প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা

মননশীল কলমকে উৎসাহ দিতে... পড়ুন, পড়ান, আপনার মূল্যবান মতামত দিন।

দহন | মানুষকে মানুষের মূল্য দিন

বাতায়ন/দহন / কবিতা / ৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ ,   ১৪৩২ দহন   | সম্পাদকীয় "এর মধ্যেই আছে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, সে-কোন সন্ত্রাসবাদীই হ...

Friday, May 16, 2025

সন্ধানে [১ম পর্ব] | ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য

বাতায়ন/দহন/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
দহন | ধারাবাহিক গল্প
ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য
 
সন্ধানে
[১ম পর্ব]

"সরলা আছে বলেই মানুষটার ঘরে ফেরা আছেসেকথা সত্যি। নয়তো ইটভাঁটাতেই নেশা করে পড়ে থাকবে। তবে যতই বদলে যাক না কেন মানুষটা আজও ভিতরে ভিতরে ভালবাসে সরলাকে। সেটা বোঝে সরলা।"


-ভুল তো কিছু বলিনি তোমায়! আমাদের সংসারেই চার-চারটে পেট। এরপর তুমি এসে উড়ে বসেছ এখানে, তোমার দাদার শরীরের এই অবস্থা। রোজগার নেই। কটা টাকা প্রতি মাসে সরকারি সাহায্য পাই আমি, সংসারটা চলবে কী করে?
আগুনে হলকার মতো কথাগুলো এসে মুহূর্তে পুড়িয়ে দিয়ে গেলো সরলাকে।
-সাহায্যের টাকায় সংসার চলে না সে কথা বুঝি বৌদি। আমি কি নিজে নিজে এসেছি এখানে?


উঠানের দিকে চেয়ে শান্ত গলায় বলে সরলা।
-তোমার বর নেশা করে তোমাকে মারধর করবে আর তার জন্য আমার সংসার ভুগবে কেন? তোমার নিজের বিচার নেই! কতদিন হলো এখানে রয়েছ তুমি? তোমার দাদার ওষুধ কেনার কথা ভেবেই হিমসিম খেতে হচ্ছে আর তুমি বসে বসে...
কট কট করে কথাগুলো বলে সরলার বৌদি। চুপ করে যায় সরলা। কথাগুলো মিথ্যে নয়। আজ বেশ কদিন বিছানা নিয়েছে সরলার দাদা। ভীষণ জ্বর, গায়েগতরে ব্যথা অসহ্য। ডাক্তার দেখিয়েছে। রক্ত পরীক্ষা, বুকের ফটো আরও গুচ্ছের টেস্ট করে নিয়ে যেতে হবে ডাক্তারের কাছে, তারপর ওষুধ পড়বে পেটে। টাকার অভাবে টেস্টগুলো করা হয়নি এখনো। মানুষটা সুস্থ হবে কীভাবে! এদিকে কাজের মানুষ শুয়ে থাকলে চুলো হাঁড়ি বাতাসে দোলে। কার ভালো লাগে তখন?
 
আজ পাঁচমাস হতে চলল স্বামীর ঘর ছেড়ে বাপের বাড়ি এসে রয়েছে সরলা। নিজের ইচ্ছেয় আসেনি ঠিকই। সরলার দাদা জোর করে নিয়ে এসেছে সরলাকে। পাশের গ্রামেই বিয়ে হয়েছে বোনের। সরলার দাদা খবর পেয়েছে যে রঘু ইদানিং ভীষণ মারধর করে সরলাকে। এরপর কোনদিন হয়তো রঘুর হাতে মার খেয়ে মরেই যাবে, তাই...।
-রঘুকে বুঝতে দে কত ধানে কত চাল! দু বেলা দু মুঠো ভাত জুটে যাচ্ছে তো...
মাস সাত-আট আগে সরলাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে এসেছিল, অনেক কষ্টে দাদাকে সেবার ফিরিয়ে দিয়েছিল সরলা। এবার আর...।
 
বাপের বাড়ি চলে আসার ইচ্ছে ছিল না সরলার। নামেই বাপের বাড়ি। বাবা আজ আর নেই। মায়ের বয়স হয়েছে। সে থাকা না থাকারই সমান। তাছাড়া শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে মাসের পর মাস বাপের বাড়ি পড়ে থাকলে নানা কথা গ্রামে উড়ে বেড়াবে, সে বড় লজ্জার। এদিকে সরলার দাদা নাছোড় বলে,
-কথা শোন কিছুদিন...
মানুষটাকে একলা ফেলে রেখে স্বার্থপরের মতো চলে যেতে মন সাড়া দেয়নি সরলার। আজ পনেরোবছর বিয়ে হয়েছে, রঘুকে একলা রেখে কোনোদিন কোথাও থাকেনি সরলা।
-তোকে মারধর করছে আর তুই ওর মুখে ভাত...
দাদার কথায় চুপ ছিল সরলা। রঘু এমনটা ছিল না আগে। পরিস্থিতির চাপে কেমন যেন বদলে গেছে। কাজ নেই রঘুর। সরলা মাসে মাসে ভাতা পায়, সে আর কতটুকু। কাজ না থাকলে শুধু ভাতায় কি সংসার চলে? কারোর সাহায্যের টাকায় কি আর খেয়েপড়ে মানুষ বাঁচে! এ কি বুড়োমানুষ নাকি যে কর্মক্ষমতা হারিয়ে বসে আছে, রোগবালাই চেপে বসেছে তাই দু পয়সা সাহায্য দিয়ে ওষুধপথ্য কিনতে দিলাম? সংসারে কানাকড়িটিও দিতে পারে না রঘু। মেজাজ সবসময় খিটখিটে হয়ে থাকে। খেউড় ছাড়া কথা নেই মুখে। মাঝেমধ্যেই ইটভাঁটা থেকে রাতের দিকে নেশা করে ফেরে। তারপর...।
 
তবু সরলা আছে বলেই মানুষটার ঘরে ফেরা আছে, সেকথা সত্যি। নয়তো ইটভাঁটাতেই নেশা করে পড়ে থাকবে। তবে যতই বদলে যাক না কেন মানুষটা আজও ভিতরে ভিতরে ভালবাসে সরলাকে। সেটা বোঝে সরলা।
 
ক্রমশ…

No comments:

Post a Comment

জাল— মাছ কাটতে না জানলেও কিছু মানুষ জানে


Popular Top 10 (Last 7 days)