প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

বার ঘরে যাই | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন /ছোটগল্প /৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা / ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প পারমিতা চ্যাটার্জি বার ঘ...

Wednesday, July 23, 2025

পাড়ভাঙা নদীর পাড়ে [২য় পর্ব] | মনোজ চ‍্যাটার্জী

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১১তম সংখ্যা/১৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
মনোজ চ‍্যাটার্জী
 
পাড়ভাঙা নদীর পাড়ে
[২য় পর্ব]

"আমি আর সন্দীপ ওর বিয়ের সময় খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম। ওর বিয়ের পর ওর বাড়িতে আমার খুব যাওয়া আসা ছিল। তখন ওর বৌ মধুকে আমার তিনকন‍্যার মৃন্ময়ী আর মেঘে ঢাকা তারার নীতার কম্বিনেশন মনে হত।"


পূর্বানুবৃত্তি এই প্রজন্মের জয়তী, স্বাগতালক্ষীর খুব কাছাকাছিই এই ভদ্রমহিলা। খুব শীঘ্রই উনি তাদের সারিতে স্থান পাবেন। অনুষ্ঠান শেষে গানের ঘোর কাটতেই আমার স্মৃতিশক্তি হঠাৎ সজাগ হয়ে উঠল, আরে এ তো আমার প্রথম কর্মস্থল লারসেন টুবরোর বন্ধু সন্দীপের স্ত্রী। তারপর…
 

কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি, প্রতিনিয়ত মধুর হাজার দোষের কথা ওর মুখে শুনে শুনে আমার কান পচে যেত।


আমি যদিও তখনো অবিবাহিত তবু মধুকে আমার বেশ ভাল লাগত, তার ছেলেমানুষ সুলভ সরলতা ও প্রচ্ছন্ন কিন্তু সবল পরিণত চরিত্রের মধ্যে আমি তিনকন‍্যার মৃন্ময়ী ও মেঘে ঢাকা তারার নীতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ খুঁজে পেতাম। কে জানে নারী সংস্পর্শের অভাবেই এমন মনে হত হয়তো।
ঘটনাচক্রে আমি বছর কয়েক পরে সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে একটা খবরের কাগজের অফিসে জয়েন করি। কোম্পানি আমাদের কয়েকজনকে পুনেতে ট্রান্সফার করে। আমি ছেড়ে দিলেও সন্দীপ ও বাকিরা কর্মোন্নতির আশায় পুনে চলে যায়। শুনেছিলাম পরে সন্দীপ মধুকেও পুনেতে নিয়ে যায়। তারপর যা হয়, আউট অফ সাইট আউট অফ মাইন্ড, একটু একটু করে আর যোগাযোগ থাকে না।
আজ হঠাৎ স্মৃতিশক্তি জেগে উঠতেই আমি আমার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের কনট‍্যাক্টে একেবারে হামলে পড়লাম। প্রায় হাজার লোকের মধ্যে সার্চবারে ইংরেজী ও বাংলায় সন্দীপ লিখেও নো রেজাল্টস ফাউন্ড। কিন্তু ওর নাম্বার তো আমার কাছে ছিল, গেল কোথায়? প্রথম প্রথম অনেক ফোন করেছি। হাল না ছেড়ে এস দিয়ে একটার পর একটা খুজতে লাগলাম। হায় রে, সন্দীপের নামে এ এর বদলে ও আর ডি এর জায়গায় বি লিখেছি, খেয়ালও করিনি। সার্চবারের আর দোষ কী? ওর নাম্বারে ফোন করতেই জানা গেল এটি একটি অকার্যকর নাম্বার। আরো কয়েকজনকে ব‍্যর্থ চেষ্টা করার পর একমাত্র দীপেনের সাথে যোগাযোগ হল।
-হ‍্যাঁ রে শুনেছিস, আমাদের সন্দীপের বৌ তো এখন বিরাট আর্টিস্ট, সেলিব্রিটি হয়েছে।
-কোন সন্দীপ?
-আরে আমাদের এলটিতে কাজ করে
-ও হ‍্যাঁ, সন্দীপ, কিন্তু ও তো পুনেতে আসার বছরখানেক পরেই এলঅ্যানটি ছেড়ে দেয়। শুনেছিলাম পুনেতে আসার কয়েকমাস পর থেকেই ওর বৌয়ের সাথে খুব অশান্তি হত, প্রতিদিন ঝগড়া ঝামেলা হত। এমনকি সন্দীপ নাকি স্ত্রীকে মারধোর অত‍্যাচার করত। একদিন পাড়ার লোকেরা আর সহ‍্য করতে না পেরে সন্দীপকে শাসিয়ে যায় তাকে পুলিশে দেবে। তার পরের দিনই ও চাকরি ছেড়ে বৌকে নিয়ে কলকাতায় ফিরে আসে। পরে শুনেছিলাম ওদের নাকি ডিভোর্স হয়ে গেছে। আর আমার কাছে তো কোন খবর নেই।
-হ‍্যাঁ রে, আমি রূসি বাংলা চ‍্যানেলে দেখলাম উদীয়মান রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মধুছন্দা রায়ের গান। এমনিতেই আজকাল রাস্তাঘাটে এনার গান খুব পপুলার হয়েছে। টিভিতে দেখেই আমার খুব চেনাচেনা লাগছিল, কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না। তারপর হঠাৎ মনে পড়তেই আর কাউকে না পেয়ে তোকে ফোন করলাম।
-কিন্তু ওতো গানটান করতো বলে কোনদিন শুনিনি বা দেখিনি ওর বৌ খুব একটা পড়াশোনাও করেনি, আর সেইজন্যই ওদের কোনদিন বনিবনা হয়নি, দ‍্যাখ তোর কোথাও ভুল হচ্ছে অনেকসময় কারো কারো মুখের অনেক মিল থাকে।
-অসম্ভব, মৃন্ময়ী আর নীতার কম্বোকে চিনতে আমার ভুল হবে না।
-মানে?
-আমি আর সন্দীপ ওর বিয়ের সময় খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম। ওর বিয়ের পর ওর বাড়িতে আমার খুব যাওয়া আসা ছিল। তখন ওর বৌ মধুকে আমার তিনকন‍্যার মৃন্ময়ী আর মেঘে ঢাকা তারার নীতার কম্বিনেশন মনে হত।
-যাও খোঁজখবর নিয়ে দেখো তোমার কম্বোময়ীকে খুঁজে পাও কি না, পারো তো আপন করে নিও তোমার ম্রিয়মাণ জ‍্যোৎস্নায়।
-কী যে বলো কবি, রাত আসে রাত যায় দেবদাসে পারু নাই।
 
ক্রমশ…

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)