালো করে আলো ফোটেনি। কলিংবেল বেজে উঠল, ঘুম চোখে দরজা খুলল ঝিঙাফুল।"
অফিস থেকে
বেরিয়ে সবে রাস্তায় পা রেখেছি পিছন থেকে রামখিস্তি মারল কেউ, হাত ধরে টান
মেরে বাইকের পিছনে বসতে বললে,
-ঢ্যামনা একটা তুই, খাসা বউ পেয়ে সব ভুলে গেলি হারামি? উঠে পর পিছনে...
বাইক ছুটছে। গল্প হচ্ছে। ও খিস্তি দিয়েই যাচ্ছে আর আমি হেসে হেসে হজম করছি। এটাই যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান।
কিছুটা
যাওয়ার পর বাইক থেমে গেল। রাস্তা জ্যাম। সলিলকে জিজ্ঞাসা করলাম,
-কী হলো রে?
-শালা বদমাশগুলো
মিছিল বার করেছে। আমাদের দিন বদলে দেবে বলে চিলাচ্ছে। দাঁড়া দেখি চুক্কি মেরে
বেরিয়ে যেতে পারি কিনা…
সত্যি ও
পারল। বাইকে 'প্রেস' কথাটি লেখা
ছিল, পাশ
কাটিয়ে ডচ্ করতে করতে বাইক বেরিয়ে আসছে, এমন সময় আমি চমকে গেলাম, এ কী দেখছি? ঝিঙাফুল
মিছিলের প্রথমে হাত মুঠো করে শ্লোগান দিতে দিতে চলেছে। এক মিনিটে বাইক মিছিল ত্যাগ
করল। আমি সলিলের মুখ দেখে বুঝলাম ও ঝিঙাফুলকে দেখতে পায়নি। এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম নচেত দুজনাই রামখিস্তি খেতাম।
বাড়ি এসে
স্নান সেরেও ঠান্ডা হলাম না। এ কী দেখলাম গ্রামের বোকা হাঁদা মেয়ে
আজ রাজনীতি করছে আর শহুরে স্বামী কিছুই জানে না? বেল বাজতেই
গেলাম না। তিনবারের বার দরজা খুললাম। ঘেমেনেয়ে ব্যস্ততা নিয়ে ঝড় তুলে ঝিঙাফুল ঘরে
ঢুকেই চেঁচালো,
-কী হলো তোমার?
-তোমার কী হলো?
-কী আর হবে? ভাগ্য খুলে
গেল। এবার চড়চড় করে উপরে উঠে যাবো। কত পয়সা, ইজ্জত আর খাতির।
-আবার কী হলো তোমার মতিগতি?
-অনেক ভেবেই
রাজনীতিতে গেলাম। দেখলাম এটাই শর্টকার্ট ধনী আর লাভবান হওয়ার
একমাত্র উপায়। অনান্য রাস্তায় শুধু খাটুনি সার!
-তাই নাকি? অনেক বুদ্ধি
হয়ে গেছে দেখছি তোমার?
-হ্যাঁ।
সাহসী হতে হয়। 'বোকারাই
ঠকে, চালাকেরা
নয়'।
-কে যেন বলেছে, এ কথাটি?
-ওইতো কিনে
আনা একটা বইতে প্রদীপ দে'র
কবিতাতেই তো লিখেছে,
বইগুলো কিনেছি তা একটু পড়ো না কেন?
-বুঝেছি তুমি
পড়াশোনা করে অনেক জ্ঞানী হয়ে গেছো।
-হ্যাঁ গো
ঠিক বলেছ। শোনো বড় কথাটা বলি, এবারের এই ওয়ার্ডে আমি কাউন্সিলর ইলেকশানে দাঁড়াচ্ছি।
ঝিঙাফুল
হাসছে, আর
আনন্দে লাফাচ্ছে। আর আমার হাত-পা ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে ভয়ে। রাত
কাটল জেগেই ও আনন্দে আর আমি ভয়ে। পরেরদিন ভালো করে আলো ফোটেনি। কলিংবেল বেজে উঠল, ঘুম চোখে
দরজা খুলল ঝিঙাফুল। একদল মস্তান হুংকার দিয়ে উঠল,
-দাদাকে
ডাকুন...
দৌড়ে
গেলাম। মস্তানেরা গলা নামিয়ে বলল,
-দাদা, বৌদিকে একটু
সামলান। উনি এ লাইনে শিশু। বিপদে পড়ে যাবেন। আপনাকে ভালোবাসি তাই বলছি।
ঝিঙাফুল
অবাক। সামনে এসে দাঁড়াতেই,
ওরা জানাল,
-বৌদি, কিছু মনে
করবেন না আপনাকে ওরা, যারা তাতাচ্ছে তারা সুবিধাবাদী। আপনার বড়
ক্ষতি হয়ে যাবে অথচ কিছুই পাবেন না। লাইনে বড় নেতার কাছের লোক আছে। সাবধান করে
গেলাম।
ওরা বিদায়
নিতেই দরজা বন্ধ করে দিলাম। ঝিঙাফুল ভয়ে কাঁপছে। আমাকে জাপটে ধরে নিল, একান্ত
নিরুপায় হয়েই।
সমাপ্ত
আনন্দ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি সকলকে। সম্পাদক মহাশয়ের সৌজন্যে আজ এই আনন্দের ভাগীদার আমি। শুভকামনার
ReplyDelete" বাতায়ন " ।
বেশ মিষ্টি বৌ আর মিষ্টি গল্পঃ
ReplyDeleteখুব ভাল,বাস্তবের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে লেখা।
ReplyDelete