প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

বার ঘরে যাই | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন /ছোটগল্প /৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা / ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প পারমিতা চ্যাটার্জি বার ঘ...

Wednesday, July 23, 2025

কলঙ্ক কেন চাঁদে [৪র্থ পর্ব] | ঋচা

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১৩তম সংখ্যা/৩০শে শ্রাবণ, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
ঋচা
 
কলঙ্ক কেন চাঁদে
[৪র্থ পর্ব]

"পরকীয়া বৈধ করেছে যারাতারা কী জানে পরকীয়াকারী জীবনসাথীর সাথে কেমন লাগে ঘর করতে...সবাই কী পারে অন্যের বুকে নিজেকে সাজাতে...এর সমাধান কী আবার ডিভোর্স?"


পূর্বানুবৃত্তি বিয়ের আগেই নিলয় নিজের প্রথম প্রেম- রত্না সরকার-যাকে দেখানোর জন্য মাকে কলেজে নিয়ে গিয়েছিল... কথাটা তিয়াসাকে বলেছিল। নামটা শুনতেই তিয়াসার বুকের মধ্যে কেমন চিনচিন করে উঠল। তারপর…
 

নিলয় কি এখন রত্নাকেই ভালবাসে? তবে কি ওর এবারের সংসারটাও… লোকে কী বলবে... সবাই কী তিয়াসাকেই…

মানিয়ে নিতে পারে না, সংসারী নয়… এসব বলবে? স্বামী অন্যকাউকে ভালবাসে- আচ্ছা এটা জেনেও কি তাকে ভালবাসা যায়? আর ভাল না বেসে কী সারাজীবন সাথে থাকা যায়? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কেমন শ্বাসরোধ হয়ে এলো-
-তিয়াসা... তিয়া...
নিলয়ের ডাকে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে ঘরে গিয়ে বলল,
-রত্নাদি এলো না তো এখনও?
-না ওর কাল ইন্টারভিউ, রেস্ট নেবে বলল তো।
-রত্নাদি আর বিয়ে করবে না?
-কী জানি... বলছিল তো ওর কেসটা না মেটা পর্যন্ত কিছু করতে পারছে না।
-তাইতো... এত কম বয়েস... সন্তান তো আর জীবনসাথীর অভাব পূরণ করতে পারে না... এরপর ভাল করে দেখেশুনে বিয়ে করতে বোলো। দু-দুটো বিয়ে যদি না টেকে তবে অনেক নিন্দা হয়... তাইনা?
কথাগুলো তিয়াসা রত্নার জন্য বললেও যেন নিলয়কেই বলল... আমাদের দুজনেরই এটা দ্বিতীয় বিয়ে... রক্ষা করো বিয়েটা...
দ্বিতীয় দিন সকাল, নিলয় দু-তিনবার রত্নাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করল, ইন্টারভিউতে ওর সাথে যাবে কিনা রত্না প্রতিবারই না করাতে যেন ব্যাপারটা মনোমতো হল না নিলয়ের। আজ ওরা একটা ক্যাব নিয়েছে ঘোরার জন্য ক্যাব ড্রাইভারকে প্রথমেই নিলয় জানিয়ে দিল, ওরা আজই শেষ ঘুরবে, বিশেষ বিশেষ জায়গাগুলো যেন ঘুরিয়ে দেয়। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে পৌঁছল ইরাভিকুলাম ন্যাশনাল পার্কে, দক্ষিণের এভারেস্ট আনাইমুদি পাহাড়ের পাদদেশে এই পার্কআজ রত্না নেই ওদের মাঝে, তিয়াসা যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে... চেষ্টা করছে প্রেমিক-প্রেমিকার মতো দিনটা কাটাতে... স্ত্রীও পারে প্রেমিকার মতোই খুশি রাখতে... যেন একটা যুদ্ধ জয় করতেই হবে ওকে আজ একটু বেশি কথা বলা, মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে পড়া নিলয়কে হাত ধরে কিছু দেখিয়ে, কিছু যেন ভোলানোর চেষ্টা করছে
পার্কে বাস সাফারির দুটো টিকিট কেটে নিলয় তিয়াসার পাশে বসল আজ নিলয় খুব চুপচাপ, খানিকটা বিরক্তও চার নম্বর বাসে ওদের ডাক পড়ল বাসটা ওদের নিয়ে চলল আনাইমুদি পাহাড়ের দিকে কিছুটা যাওয়ার পর, খাদের দিকটা চা গাছ বেষ্টিত হয়ে এত সুন্দর ঢেউ খেয়ে নেমে গেছে- যেন মিহি হাওয়া খেলছে কবির প্রেমিকার ওড়নায়- সেদিকে তাকিয়ে দু-চারজন খুশির শোরগোল করে উঠতেই এই প্রথম নিলয় বলল,
-সত্যিই সুন্দর!
তিয়াসা যেন এতক্ষণে একটু স্বস্তি পেল, আনমনা-বিরক্ত নিলয়কে ওর সাথে পেলরাস্তায় ওয়াইন্ড গোট দেখা গেল বেশ কয়েকবার গাইডের থেকে জানা গেল, এই গোট শুধু অস্ট্রেলিয়া আর এখানেই পাওয়া যায় সবার সাথে সাথে নিলয়ও খুব উৎসাহের সাথে বন্যছাগল দেখতে লাগল একটা কাঠের ব্রিজের ওপর বাসটা দাঁড়াল, পাশে এক বিশাল ঝর্ণা। ম্ভবত এই পাহাড়ের সব থেকে বড় ঝর্ণা এটি। কয়েক কিলোমিটার ওপর থেকে সরু জলের রেখা ক্রমশ প্রশস্ত হয়ে নামতে নামতে ওদের বাসের জানালার পাশে এসে বিস্তৃত জায়গা নিয়ে ছন্দে ছন্দে নিচে নেমে যাচ্ছে তিয়াসা উচ্ছসিত হয়ে বলে উঠল,
-অপূর্ব!
নিলয় হাসিমুখে মাথাটা ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে বলল,
-খুব সুন্দর, খুব সুন্দর!
আরও কিছুটা গিয়ে বাস এক জায়গায় নামিয়ে দিলএখান থেকে হেঁটে আনাইমুদি পিক যেতে হয় প্রবল বৃষ্টি আর ঠান্ডা যেন বরফের তীক্ষ্ণ ফলা গায়ে পড়ছে পোশাক ভেদ করে এত হাওয়ায় একটা ছাতায় দুজনেই ভিজে জবজবে হয়ে গেল। হাতির মাথার মতো পাহাড়, আনাইমুদি দেখে ফিরে এলো বাসের পিকআপ পয়েন্টে।
পার্ক থেকে বেরিয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করলে, গরম চা-একেবারে অমৃত! চা খেতে খেতে তিয়াসা দেখল দোকানদার দোকান ঘেঁষা পাথরের ছোট ঝর্নায় একটা গামছার দু কোনা দুটো লাঠি দিয়ে, বাকি দু কোনা দোকানের সাথে টেনে বেঁধে, মাচার মতন টানিয়ে রেখেছেগামছাটাতে তিনটে পুঁচকে মাছ লাফাচ্ছে- বেশ মজা পেলো, নিলয়কেও দেখাল এই অভিনব বিষয়টা। তবে বেশিক্ষ উপভোগ করতে পারল না এই সরল সৌন্দর্য্য। খুশির সুরের ছন্দ কেটে গেল ফোনের রিংটোনে। রত্না ফোন করেছে, রত্না জানাল ওর কাজ শেষ এবং আজ বিকেলেই মুন্নার থেকে চলে যাচ্ছে আর ঘোরা হল না মুন্নার- ইতি হল তিয়াসার হনিমুন নিলয় সেখান থেকে ক্যাব ড্রাইভারকে প্রায় তাড়িয়ে হোটেলে নিয়ে এসে, সোজা রত্নার ঘর। তিয়াসাও নিলয়ের পেছন পেছন। ভেজা পোশাকে ঠকঠক করে কাঁপা তিয়াসা অনুভব করতে পারছে, রাগে ওর গাল পর্যন্ত গরম হয়ে উঠেছে।
তৃতীয় দিন সকালেই মুন্নার ছেড়ে ওরা রওনা দিল এবং দুপুর ও পুরো রাত এলেপ্পিতে কাটিয়ে পরদিন ফেরার ট্রেন। ট্রেনের জানালা দিয়ে দূরে ফেলে আসা পাহাড়ের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকল তিয়াসাও যেন পাহাড় আর নিলয়ের থেকে দূরে ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে-
 
