বাতায়ন/ডিভোর্স/ধারাবাহিক
গল্প/৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ, ১৪৩২
ডিভোর্স
| ধারাবাহিক
গল্প
ঋচা
কলঙ্ক
কেন চাঁদে
[১ম পর্ব]
"ওদের দুজনেরই এটা দ্বিতীয় বিয়ে, দুজনেই ডিভোর্স নামক বিষাক্ত সাপের মুখে পরে একেবারে ল্যাজ থেকে শুরু করেছে, তাই তিয়াসা যেন একটু বেশি সতর্ক।"
-আর কতক্ষণ?
প্রশ্নটা পেছনের তিন নম্বর সারির চেয়ার থেকে নিলয়ের কানে এলো, নিলয় মাথা না ঘুরিয়েই হাতটা তুলে ‘ওয়েট ওয়েট’ ইশারায় বুঝিয়ে দিলো। কথাটা যে ওর উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, প্রায় অবাঙালি এই যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে বুঝতে অসুবিধা হয়নি নিলয়ের। নিশ্ছিদ্র ঘন কালো বৃষ্টিঝরা রাতে চেন্নাই স্টেশনের অনতিদূরে ডিএন ট্রাভেলসের প্রতীক্ষালয়ে বসে থাকা এক বাঙালি দম্পতি তিয়াসা আর নিলয়।
এই ট্রিপটার জন্য জেদ করে
তিয়াশা নিলয়কে রাজি করিয়েছে, বিয়ের ন মাস পর ওরা
যাচ্ছে অর্ধ মধুচন্দ্রিমায়। অর্ধই বটে,
তিয়াসা
যাচ্ছে ওর হনিমুনে নিলয় আর তিয়াসার জেদ পূরণে। বিরক্তি সুস্পষ্ট নিলয়ের মুখে...। তবে এই স্ট্যান্ডে এসে
খাবার কিনে আনার পর থেকে কোনোও এক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় নিলয় খুশি, ব্যাপারটা লক্ষ্য করে
তিয়াসার জোর করে হানিমুন যাওয়ার বোঝাটা একটু হালকা লাগল। চারিদিকের
ঘুরঘুটি কালো অন্ধকারে মোমের আলো নির্ভর এই অসহায় আবছায়াতেও
তিয়াসা দেখতে পাচ্ছে, নিলয় পাশে বসা হুডি
পরা একজনের সাথে বেশ গল্প জমিয়েছে।
নিলয়ের খুশি, অর্ধ হানিমুনের শতাংশটা একটু হলেও বাড়িয়েছে। ‘হানিমুন’ শব্দটা
লাভস্টোরি লাভার তিয়াসার কাছে সোনালী চিন কাগজে মোড়া নীল নীল স্বপ্নের মতো লাগত- যেন
কোনো রূপকথা পুরে– জীবনের সবথেকে রঙিন পরাগ মেখে দুটো মন এক হয়ে যায়...
যদিও বৌভাতের পরদিনই হানিমুন
যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু বিয়ের তিন মাস আগে তিয়াসার একটা অপারেশন সবকিছু বদলে
দিয়েছিল। অপারেশনের আগে তিয়াসা নিলয়কে অন্যমেয়ে বিয়ে করতে বললে, নিলয় বলেছিল,
-ভালবাসি
তোমাকে, বিয়ের পর আমার কোনও অসুবিধে
হলে তুমি কি আমায় ছেড়ে দেবে?
তিয়াসা খুব খুশি হয়েছিল
সত্যিকারের ভাল মানুষ খুঁজে পেয়েছে জেনে। মেজর অপারেশন- লং জার্নি- হানিমুন স্থগিত
রইল অনির্দিষ্ট কালের জন্য। বিয়ের দু মাস কাটতে না কাটতেই
তিয়াসা একটু কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য হাঁপিয়ে উঠেছিল। যেন কিছুতেই ও ওর জীবনসাথীর সাথে একাত্ম
হতে পারছিল না... দিনশেষের ক্লান্ত বিছানাতেও একটু কথা হত না দুজনের।
ওদের দুজনেরই এটা দ্বিতীয়
বিয়ে, দুজনেই ডিভোর্স নামক বিষাক্ত
সাপের মুখে পরে একেবারে ল্যাজ থেকে শুরু করেছে, তাই তিয়াসা যেন একটু বেশি সতর্ক।
অপারেশনের পর ছ
মাস অতিক্রান্ত, এবার তো কোথাও যাওয়া
যেতেই পারে। কিন্তু নানারকম অজুহাত দেখিয়ে নিলয় কিছুতেই হনিমুনে যেতে
রাজি হচ্ছিল না। একটা ক্ষোভ পুষে কাটছিল তিয়াসার দিনরাত।
অপারেশনের
এগারো মাস পর ওরা রুটিন চেকআপে এসেছিল ভেলোরে, এই সুযোগে হনিমুনটা যাতে না হাত ফস্কায় তার জন্য খুব
চেষ্টা করেছে তিয়াসা। গুগল সার্চ করে প্লেস খোঁজা, নিলয়ের কাছে আবদার করা, সবই সেরে রেখেছিল, যদিও নিলয় কখনোই
পূর্ণ সম্মতি দেয়নি।
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment