বাতায়ন/ডিভোর্স/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ, ১৪৩২
ডিভোর্স
| ছোটগল্প
সাহানা
ছোট
বড় মেঘের গল্প
[১ম পর্ব]
"পরিমলকাকু একগাল হেসে একটা ইয়াব্বড় চকোলেট ধরায়। সায়ন মা-এর দিকে তাকায়। মা ছোট্ট করে মাথা নাড়ে। আজ মায়ের মুখটা বেশ হাসিখুশি!"
-এই সায়ন, ওঠ্ ওঠ্ বলছি!
মায়া এক টানে চাদর ফেলে খিমচে
ধরে ছেলের চুল। বাপি চেঁচিয়ে ওঠে,
-ছাড়ো ওকে! শালা! নিজে তো কর্মনাশা, ছেলেটাকেও যত্ন করতে পারে না!
-চুউউপ্! যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা!
-তবে রে! আজ এর শেষ দেখে ছাড়ব!
বাপি শার্টের
হাতা গোটায়! মায়ার গলা ততক্ষণে দোতলার ফ্ল্যাট পেরিয়ে আকাশে পৌঁছেছে!
-আরে যাও যাও!
মুরোদ জানা আছে। মুদিখানার দোকান চালিয়ে সংসার সাজানো! কী
দরকার ছিল? দুবেলা দূমুঠো
খাবারের জোগাড় করতে পার না...
একটানা চেঁচিয়ে হাঁফাতে থাকে
মায়া! ইনহেলারটা ফেলে এসেছে পাশের ঘরে ড্রেসিং টেবলে। সায়ন এতক্ষণ মুখে দুটো আঙুল
পুড়ে দেখছিল সব। মায়ের মারে ওর কিস্যু হয়নি! ওসব ও গ্রাহ্যই করে না। কিন্তু... মা
আর বাপি দুজনেই এত ঝগড়া করে আজকাল! সবসময়ই কিছু না কিছু নিয়ে লেগেই আছে। ওর
স্কুলের বাকি বন্ধুরা কেউ তো এরকম কিছু বলে না! তাহলে শুধু কি ওর বাড়িতেই এসব হয়? ইনহেলারটা পড়ে আছে খাটের পাশে ড্রেসিং টেবলে। চট্ করে তুলে
মায়ের কাছে ছুটে আসে সায়ন। মায়া তখনও দেওয়াল ঘেঁষে প্রচন্ড হাঁফাচ্ছে! বাপি জ্বলন্ত
চোখে দুজনকে দেখে দড়াম্ করে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়! এখানেই সায়নের খারাপ লাগে। বাবা
আর মা দুজনেই তার প্রিয়! এখন, এই ঝগড়ার ফলে বাবা না
খেয়ে কারখানায় চলে গেল! মা-ও শুধু তাকে ভাত বেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়বে! ভীষণ মন খারাপ
হয়ে যায় সায়নের। পড়ার টেবিলের ওপাশে জানলাটা খুললেই পাশের তিনতলা বাড়ির ছাদটা চোখে
পড়ে। রিঙ্কি-পিঙ্কি এইসময় স্কুলে যাওয়ার আগে ছাদে উঠে ছুটোছুটি করে। ওদের হই-হুল্লোড়
শোনা যায় দূর থেকেই। মাঝেমধ্যে ওরা ট্যাঙ্কের এপাশে এসে হাত নাড়ে! ওকে ডাকে। আচ্ছা, ওদের বাবা-মাও কি... ঝগড়া করে?
অশান্তির মাঝেই কাটল আরও বেশ
কটা দিন। হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে ফিরতেই... সায়ন দেখল তাদের একচিলতে খাটে বসে আছে
পরিমলকাকু। পরিমলকাকু সায়নের বাবার বন্ধু। আগে প্রায়শই এ বাড়িতে আসত। মাঝে বেশ
কিছুদিন তাকে দ্যাখেনি সায়ন! আজ আবার কী মনে করে এলো কাকু? পরিমলকাকু একগাল হেসে একটা ইয়াব্বড় চকোলেট ধরায়। সায়ন মা-এর
দিকে তাকায়। মা ছোট্ট করে মাথা নাড়ে। আজ মায়ের মুখটা বেশ হাসিখুশি! চলে আসতে আসতে
শেষ কথাগুলো কানে ভেসে আসে...
-আর পারছি না পরিমল! এবারে মিউচুয়াল সেপারেশন নিতেই হবে।
ছেলেটা বড় হচ্ছে! তুমি ভাবতে পার, একটা পয়সা ঠেকায় না!
এই পর্যন্ত শুনেই... দরজা
ভেজিয়ে দিয়েছে মা! সায়নের মনে বড্ড ভয় চেপে ধরে! সেপারেশন মানে বিচ্ছিন্ন হওয়া, ও জানে। মা কি আলাদা... বাবাকে ছেড়ে! পেছন ফিরে বন্ধ দরজার
দিকে তাকায়। দরজাটা চেপে বন্ধ। কী বলছে ওরা ভেতরে?
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment