প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

ঝড়ের রাতে | বিদ্যুৎ মিশ্র

বাতায়ন / ছড়া/৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা/ ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছড়া বিদ্যুৎ মিশ্র   ঝড়ের রাতে   ঝড়ের...

Saturday, August 9, 2025

মুনিয়াকে বিজিত | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী


 

বাতায়ন/যুগলবন্দি/৩য় বর্ষ/১তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা/২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২
মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | যুগলবন্দি | অজয় দেবনাথ ও সুচরিতা চক্রবর্তী
অজয় দেবনাথ

 
মুনিয়াকে বিজিত

"স্বপ্নের স্বর্গ থেকে বাস্তবের খটখটে মাটিতে। ওর জীবনে আর কিছুই করা হল না। মেয়েটি জাস্ট ক্ষমার অযোগ্য, বর্ণ-ক্রিমিনাল বললেও কম বলা হয়।"


"সেদিন তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছিলাম। কী যে ভালবেসেছিলাম তোমাকে তার হিসেব করা যাবে না। লোকে বলে জীবনের প্রথম প্রেম ভোলা যায় না।"




মুনিয়া,
 

হাসালে মুনিয়া, সত্যিই হাসালে তুমি। তোমার কী মনে হয়, ভালবাসা শুধুই শরীর নির্ভর! সেখানে মনের কোনও ভুমিকাই নেই! আশ্চর্য! হ্যাঁ, শরীরের ভুমিকা নিশ্চয়ই আছে তবে মন-বিনা প্রেম নয়। তবে আর বারবধূর সঙ্গে তফাৎ কোথায়!

 
তোমার চিঠি পেয়ে একজনের কথা মনে পড়ল। আমি জানি আমাদের মধ্যে তৃতীয় কোনও মানুষের উপস্থিতি তুমি পছন্দ করতে না, কিন্তু আমার খুব বলতে ইচ্ছা করছে। তাই তোমার অনুমতির তোয়াক্কা না করে বলেই ফেলি। বৃহত্তর অর্থে আমার বন্ধু বলতে পার, আসলে সে আমার পরিচিত, আমাদেরই পার্টিতে সক্রিয় ছিল একসময়। গানবাজনা করত, নরম মনের মানুষ। এক মেয়ে তার থেকে পার্টিও কেড়ে নিল, গানবাজনাও করতে দিল না। অথচ মজাটা কোথায় জানো—
তখনও মোবাইল আসেনি। চিঠি ছিল মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম, এক ট্রাঙ্ককল ছাড়া। ছেলেটি পত্রমিতালি করত। সে অনেকেই করে। কিন্তু… ছেলেটি প্রেমে পড়ল মেয়েটির। সিরিয়াস প্রেম। ছবি দেওয়ানেওয়া হয়েছিল ওদের মধ্যে। চিঠির সার্বিক উপস্থাপনা ও ছবি দেখে ছেলেটি ফিদা। পার্টিতেও অনেককেই দেখিয়ে ছিল মেয়েটির ছবি, আমিও দেখেছিলাম। ওকে বলেছিলাম, সামনাসামনি না দেখে বিশ্বাস করিস না। শুনল না, আসলে শোনার অবস্থা ছেড়ে অনেক দূরে চলে এসেছে তখন। মেয়েটি বাংলাদেশি, উত্তরবঙ্গে রায়গঞ্জে মামারবাড়িতে বেড়াতে এল। খবর পাওয়া মাত্রই ছেলেটি সব ফেলে ছুটল রায়গঞ্জ। দেখল… ছবির মেয়ে আর বাস্তবের মেয়ে এক নয়। পরে খবর নিয়ে জেনেছিল, যে চিঠি ও পেত, সেখানেও কারচুপি। একজনের হাতের লেখা, আর একজনের বলে দেওয়া। অর্থাৎ একটা চিঠির পিছনে চারজন। ছেলেটি দুম করে পড়ে গেল। স্বপ্নের স্বর্গ থেকে বাস্তবের খটখটে মাটিতে। ওর জীবনে আর কিছুই করা হল না। মেয়েটি জাস্ট ক্ষমার অযোগ্য, বর্ণ-ক্রিমিনাল বললেও কম বলা হয়।
 
তা, আমাদের সম্পর্ক কি শুধুই শরীরের ওপরে নির্ভর করে গড়ে উঠেছিল? তবে কি এত বছর কেউ কাউকে না দেখে টিকে থাকত! খুব জানতে ইচ্ছে করে তোমার কাছে।
 
তোমাকে আবারও বলছি, চলে এস। তোমাকেই করব গ্রহণ। অবশ্য তার আগে আরও কিছু কথা তোমার জানার আছে। সেসব শোনার পরেই নাহয় সিদ্ধান্ত নিও। কিন্তু আর একদিন। আজ আর লিখতে ইচ্ছে করছে না।
 
ভাল থেক, মিষ্টি থেক। আমার মিষ্টির মুনিয়া…
 
ইতি—
বিজিত
 
যুগলবন্দি | সুচরিতা চক্রবর্তী ও অজয় দেবনাথ
সুচরিতা চক্রবর্তী
 
চির সখা,
 
চির সখাই বটে, কলেজের সেই প্রথম বর্ষের পর্ণা আর তৃতীয় বর্ষের বিজিত। ভীরু চোখ আর দাপুটে ইউনিয়ন লিডার। ছোট থেকেই গার্লস স্কুলে পড়া আমি কোএডুকেশন কলেজে এসে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছিলাম। ছেলেরা মেয়েরা কত সহজ স্বাভাবিক বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। আমি অবাক হয়ে দেখতাম। তখন তোমার কলেজজোড়া নাম, দেওয়ালে-দেওয়ালে তোমার নামের পোস্টার। প্রথম-প্রথম তত গুরুত্ব দিইনি কিন্তু যেদিন কমনরুমে তোমার বক্তৃতা শুনলাম সেদিনই, সেদিনই একটা কিছু ঘটেছিল মনে। তুমি তো গুরুত্ব দাওনি কিন্তু কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে আমার গান শুনে এর-ওর কাছে খবর নিতে শুরু করলে তারপর কীভাবে যে এত কাছাকাছি—
ভাবতেই আজও গায়ে শিহরণ জাগে। প্রতিটি ঘটনা ভীষণরকম মনে আছে জান তো! আমি টিফিন নিয়ে যেতাম তোমাকে খাওয়াব বলে। সেই মনে আছে, একবার দোতলা বাসের ওপরে তলায় কেউ ছিল না, আমি চাউমিন নিয়ে গিয়েছিলাম, সেদিন তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছিলাম। কী যে ভালবেসেছিলাম তোমাকে তার হিসেব করা যাবে না। লোকে বলে জীবনের প্রথম প্রেম ভোলা যায় না। আর আমার জীবনে তো একবারই প্রেম এল বাদবাকি সব বাধ্যতামূলক।
 
কী লিখব জানি না আজ ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। বুক ফেটে যাচ্ছে। ভালবাসা যে শরীর নির্ভর নয় তার প্রমাণ তো আমরা দুজন। তাই না!
 
আজ যদি দেখতাম তুমি সংসারী হয়েছ তাহলে হয়তো এত খারাপ লাগত না। হ্যাঁ বলো তোমার শর্তের কথা শুনি। আমার বিজিত কী কী শর্ত রাখছে পর্ণাকে ফিরিয়ে নিতে তা শোনার অপেক্ষায় রইলাম।
 
পর্ণা

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)