প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

বার ঘরে যাই | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন /ছোটগল্প /৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা / ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প পারমিতা চ্যাটার্জি বার ঘ...

Wednesday, July 23, 2025

পাড়ভাঙা নদীর পাড়ে [৩য় পর্ব] | মনোজ চ‍্যাটার্জী

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১২তম সংখ্যা/২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
মনোজ চ‍্যাটার্জী
 
পাড়ভাঙা নদীর পাড়ে
[৩য় পর্ব]

"না আপনি নয়আপনি আমাকে আগের মতোই তুমি বলুন আর আমাকে মধু বলে ডাকবেনকাছের মানুষকে আমি দূরে যেতে দেব না।"


পূর্বানুবৃত্তি পুনেতে আসার কয়েকমাস পর থেকেই ওর বৌয়ের সাথে খুব অশান্তি হত, প্রতিদিন ঝগড়া ঝামেলা হত। এমনকি সন্দীপ নাকি স্ত্রীকে মারধোর অত‍্যাচার করত। তারপর…
 

পরেরদিন সকালেই আমি রওনা দিলাম আরামবাগ থেকে সাত কিমি দূরের বাদলকণা গ্রামে যেখানে সন্দীপের বিয়ে হয়েছিল। ওখানে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলাম মধু আর গ্রামে থাকে না, সন্দীপের সাথে ডিভোর্সের পর

বছরদশেক গ্রামে ছিল। নতুন করে আবার সে পড়াশোনা শুরু করে প্রাইভেটে গ্রাজুয়েশন করে আর তার সাথে গানের চর্চা করত এক গানের মাস্টারমশাই এর কাছে। তার স্বচ্ছল বাবা কোনোভাবেই আদরের মেয়ের জীবনটা নষ্ট হতে দিতে চাননি। অভিমানী ও জেদি মেয়েও সন্দীপকে বুঝিয়ে দিতে চেয়ে ছিল সে কোনো ফ‍্যালনা মেয়ে নয়। সবচেয়ে বড় অবদান ছিল গানের মাস্টারমশাইয়ের। উনি ধাপে ধাপে মধুকে কলকাতার বড় সংগীতশিল্পীর কাছে গান শেখার সুযোগ করে দেন। তাঁর ও মধুর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাবের জন্য মধু এখন কলকাতার এক নামকরা উদীয়মান রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। গ্রামে এখন তার ভাই থাকে, যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার কাছেই আমি সব জানলাম, এমনকি কলকাতায় তার বর্তমান ঠিকানাও পেলাম তার কাছে।
কলকাতায় ফিরেই আমি বেশ খোঁজাখুঁজি করে পৌঁছে গেলাম মধুছন্দা রায়ের ঠিকানায়। কিন্তু সিকিউরিটি গার্ড জানিয়ে দিল একমাত্র রবিবার বিকেলে তিনি তাঁর কুড়িজন ফ‍্যান্ ফলোয়ারদের সাথে সাক্ষাৎ করেন, তাঁর জন্য সুধীনবাবুর কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে, উনি সাক্ষাৎ-এর যোগ্য বিচার করে সময় দেন, বলে পাশের একটা ঘর দেখিয়ে দিল। আমি পাশের ঘরে সুধীনবাবুর কাছে সব কথা বললাম, সৌম্য চেহারার ভদ্রলোক সব শুনে বললেন, দাঁড়ান আমি একবার ম‍্যাডামকে ফোন করি।
-আপনার কপাল ভাল, ম‍্যাডাম আজ বাড়িতে আছেন, যান সিকিউরিটি আপনাকে ম‍্যাডামের কাছে নিয়ে যাবে‌।
চারুশিল্পের সুষমায় সজ্জিত একটি রুমে প্রবেশ করতেই,
-আসুন, সুবিমলদা আসুন, কতবছর পরে আপনাকে দেখব ভেবে আমি সুধীনবাবুর ফোনের পর থেকেই অধীর হয়ে আছি।
-বছর পনেরো পরে একজন চেনা মানুষকে দেখব ভেবে আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে, তা বলার নয়।
-কেমন আছেন আপনি, আমি একজন সেলিব্রিটির কাছে বেশ সংকুচিত হয়ে পড়ি।
-না আপনি নয়, আপনি আমাকে আগের মতোই তুমি বলুন আর আমাকে মধু বলে ডাকবেন, কাছের মানুষকে আমি দূরে যেতে দেব না।
-কী যে বলব মধু, তোমার এই অবিশ্বাস্য পরিবর্তন দেখে আমি মুগ্ধতায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। তুমি এত জনপ্রিয় না হলে হয়তো আর কোনদিন তোমার সাথে দেখা হত না।
বাদলকণা গ্রামে যাওয়া থেকে সব কথা শোনার পর মধু বলে,
-আপনি আমার খুবই সুহৃদ ছিলেন তাই এত আগ্রহ নিয়ে যোগাযোগ করলেন। আমি যে কী খুশি হয়েছি তা আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করব, তুমি হয়তো এটা পছন্দ করবে না, তবু কৌতূহল চেপে রাখতে পারছি না।
-সন্দীপের কথা?
-হ‍্যাঁ।
-বলুন।
-তোমার সাথে আর কোনদিন সন্দীপের দেখা হয়েছে?
-হ‍্যাঁ, একদিন রাস্তায় দেখা হয়েছিল, আবার বিয়ে করেছে, শ্বশুরের ফ্ল্যাটে থাকে। আমার ফোন নাম্বার চেয়েছিল, পাত্তা দিনি।
-তোমার কথা সব নিজের কাছে বিশ্বাস হচ্ছিল না, তাই নিজের চোখে একবার যাচাই করে গেলাম। চলি তাহলে।
-দাঁড়ান, দাঁড়ান, আপনার ফোন নম্বর বলুন।
বলেই নিজের ফোনে নাম্বার টিপে মধু আমাকে একটা মিসকল দিল।
-আর শুনুন, চলি নয় বলুন আসি, জীবনে স্বামী ছাড়া হয়তো বাঁচা যায়, প্রকৃত বন্ধুকে কখনো ছাড়া যায় না। যখনই ডাকব আসবেন কিন্তু।
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)