বাতায়ন/দহন/হলদে খাম/৩য় বর্ষ/৬ষ্ঠ সংখ্যা/১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
দহন | হলদে খাম
অলক চক্রবর্তী
দহন
প্রিয়তমা দামিনী আমার,
আমার কারও সাহায্যের দরকার
নেই। আমার টেলিপ্যাথির জোর আছে। আত্মবিশ্বাস আছে। আমার অনুচ্চারিত কথা, অব্যক্ত যন্ত্রণা তোমার গোচরে চলে যায়। তোমার অজানা কিছুই
থাকে না।
আমার চিঠিগুলো পুড়িয়ে তুমি
হালকা বোধ করছ এখন? না। জানি তোমার গোপন
তোরঙ্গ খালি হচ্ছে; কিন্তু তোমার মন
ক্রমশ ভারি হয়ে উঠছে। আমি জানি।
তুমি তো জানো কবেই আমার গান
বন্ধ হয়ে গেছে। সুর আসে না। জীবনটা আমার ধু-ধু মরুভূমি হয়ে গেল। শুধু তোমার সঙ্গ
লাভের সোনালি সময়টুকু ছাড়া। হারমোনিয়াম আরশোলার বাসা হয়ে গেল। লোকে বলল—বিক্রি করে
দাও। আমি গোপনে পুড়িয়ে দিলাম।
আমার প্রিয়
বাদ্যযন্ত্র—স্যাক্সোফোন। তুমি জানো। আমি হাজার অনুশীলন করেও ‘ফরেভার ইন লাভ’-এর
সুর তুলতে পারিনি। আমি হতাশ হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে থেকেছি। তুমি মিষ্টি হেসে
সান্ত্বনা দিয়েছ—আমি খুব ভালো বাজিয়েছি। কিন্তু আমার একবারও মনে হয়নি—অন্তরের
অন্তঃস্থলে পৌঁছোতে পেরেছি। আমার ব্যর্থ জীবনই তার প্রমাণ।
আমি এবার আমার প্রিয়
স্যাক্সোফোনে আগুন লাগিয়ে পিছন ফিরে নদীর দিকে তাকিয়ে আছি। লাল আভা পড়েছে নদীতে।
রাত তৃতীয় প্রহর। তোমার চিঠি পোড়ার গন্ধ,
আমার
স্যাক্সোফোন পোড়ার গন্ধ মাঝ নদীতে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। না-থেমে বয়ে চলেছে
রক্তিম নদী।
আমার এ চিঠিটিও একদিন
অগ্নিপ্রজ্বলিত হবে জানি। তবু লিখছি। হাজারবছর ধরে লিখব। কোটিবছর ধরে লিখব।
স্যাক্সোফোন পোড়া শেষ হলে হৃৎপিণ্ড পুড়বে। পুড়তেই থাকবে—হাজারবছর, কোটিবছর। পুড়তেই থাকবে।
ভালো থেকো।
ইতি—
তোমার আউলবাউল কবি।
দহন | হলদে খাম
অলক চক্রবর্তী
"তুমি তো জানো কবেই আমার গান বন্ধ হয়ে গেছে। সুর আসে না। জীবনটা আমার ধু-ধু মরুভূমি হয়ে গেল। শুধু তোমার সঙ্গ লাভের সোনালি সময়টুকু ছাড়া।"
নদীর ওপার থেকে মাঝে মাঝেই
চিঠি পোড়ার গন্ধ পাচ্ছি। একেক চিঠি পোড়ার গন্ধ এক-একরকম। তুমি চিঠিগুলো না পোড়ালে বুঝতেই
পারতাম না; প্রতিটি চিঠি বৈশিষ্ট্যে
অনন্য। প্রতিটি চিঠি স্বাদে-গন্ধে-অনুভূতিতে অতুলনীয়। স্বতন্ত্র। তাই এক-এক
জ্বলন্ত চিঠি থেকে এক-একরকমের গন্ধ বাতাসে মেশে। বাতাস সযতনে আমার ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে
পৌঁছে দিয়ে অপেক্ষা করে আমার কী প্রত্যুত্তর আছে তোমাকে দেবার। বাতাস কী বেআক্কেলে
বলো। আমি বাতাসকে জানাবো কেন—আমার দহন জ্বালা।
No comments:
Post a Comment