প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

ঝড়ের রাতে | বিদ্যুৎ মিশ্র

বাতায়ন / ছড়া/৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা/ ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছড়া বিদ্যুৎ মিশ্র   ঝড়ের রাতে   ঝড়ের...

Saturday, August 9, 2025

সন্ধ্যার পর কেউ থাকে না | উলন পাল রকি

বাতায়ন/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/১তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা/২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২
মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প
উলন পাল রকি
 
সন্ধ্যার পর কেউ থাকে না

"সে পুলিশকে নিয়ে যায় আবার ভিলায়। খোঁজ শুরু হয়। সেখানে গোপন সিঁড়ি দিয়ে গিয়ে একটা গোপন কেবিন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে পাওয়া যায় নিখোঁজ হওয়া এক ব্যক্তির একটি পুরোনো জামা।"


চাঁদের আলোয় ভেজা চারপাশটা শান্ত, যেন কিছু ঘটার অপেক্ষায়। কুমারডাঙা ছোট একটি গ্রাম, নদীর ধারে, ঢাকার বাইরে। এখানে একটি পুরনো বাড়ি আছে, স্থানীয়রা বলে সিরাজ সাহেবের ভিলা। কিন্তু কেউ কখন সন্ধ্যার পর বাড়িটিতে পা রাখে না।

 
গত দশ বছরে তিনজন সেখানে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে নিখোঁজ হয়েছে। কাউকে আর পাওয়া যায়নি। পুলিশ একবার তদন্ত করেছিল, কিছুই পায়নি। গ্রামের মানুষরা বলাবলি করে— ওখানে কিছু আছে… অলৌকিক কিছু।
রিফাত, একজন সাংবাদিক। বয়স ত্রিশের কোঠায়। রহস্যের প্রতি তার দারুণ আকর্ষণ। সে শোনে এই ভিলার গল্প, এবং সিদ্ধান্ত নেয় নিজে গিয়ে একটা রাত কাটাবে। তার পরিকল্পনা খুব সরল, ক্যামেরা, ভয়েস রেকর্ডার, নোটবুক, একটি টর্চলাইট আর একটি কুকুর নিয়ে সে সন্ধ্যার ঠিক আগে ভিলায় প্রবেশ করে।
প্রথমদিকে কিছুই ঘটেনি। ঘরটা অন্ধকার, ধুলোয় ভরতি, অনেক পুরনো ছবি, কাঠের মেঝে। রিফাত ক্যামেরা বসিয়ে দেয় বিভিন্ন কোণে। মাঝরাতে, হঠাৎ তার ক্যামেরার একটিতে দেখা যায়, একটা ছায়ামূর্তি ধীরে-ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। কিন্তু বাড়িতে সে ছাড়া আর কেউ থাকার কথা না! সে টর্চ নিয়ে সিঁড়ির কাছে যায়, দেখে কিছু নেই। কিন্তু নিচের তলায় একটা দরজা খোলা পাওয়া যায়, যেটা সন্ধ্যায় বন্ধ ছিল। সেখানে একটা পুরনো বেসমেন্ট, বহু পুরনো কাগজ, নোট, ছবি, আর এক জোড়া পুরনো রক্তমাখা জামা! রিফাত নোটগুলো পড়ে বুঝতে পারে, এই বাড়িতে একসময় সিরাজ সাহেব নামে এক জমিদার থাকতেন। তিনি গ্রামের মানুষদের ওপর অত্যাচার করতেন। একদিন গ্রামের লোকেরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে এবং লাশটা এই বেসমেন্টেই পুঁতে রাখে। তাদের বিশ্বাস ছিল, তার আত্মা প্রতিশোধ নিতে ফিরে আসবে। আর প্রতিবার কেউ এখানে রাত কাটালে, সেই আত্মা তাকে দেখে ফেলেআর সে ফিরে যায় না।
রিফাত ভয় পেলেও, আতঙ্ক দূরে রেখে সকালে সব কিছু নিয়ে ফিরে আসে। সে বিশ্লেষণ করে দেখতে পায়, বেসমেন্টে একটা গোপন সিঁড়ি আছে, যেটা ভিলার পেছন দিয়ে জঙ্গলের দিকে যায়। তার মানে, নিখোঁজ হওয়া মানুষগুলো হয়তো অলৌকিক কারণে না, বরং তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
সে পুলিশকে নিয়ে যায় আবার ভিলায়। খোঁজ শুরু হয়। সেখানে গোপন সিঁড়ি দিয়ে গিয়ে একটা গোপন কেবিন খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে পাওয়া যায় নিখোঁজ হওয়া এক ব্যক্তির একটি পুরোনো জামা। এবং কিছু অত্যাধুনিক সরঞ্জাম, ড্রাগ মেশানো খাবার, চেতনানাশক ইঞ্জেকশন। আরও পাওয়া যায় কিছু বিদেশি পাসপোর্ট।
অবশেষে ধরা পড়ে এক ব্যক্তি, যে মূলত গ্রামের পুরনো জমি দখলের জন্য এই ভয়ের গল্প তৈরি করেছিল। মানুষ যাতে ওই জায়গায় না আসে, না বসবাস করে। সে চুপচাপ মানুষদের উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে তাদের চিরতরে সরিয়ে দিত।
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)