আজকাল নিলয় অফিসের কাজে প্রতি মাসেই দিল্লি, মুম্বাই যায় এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার সঞ্জয়ের সাথে, ওর নাকি প্রমোশন হয়েছে যদিও নিলয়কে সবসময় "টাকাপয়সা নেই নেই" করতেই শোনে এত ‘নেই’এর ভিড়ে দশটা টাকাও চাইতে পর্যন্ত ইচ্ছে হয় না ওর নিলয় এখন এত কাজের চাপে থাকে যে কবে শেষ ওকে আদর করেছে, কবে ওরা শেষ নিজেদের নিয়ে কথা বলেছে... মনেই করতে পারে না তিয়াসা।
রত্না এখন ওদের শহরেই একটা থ্রি স্টার হোটেলে রিসেপশনে কাজ করে না... ওর ডিভোর্সটা এখনও হয়নি, সাতবছর ধরে চলছে কেস নিলয় যখন বাইরে যায় তিন-চারদিনের জন্য, তিয়াসা তখন নিলয়ের ফোনে লাইন না পেলে সঞ্জয়কে ফোন করলে, সবসময় উত্তর পায়,
-বৌদি আমি তো বাড়িতে... নিলয়-দা তো আমার সাথে নেই!
তিয়াসার চিন্তাদের সবসময়ই যেন গোগ্রাসে গিলতে থাকে দুশ্চিন্তারা, ও ভাবতে চায়, ’এবার বোধহয় কোম্পানি থেকে নিলয়কে একাই বা অন্য কারো সাথে পাঠিয়েছে। কিন্তু ভাবতে পারে না... কারণ তিয়াশা বেশ কয়েকবার নিলয়ের ফোনের নোটিফিকেশনে রত্নার ফ্ল্যাশ মেসেজ দেখেছে যাতে রত্নার একঘেয়েমি দূর করার জন্য কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আবদার, নিলয়কে কাছে চাওয়ার আবদার... ইত্যাদি
সংসারের কাজের ফাঁকে কখনো কখনো তিয়াসার খুব একা লাগে, ভীষণ একা...। আজকাল তো পরকীয়া বৈধ, ওরা খবর শুনেছে পাশের ফ্ল্যাটের সীমা আর ওর বর দুজনেই নাকি অন্য কারো সাথে প্রেম করে, শুধু বাচ্চার জন্য একসাথে থাকে।
তিয়াসার ভেতরটা মাঝে মাঝে চিৎকার করে উঠে বলতে ইচ্ছে করে- ‘পরকীয়া বৈধ করেছে যারা, তারা কী জানে পরকীয়াকারী জীবনসাথীর সাথে কেমন লাগে ঘর করতে...? সবাই কী পারে অন্যের বুকে নিজেকে সাজাতে...? এর সমাধান কী আবার ডিভোর্স?’
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)