প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

বার ঘরে যাই | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন /ছোটগল্প /৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা / ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প পারমিতা চ্যাটার্জি বার ঘ...

Wednesday, July 23, 2025

লেখক অভিক দত্ত [৩য় পর্ব] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১২তম সংখ্যা/২৩শে শ্রাবণ, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
পারমিতা চ্যাটার্জি
 
লেখক অভিক দত্ত
[৩য় পর্ব]

"অভিক তাকিয়েই চমকে গেল বুঝতে পারল এ সন্তান তারইশুধু হেমন্তিকার দিকে চেয়ে বলল,
-ঠকানো যার অভ্যাস সে চিরকাল ঠকিয়ে যায়।"


পূর্বানুবৃত্তি তোমার বোন নাকি রবীন্দ্রনাথের আদর্শে বিশ্বাসীতাই মুড়ি খাওয়া ছেলের সাথে থাকতে পারল না। নিজেই জোর করে আমার সাথে বিয়ে করে আমার সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিয়ে চলে গেল তখন আমার পকেটে একটা সিগারেট খাওয়ার পয়সাও ছিল না। তারপর…
 
-তারপর?
-তারপর বৈশাখীর দাদা বিশ্বভারতীতে পড়াত সেই খবর দিল ফিলোফি ডিপার্টমেন্টে এখুনি অ্যাপ্লাই করতে বল,

অভিক এখন বিশ্বভারতীর ফিলোসফির লেকচারার তার সাথে রিসার্চ আরম্ভ করেছে আবার নিজের উপন্যাসও চালিয়ে যাচ্ছে

-মাত্র তিনমাসের মধ্যে এত কিছু হয়ে গেল?
-হ্যাঁ তুই যদি ওকে একটু বুঝিয়ে বলতিস
-সে যা বলেছিলাম তা ঝোঁকের মাথায় বলেছিলাম তাহলে সাথে সাথেই ও কাজের চেষ্টায় নেমে পড়ত।
-ও তোর বিয়ের আগের কথাটাই বিশ্বাস করেছিল যে তুই বলেছিলিস বিয়ের পর তুমি শুধু লিখবে বাকি ভার আমার, ও ভেবেছিল লিখবে মানে লিখবে এক কথা এখন যদি জোর করে ও কাজ করতে যায় তাহলে তোর হয়তো অভিমান হবে। আসলে কবি-সাহিত্যিকরা একটু উদাসীন হয় ওরা বাস্তবকে বোঝে না, মুখের কথাকেই বিশ্বাস করে।
-আমি খুব ভুল করেছি রঞ্জন-দা
-আমি গিয়ে একবার কথা বলব?
-বলতে পার কিন্তু একবার ছেড়ে চলে এসেছি নিরাশ্রয় অবস্থায় সেসময়ে বৈশাখী নীরব ভালবাসা দিয়ে ওকে বাঁচতে সাহায্য করেছে। ও ভালবাসুক না বাসুক যার কাছে উপকৃত তার ভালবাসার মর্যাদাই দেবে দাদা, আমার কাছে আর আসবে না দাদা, কিছুতেই আসবে না আমার মতন স্বার্থপর মেয়ের কাছে।
হ্যাঁ সত্যি অভিক আর ফিরে আসেনি। বৈশাখীর ভালবাসাকে মর্যাদা দিয়ে বৈশাখীকেই বিয়ে করে। হেমন্তিকারও তার আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল সে সময়ে ও দুমাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। বহুকষ্টে স্বামীর কাছ থেকে এ ঘটনা লুকিয়ে ছিল। যে ডাক্তার ওর ডেলিভারি করিয়েছিল তাকে অনুরোধ করেছিল যে সে যেন কিছুতেই না বলে এ সন্তান কার কিন্তু সবাই কি আর এক হয়! ডাক্তার সবটাই ওর স্বামী শুভদীপের কাছে সবিস্তারে বলেছিল। বাড়িতে বলেছিল একটু সাবধানে ওকে মানুষ করতে হবে প্রি-ম্যাচুয়র ডেলিভারি। শুভদীপ যে সব জানে একথা কোনদিন সে হেমন্তিকার কাছে প্রকাশ করেনি।
এর প্রায় ছ বছর পরে শান্তিনিকেতনে পৌষমেলায় ওদের দু পরিবারে মুখোমুখি দেখা, বৈশাখী অবাক হয়ে হেমন্তিকার মেয়ে চৈতালীকে দেখে কারণ চৈতালী দেখতে একদম বৈশাখীর মেয়ে রুদ্রাণীর মতন। বহুদিন পরে দু বন্ধু দেখা হওয়াতে দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরল, হেমন্তিকা বলল,
-তুই ওর উপযুক্ত আমি নই, বৈশাখী কানে কানে বলল, বাচ্চাটা কী?
-হ্যাঁ রে, শুভদীপ নিজের সন্তান আনেনি পাছে চৈতালীর ভালবাসায় ঘাটতি পরে।
ভিক গম্ভীর হয়ে এসে বৈশাখীকে বলল,
-চল দেরি হয়ে যাচ্ছে
-হ্যাঁ চল হেমন্তিকার মেয়েকে একবার দেখ
-কেন আমার দেখবার কী আছে?
-আরে দেখই না বলছি
অভিক তাকিয়েই চমকে গেল বুঝতে পারল এ সন্তান তারই, শুধু হেমন্তিকার দিকে চেয়ে বলল,
-ঠকানো যার অভ্যাস সে চিরকাল ঠকিয়ে যায়
এই কথা শুনে হেমন্তিকার চোখ ভর্তি জল এল তবে এখন ওদের দুজনের ভালবাসাই বদলে গেছে ওদিকে বৈশাখী আর এদিকে শুভদীপের মহানুভবতায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই অভিককে কিছু ছেলেমেয়ে ঘিরে ধরল,
-স্যার আপনার উপন্যাসটি কিনেছি একটা সই দেবেন না?
-নিশ্চয়ই দেব আমি অভিক দত্ত একজন সাধারণ মানুষ তোমরা যে আমার সই নিতে এসেছ এটাই আমার কাছে অহংকার, কোন মিথ্যে অহংকার করতে শিখিনি।
অভিক দত্ত যাবার সময় শুধু ঘুরে দাঁড়িয়ে একবার চৈতালীকে দেখে ওর মাথায় গভীর স্নেহে হাত বুলিয়ে দিল তারপর নিজের মেয়ে-বউকে নিয়ে হনহন করে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
-দেখ রুদ্রাণী আমাদের একটাই মেয়ে। আর কারুর কথা আমাদের মেয়ে যেন কোনদিন জানতে না পারে। আমার আর তোমার শুধু একটাই মেয়ে।
 
সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)