ধারাবাহিক
গল্প
ঋচা
কলঙ্ক
কেন চাঁদে
[২য় পর্ব]
"এইসব প্রশ্নের উত্তর নিলয় মাথার আর হাতের ইশারায় দিয়ে যাচ্ছে। আকাশ-পাতাল চিন্তার মধ্যেও তিয়াসার মনে বার বার একটা কথা আসছে, নিলয় কার সাথে... এত কথা বলছে...!"
পূর্বানুবৃত্তি এই ট্রিপটার
জন্য জেদ করে তিয়াশা নিলয়কে রাজি করিয়েছে, বিয়ের ন মাস পর ওরা যাচ্ছে অর্ধ মধুচন্দ্রিমায়। অর্ধই বটে, তিয়াসা যাচ্ছে ওর হনিমুনে নিলয় আর তিয়াসার
জেদ পূরণে। বিরক্তি সুস্পষ্ট
নিলয়ের মুখে। তারপর…
হসপিটালের কাজ দ্রুত শেষ হয়ে হাতে যথেষ্ট সময় থাকায় তিয়াসার খুশি ডোবা থেকে ঝিলের রূপ নিয়েছিল... একটা ট্রাভেল এজেন্সি থেকে মুন্নার যাওয়ার সমস্ত খোঁজ নেওয়া এবং নিলয়কে বাড়ি ফেরার টিকিট করতে বাধা দেওয়া-
বেশ জোরের সাথেই করেছিল। তারপর লজে ফিরে নিলয় যখন বলেছিল,
-বিয়ের এতদিন পর কীসের হনিমুন?
অভিমানের প্রতুলতা সহ্য করতে
না পেরে তক্ষুনি তিয়াসা ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। এই ভিনদেশে মনখারাপ করে কোথায়ই
বা যাবে। সারাদিন হসপিটালের নানা জায়গায় বসে বেদনা অনুরণন করে শেষে ক্লান্ত হয়ে
হসপিটাল চত্বরের চার্চে বসেছিল। চোখে-মুখে কেমন টান ধরা ভাবটা ক্রমশ বাড়লেও লজের ঘরে ফিরতে ইচ্ছে হয়নি ওর, নিলয়কে কেমন পর পর মনে হচ্ছিল।
বিকেল পাঁচটা, চার্চের ঘড়ি জানান দিলো ডং ডং শব্দে, তিয়াসা বুঝতে পারছিল না কী করবে, এমন সময় ওর পাশে নিলয় এসে প্রায় হাঁটা অবস্থাতেই বলেছিল,
-ঘরে চলো, প্যাকিং করো আজই বাড়ি যাব।
আরও কিছুক্ষণ চার্চ ও
রাস্তার ধারের বাউন্ডারিতে বসে সন্ধ্যার পর তিয়াসা লজে ফিরেছিল। নিলয় টিভিতে সিনেমা দেখছিল। তিয়াসা ঘরে ঢুকে চুপ করে খাটে বসেছিল
অনেকক্ষণ।
-খেয়ে নাও।
-আমার কথা তোমাকে ভাবতে হবে না।
-খেয়ে চলো মুন্নারের টিকিট কাটতে, এখন না নিয়ে গেলে পুরো একবছর কথা শোনাবে, এটা হনিমুন নয় এমনি ঘুরতে যাচ্ছি। মুন্নার পুরোটা ঘুরতে
তিনদিন লাগে, সেই হিসেবে নিলয় সমস্তটা
প্ল্যান করে হোটেল, ফেরার ট্রেন, সব অনলাইন বুক করে নিয়েছিল।
চারিদিকে নিকষ অন্ধকার... অঝোর
বৃষ্টিধারা আর লোডশেডিং। দুটো মাঝারি আকারের মোম প্রায় শেষের পথে। এই আলোতে দেয়াল
ঘড়িটাও ঠিক মতো বোঝা যাচ্ছে না, তিয়াসার মোবাইলটার দম
শেষ, তিয়াসার,
-কটা বাজে? বাস কি লেট? আর কতক্ষণ?
এইসব প্রশ্নের উত্তর নিলয়
মাথার আর হাতের ইশারায় দিয়ে যাচ্ছে। আকাশ-পাতাল চিন্তার
মধ্যেও তিয়াসার মনে বার বার একটা কথা আসছে, নিলয় কার সাথে... এত কথা বলছে...!
একটা বড় বাস সামনে আসতে দেখে
তিয়াসা ভাবল... দীর্ঘ অপেক্ষার শেষ হল বোধহয়। নিলয় এজেন্সির অফিসের
কাউন্টার থেকে তিয়াসাকে হাত নেড়ে বোঝাল এই বাসটাই-
-উফফ বাঁচলাম।
অস্ফুটে বলে
উঠল তিয়াসা। বাসের পেছনের ডিকিতে সমস্ত
ব্যাগ চলে গেল, ঝাড়া হাত-পা হয়ে হালকা
হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে বাসে উঠল ওরা। রাতের খাবার একসাথে খাওয়ার
সময় তিয়াসা এক অদ্ভুত খুশিমাখানো মুখ দেখছে নিলয়ের, অবাক হবে না খুশি হবে বুঝে উঠতে পারছে না। বাসের দুলুনিতে
খুব সহজেই তিয়াসা ঘুমিয়ে পড়ল। পরদিন একদম ভোরবেলা বাসটা দাঁড়াল, একটাই খাবারের দোকান- অনেকটা জায়গা নিয়ে। যত দূর চোখ
যায়, পশ্চিমঘাট পাহাড় আর ছোটগাছের
জঙ্গল। সূর্য তখনও মুখ দেখায়নি। হালকা ঠান্ডা- হালকা আলো– পাখপাখালির কিচিরমিচির, পুরোনো ক্লান্ত দিনের খোলস ছেড়ে একটা নতুন তাজা দিন! নিলয়ের
যে ঘুম হয়নি সেটা ওর ঢুলুঢুলু চোখ আর লম্বা লম্বা হাই বলে দিচ্ছিল। তবুও নিলয়
‘বেশ খুশি‘ ব্যাপারটা ভাবিয়ে তুলল তিয়াসাকে, ঘুম না হলে তো নিলয় ভীষণ বিরক্ত থাকে!
একটি মেয়েকে ফোনে বাংলায় কথা
বলতে শুনল তিয়াসা, চমৎকার ভঙ্গিতে কথা
বলছে। খুব সাধারণ দেখতে, ঘাড় নাড়িয়ে থুতনি
দুলিয়ে, সুর দিয়ে কথা বলা মেয়ে, আকর্ষক- প্রায় সবাই ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে। মেয়েটি ওদের বাসেই
উঠল। যাক ওরা ছাড়াও বাঙালি আছে এখানে, নিলয় তো এমনিতেই মিতভাষী, তার ওপর রেগে গিয়ে
এখন আরও কম কথা বলছে, মেয়েটির সাথে পরিচয়
করার ইচ্ছে হল তিয়াসার।
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment