বাতায়ন/ডিভোর্স/ছোটগল্প/৩য় বর্ষ/১০ম সংখ্যা/৯ই শ্রাবণ, ১৪৩২
ডিভোর্স
| ছোটগল্প
মনোজ চ্যাটার্জী
পাড়ভাঙা
নদীর পাড়ে
[১ম পর্ব]
"আমি ওকে মধু বলে ডাকি, তুইও তাই বলবি, তবে মধু না বিছুটিপাতা কিছুক্ষণ সঙ্গে থাকলেই বুঝতে পারবি।"
সচরাচর আমি টিভি দেখি না যদিও তবু যখন মনটা বা মাথাটা একেবারে ড্যাম হয়ে যায় তখন টিভির রিমোটটা নিয়ে একটার পর একটা খবরের চ্যানেল পাল্টাতে থাকি, কোনোটাই পছন্দ হয় না, খবর পরিবেশন নয় তো মনে হয় যাত্রাপালার অভিনয় চলছে।
একটামাত্র খবর নিয়েই সারাদিন কী যে বকরবকর করে, আর ওভার অ্যাকটিংয়ের একেবারে চুড়ান্ত ন্যাকামি। না দেখি
বাকি বাংলা চ্যানেলগুলোই কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে কি না। রূপসি বাংলা চ্যানেল খুলতেই একটি অনুষ্ঠানের ঘোষণা
শুনতে পেলাম। আজ রাত আটটায় প্রাইম টাইমে রয়েছে একটি অপূর্ব সংগীতানুষ্ঠান। তাঁর সুরের জাদুর ঝলকে আপনাদের সম্মোহিত
করতে উপস্থিত থাকছেন উদীয়মান
রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী
মধুছন্দা রায়। ভদ্রমহিলার নামটা কিছুদিন ধরেই কানে আসছে, অন্যের মোবাইলে,
মিউজিক
সিস্টেমে তাঁর গানও শুনেছি, মুগ্ধ হয়ে যাওয়ার
মতোই তাঁর গানের গলা ও সুরের দখল, তবু তাঁর কোনো মিউজিক
ভিডিও বা টিভি অনুষ্ঠান কখনো দেখা হয়নি। আজ অনুষ্ঠানের ঘোষণায় তাঁর ফটো দেখে কীরকম যেন খুব
চেনাজানা লাগছিল, কে জানে আমার পুরনো
রোগ হয়তো, সুন্দরী মহিলা দেখলেই খুব
চেনা মনে হয়। সে যাই হোক আমার মতো নীরস লোকও কী এক অদ্ভুত টানে ঠিক রাত আটটায় রূপসি বাংলা চ্যানেল খুলে বসে পড়ল। তাঁর গান যত শুনছি
তত এক আচ্ছন্নের জগতে পৌঁছে যাচ্ছি,
যদিও
আমি গানের গ-ও বুঝি না তবু পুরনো দিনের হেমন্ত, চিন্ময়, সাগর সেন, দেবব্রত বিশ্বাস,
সুচিত্রা, কণিকা, সুমিত্রা, আরো কত স্বনামধন্য শিল্পীদের রবীন্দ্রসংগীত শুনে
আমার একটা রুচি তৈরি হয়ে গেছে, আসল-নকল ভেদাভেদ আমি সহজেই করে নিতে পারি। এই প্রজন্মের জয়তী, স্বাগতালক্ষীর খুব কাছাকাছিই এই ভদ্রমহিলা। খুব শীঘ্রই উনি
তাদের সারিতে স্থান পাবেন। অনুষ্ঠান শেষে গানের ঘোর কাটতেই আমার স্মৃতিশক্তি হঠাৎ
সজাগ হয়ে উঠল, আরে এ তো আমার প্রথম কর্মস্থল
লারসেন টুবরোর বন্ধু সন্দীপের স্ত্রী।
সন্দীপের বিয়েতে আমি বরযাত্রী
গিয়েছিলাম। কলকাতা থেকে অনেকটাই দূরে আরামবাগের কাছে এক গ্রামে বিয়ে হয়েছিল।
-কী রে তুই বোধহয় ভাবছিস সারাজীবন কলকাতায় বড় হয়ে সন্দীপ এই অজ
পাড়াগাঁয়ে বিয়ে করছে কেন?
-না, না তা কেন, তোর পার্সোনাল ম্যাটার নিয়ে আমি গভীরে ভাবিনি।
-সে কীরে, ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাই তো পার্সোনাল
ম্যাটার নিয়ে ভাবে, তুই তো আমার শুধু
অফিস কোলিগ নস।
-তবু তোর বুদ্ধি-বিবেচনার উপর আমার যথেষ্ট বিশ্বাস আছে।
-এনিওয়ে, আসল কারণ হল এইসব
গ্রামের মেয়েরা খুব সহজ সরল হয়, এদের উপর তুই যতটা
বিশ্বাস করতে পারবি, তা নিজের উপর করা যায়
না, আর এ দেখতেও খুব সুন্দর, ঘরের কাজকর্মে পারদর্শী, কেবল পড়াশুনো একটু কম, সে হোক বাবার জমিজমা
অনেক আছে, ভবিষ্যতে আমার কাজে লাগবে।
সন্দীপ এসব কথা বললেও, আমার কেমন যেন মনে হয়েছিল ও যা ইনটেলেকচুয়াল টাইপের ছেলে, এই অতি সরল স্বল্পশিক্ষিত মহিলার সাথে ওর কতদিন বনিবনা হবে
কে জানে? সে যাই হোক বিয়ের পরেও আমি
অনেকবার ওর বাড়িতে গেছি।
-আমি ওকে মধু বলে ডাকি,
তুইও
তাই বলবি, তবে মধু না বিছুটিপাতা
কিছুক্ষণ সঙ্গে থাকলেই বুঝতে পারবি।
-আচ্ছা বেইমান তো তুই,
দিনরাত
তোর সেবাযত্ন করে তোর কেমন নাদুসনুদুস চেহারা করেছে, আর তুই এইসব আজেবাজে বলে বেড়াচ্ছিস,
আমি সব
বলে দেব মধুকে, এক বেলা রান্না না করলেই তোর
সব শয়তানি ঘুচে যাবে।
-থাক থাক, বিয়ের আগে যখন অজ
পাড়াগাঁয়ের মেয়েদের নেগেটিভ সাইড সম্বন্ধে কিছু বলিসনি, এখন আর উপকার করতে হবে না।
-তুই শুধু নেগেটিভই দেখে যা, সারা ঘরের কাজকর্ম যে ও সামলায়, অফিস থেকে ফিরে হাতে
হাতে সরবত, চা, জলখাবার সব পাস কি না তাই, শিক্ষিত চাকরি করা মেয়ে হলে বুঝতিস সংসারের কী জ্বালা, সংসার সামলাতে তোমার আঁতলামো ঘুচে যেত।
ক্রমশ…
No comments:
Post a Comment