প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

বার ঘরে যাই | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন /ছোটগল্প /৩য় বর্ষ/১ ৪ তম/মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা / ২৩শে শ্রাবণ , ১৪৩২ মণিজিঞ্জির সান্যাল সংখ্যা | ছোটগল্প পারমিতা চ্যাটার্জি বার ঘ...

Wednesday, July 23, 2025

লেখক অভিক দত্ত [২য় পর্ব] | পারমিতা চ্যাটার্জি

বাতায়ন/সাপ্তাহিক/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/১১তম সংখ্যা/১৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২
ধারাবাহিক গল্প
পারমিতা চ্যাটার্জি
 
লেখক অভিক দত্ত
[২য় পর্ব]

"তখন আমার পকেটে একটা সিগারেট খাওয়ার পয়সাও ছিল না। নিজের ঘড়ি বিক্রি করতে দেখে আমার এক ছাত্রী বৈশাখী আমাকে থামাল।"


পূর্বানুবৃত্তি ভেবেছিল দুজনের প্রবল ভালবাসার প্লাবন মিটিয়ে দেবে অর্থের দৈনতা। দুজনেই দু-তিনটে করে টিউশনির ওপর নির্ভর করে এক কামরার একটা ঘরের ভাড়া করে ভেসে চলবে সংসার সমুদ্রে। তারপর…
 

বাড়িতে গিয়ে গুম হয়ে থাকল, তখন আবার চিন্তা রাগের মাথায় এ কী করল ও! না সে আসলে ভালবাসতে জানে না, অভিক কী খেল, এ মাসটা না হয় বাড়িওয়ালা থাকতে দেবে পরের মাসে?

আড়ালে তাকে চোখের জল ফেলতে দেখে তার মাসতুতো দাদা তকে ডেকে বলল,
-সত্যি ভালবেসেছিলিস?
হেমন্তিকা হুহু করে কেঁদে ফেলল,
-তাহলে চলে এলি কেন?
-ও একসাথে চারটে টিউশন ছেড়ে দিল তাতেই আমার খুব রাগ হয়ে গেল তাছাড়া
-তাছাড়া?
-আমার খুব খিদে পেত রঞ্জন-দা ঘরে খাবর থাকত না, আমি ভেবেছিলাম আমি চলে গেলে ও ঠিক কাজ জোগাড় করে আমাকে ফিরিয়ে আনবে কিন্তু বাবা-মা যে এদিকে আমার বিয়ের প্ল্যান করে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তা বুঝতে পারিনি
-তবে কী বুঝেছিলি?
-আমাকে দেখে বাবা-মা একসাথেই বলে উঠেছিলেন এ কীরে? কী চেহারা হয়েছে? তুই তো মরে যাবি এবার,
বাবা বললেন আয় মা অনেক হয়েছে, তুই চলে আয় তরপর অভিককে নিয়ে আসব
আমি বলেছিলাম,
মা, ও না খেয়ে মরে যাবে তবু ঘরজামাই হয়ে আসবে না, ওর প্রখর আত্মমর্যাদা
-মা কী বললেন?
-মা বলেছিলেন অতই যদি আত্মমর্যাদা তবে বড়লোকের মেয়েকে ভালবাসতে গেল কেন? কীসের লোভে?
-আমারও তখন মনে হল হয়তো তাই ও ভীষণ স্বার্থপর, নয়তো বিয়ে হতে না হতে কেউ শুধু লেখার জন্য টিউশন ছেড়ে দেয়?
-ও তো বলেছিল যে পরেরদিন থেকেই ও কাজের চেষ্টা করবে আর ও যা মেধাবী ওর কলেজে কাজ পেতে বা পাঁচ-ছটা টিউশন পেতে বেশি সময় লাগত না, আসলে কী ওর বোঝার ভুল হয়েছিল
-কবি-সাহিত্যিকরা একটু অন্যমনস্ক হয়, ও ভেবেছিল তুই ওকে বলেছিস তুমি শুধু লেখা নিয়েই থাকবি বাকিটা আমার দায়িত্ব
-হ্যাঁ আমি তাই তো বলেছিলাম
-তবে চলে এলি কেন
-সেদিন প্রচণ্ড রাগের মাথায় বেরিয়ে এসেছিলাম, ভেবেছিলাম তিন-চারদিন থেকে আবার ফিরে যাব। ভাবিনি বাবা-মা আমার জন্য কী কল করে রেখেছেন
-এখন কী করবি?
-এখন আর ফিরে যাওয়ার মুখ নেই
-ও কলেজে পড়াবার চাকরি পেয়েছে বলে
-হ্যাঁ, সব জেনে বিয়ে করে ওর খারাপ সময় ওকে ছেড়ে ফেলে এসে এখন কলেজের লেকচারার শুনে ফিরে যাওয়া যায় না, যদি না ও আমাকে নিজে নিতে আসে
-ও তোকে আর কোনদিন নিজে নিতে আসবে না
-তুমি কী করে জানলে এত কথা?
-কী করে আবার ছোট বোনের মুখভার গোপন চোখের জল দেখে নিজেই গিয়েছিলাম ওর সাথে দেখা করতে
-তারপর ও কী বলল?
-তোমার বোন নাকি রবীন্দ্রনাথের আদর্শে বিশ্বাসীতাই মুড়ি খাওয়া ছেলের সাথে থাকতে পারল না। নিজেই জোর করে আমার সাথে বিয়ে করে আমার সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিয়ে চলে গেল তখন আমার পকেটে একটা সিগারেট খাওয়ার পয়সাও ছিল না। নিজের ঘড়ি বিক্রি করতে দেখে আমার এক ছাত্রী বৈশাখী আমাকে থামাল। আমার বাড়ি নিয়ে এল দুহাত ভর্তি খাবার, আমাকে বলেছে আপনি শুধু লিখে যান বাকি ভার আমারও গম্ভীর হয়ে বলেছিল এ কথা আর একজনও বলেছিল আমি আর কাউকে বিশ্বাস করি না আমার পথটা আমি নিজেই দেখে নেব আজ তুমি নিয়ে এসেছ আজ একটা কিছু খাচ্ছি কিন্তু আর কোনদিন কিছু আনবে না।
 
ক্রমশ…

No comments:

Post a Comment

অবকাশ—


Popular Top 10 (Last 7 days)