প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

ঝড়ের রাতে | বিদ্যুৎ মিশ্র

বাতায়ন / ছড়া/৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা/ ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছড়া বিদ্যুৎ মিশ্র   ঝড়ের রাতে   ঝড়ের...

Wednesday, July 23, 2025

ছোট বড় মেঘের গল্প [২য় পর্ব] | সাহানা

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১১তম সংখ্যা/১৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
সাহানা
 
ছোট বড় মেঘের গল্প
[২য় পর্ব]

"মা আর পরিমলকাকু হেসে হেসে কথা বলছিল! ওদের পাশ কাটিয়ে বাবার কাছে গিয়ে হাতদুটো চেপে ধরেছিল সায়ন। চমকে উঠে বাবা হেসেছিল! হেরে যাওয়া মানুষের হাসি!"


পূর্বানুবৃত্তি ইনহেলারটা পড়ে আছে খাটের পাশে ড্রেসিং টেবলে। চট্ করে তুলে মায়ের কাছে ছুটে আসে সায়ন। মায়া তখনও দেওয়াল ঘেঁষে প্রচন্ড হাঁফাচ্ছে! বাপি জ্বলন্ত চোখে দুজনকে দেখে দড়াম্ করে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়! তারপর…
 

সায়ন একচিলতে বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসে। ছোট্ট বাড়িটায় দুটো ঘর মাত্র! একখানা বড়, অন্যটা ছোট্ট... সায়ন পড়াশোনা করে। বারান্দা ঢেকে রান্নাঘর। ওপাশের রাস্তাটা ধরে বাবা আসছে মনে হচ্ছে! সায়ন একবার বন্ধ দরজা, একবার রাস্তার

দিকে দ্যাখে। বাবা কেমন টলতে টলতে... এই রে! পড়ে যাবে না তো! দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরবে? নাহ্ থাক্! আগের দিন বাবা ওকে ছিটকে ফেলে দিয়েছিল। পেছনে খট্ করে আওয়াজ হয়। মা বারান্দায় এসেছে! মায়ের মুখে ঘাম, আঁচলে মুছছে! পরিমলকাকু কি চলে গেল?
সেই রাতে ঝেঁপে বৃষ্টি এলো। সায়নের পড়ার টেবলটা একদম ভিজে গিয়েছে... সায়ন কিছুতেই আটকাতে পারছে না জানলাটা! পাশের ঘরে আবার ঝগড়া শুরু হয়েছে। মা-বাবার কথা কাটাকাটি! বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে জোর গলায় মা বলছে,
-আমি কিছুতেই থাকব না। পরের মাসেই সায়নকে নিয়ে চলে যাব বাপের বাড়ি।
-হ্যাঁ তাই যাও! কে তোমাকে বসিয়ে খাওয়ায় দেখি! শালা! খালি মুখেই তড়বড়!
-কী বললে? তুমি কত রোজগার করো শুনি? সব তো ঢালছ ওই বৃন্দার পায়ে।
-চুপ্! একদম চুপ্!
-না, চুপ করব না। কাল সকালেই যাব পার্টি অফিসে, মহিলা সমিতিতে। কিছু জানি না ভেবেছ?
-কী জানিস তুই? নিজে যে ফস্টিনষ্টি করছিস পরিমলের সাথে? ভাবছিস জানি না?
-মুখ সামলে কথা বলো!
-চোওওওওপ।
চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গে ঠাস্ করে শব্দ! সায়ন কানে হাত চাপে! ওর দশ বছরের জীবনে বড্ড অশান্তি! এক লাফে মনে হয়, বয়েসটা তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে!
 
*****
তিনমাস পর।
সায়ন স্কুল থেকে ফিরছিল। সায়ন এখন মায়ের সঙ্গে চেতলার মামার বাড়িতে থাকে। বাবা-মা আলাদা হয়ে গিয়েছে অনেকদিন। আদালতে শেষ দিনটায় বাবাকে দেখে বুকটা মুচড়ে উঠেছিল সায়নের। যেন একটা হেরে যাওয়া ছায়ামানুষ! চোখের তলায় কালি, চুল উস্কোখুস্কো!
মা আর পরিমলকাকু হেসে হেসে কথা বলছিল! ওদের পাশ কাটিয়ে বাবার কাছে গিয়ে হাতদুটো চেপে ধরেছিল সায়ন। চমকে উঠে বাবা হেসেছিল! হেরে যাওয়া মানুষের হাসি!
চুলগুলো ঘেঁটে দিয়ে ফিফিশিয়ে বলেছিল,
-তোর কাছে আসব, দেখতে! দু সপ্তাহে একবার। বুঝলি?
সায়ন ঘাড় নেড়েছিল!
স্কুলের গেটের বাইরে একটা জামগাছ। প্রচুর জাম ফলেছে, নীচটা বেগুনি জামফলে বিছোনো। ছায়ায় মিশে দাঁড়িয়ে আছে বাবা! সায়নের বাবা... রোগা পাতলা কারখানার শ্রমিক। এখন দাড়ি কেটেছে, একটা পরিষ্কার শার্ট-প্যান্ট পরেছে। হাতে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ। সায়ন জানে, ওর মধ্যে আছে একটা ছোট্ট কৌটো ভর্তি রুটি, তরকারি। আর আছে দু টাকার লেবু লজেন্স। ওরা আজ পার্কে বসবে। রুটি খাবে আর গল্প করবে! আজ পুরো দিনটাই সায়ন আর তার বাবার!
আকাশে মেঘ জমছে! একটা ছোট মেঘ আর একটা বড় মেঘে মিশছে! আজ, এখন মা-ও যদি আসে দুজনের মাঝে! কী ভালোই যে হয়! দীর্ঘশ্বাসটা চেপে রাখে বুকে!
সায়ন গেট ছাড়িয়ে এগিয়ে যায়।
 
সমাপ্ত

1 comment:

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)