দহন | রম্যরচনা
প্রদীপ কুমার দে
ঝিঙা’র ফানুস
ঝিঙাফুল
সিরিজ— ১৮
"তুমিই আমার সব। নির্ভরতা। তুমিই ঠিক। আমি তোমারই। তুমিই পারো আমার বাড়ির কাছে আমাদের মুখ রাখতে..."
খুব শিক্ষা হল ঝিঙাফুলের। লাফিয়ে উঠেই মাটিতে ধপাস করে পড়লে যা হয়। এটা দরকার ছিল। গ্রাম থেকে এসে সংস্কার আর কুসংস্কারের দ্বন্দ্ব কাটিয়ে একেবারে আকাশ ছুঁতে যাওয়া!
-কীগো কোথায়
তুমি?
সাড়া দিলাম
না। বসে আরাম খাচ্ছি। ঝিঙাফুল স্নান সেরে ভিজে শায়াটা মুখে টেনে জড়িয়ে জড়িয়ে বললে,
-চলো এসো
-এখন? স্নান করার
পর?
-তোমার মাথায়
কী আছে বলো তো? সবসময়েই ওই বাজে চিন্তা?
-তাহলে ডাকছ
কেন?
-চলো এক
জায়গায় যাব।
-কোথায়?
-অতশত জানি না।
মন ভালো করতে।
অগত্যা
বউয়ের সঙ্গী হলাম। গাড়ি থেকে নেমে বুঝলাম এক নামী আশ্রমে এলাম। ঝিঙাফুল আমাকে টেনে
নিয়ে চললে, উদ্দেশ্য
বুঝলাম না। বুঝলাম এনকোয়ারিতে গিয়ে, শান্তি পেতে ঝিঙাফুল দীক্ষা নিতে
চায়।
ঝিঙাফুল
আবেদন করল,
-আমরা দীক্ষা
নিতে চাই।
কর্তৃপক্ষ
জানাল,
-ভালো কথা।
কিন্তু সেতো অনেক সময় সাপেক্ষ। এখনি বললে তো আর এখনই হবে না। ফর্ম জমা দেওয়া, বই পড়া, লাইনে থাকা, ইন্টারভিউ
দেওয়া তারপর গুরুদেব বিশ্বভ্রমণ করে ফিরলে দিনক্ষণ ঘোষণা সমস্ত
বিষয়টাই অনেক বছরের ব্যাপার।
ঝিঙাফুল
অনেক কাতর আবেদন-নিবেদন করেও সুরাহা হলো না। সন্যাসীরা
নিজেদের নিয়েই খুব বেশি ব্যস্ত, অন্যের কথা
শোনার সময় কোথায়? এতো
আর সে আগের যুগ নয় যে সেই গানের কথায়— মানুষ মানুষের জন্য…
আর এরা তো আরো উচ্চ মার্গের সাধু। আগে ভক্তরা সাধু মানত আর এখন সাধু
ভক্ত বানায়। লেকচার মারা সাধু, কল্যাণের কথা ভাষণের বিষয়ে। সাধুরা
নিজের মুক্তির জন্য কাজ করতেই এত ব্যস্ত মানুষের কথা ভাবার সময়
কোথায়? আশ্রম
মঠ সব প্রতিষ্ঠান আর এখন যুগের আদলে হাজারো নিয়মনীতির বেড়াজালে তা আবদ্ধ।
পুরো আশ্রম
ঘুরে নিল ঝিঙাফুল। আমাকে শেষে ওই উপদেশ দিল,
-চলো বেরিয়ে যাই। শুধুই নিয়ম আর টাকার খেলা। এটা ধনীদের পৃথিবী।
ভাবলাম যাক ভালো। নিজের ভুল নিজেই বুঝতে পেরেছে। শুধরে নিক ও নিজেকে। দেখলাম ওর মুখে ঘন
কালো মেঘ জমছে। হয়তো অভিজ্ঞতার ফল! গঙ্গার ধারে গিয়ে বসলাম। নদী হালকা চালে বইছে।
গরম আছে। তবে খুব কষ্ট হচ্ছে না। ঝিঙাফুল বললে,
-কোনস্থানেই
শান্তি নেই। কেবলই ধাক্কা খাচ্ছি।
-শান্তি মনে।
অল্পে সুখ। চাহিদা মানে মৃত্যু। সব বিষয়ে ঠকে শিখতে যেও না, বিপদে পড়বে।
দেখে শেখো। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর তোমার বয়স অল্প। সবে শহুরে হাওয়া লেগেছে।
গ্রামে মাটি আর এখানে ইট। ফারাক বুঝতে শেখো।
-ঠিকই বলেছ।
আমি ভুল ছিলাম। অন্ধ মনে আর অনেক ভুলভাল প্রত্যাশায়। বাড়ি চলো। মন দিয়ে সংসারটাই
করি।
ঝিঙাফুল
আমার উপর নির্ভর করে আমার হাত ধরে টেনে গাড়িতে উঠে পড়ল, গন্তব্য বাড়ি।
বাড়িতে এসে
শান্তি। কিছু খেয়েদেয়ে নিয়ে দুজনায় শান্ত হয়ে বসলাম। ঝিঙাফুল আমার বুকে মাথা দিয়ে
বলল,
-লোভ করে
ফেলেছি...
-ছাড়ো ওইসব।
তোমার বাড়ির আদেশ ভুলে গেলে? চারমাসের মধ্যে দুমাস চলে গেল, হাতে কিন্তু
মাত্র দুমাস বাকি, এরমধ্যে কিন্তু খবর দিতেই হবে।
ঝিঙাফুল
আমাকে চেপে ধরেছে। আমার দমবন্ধ করা অবস্থা তারমধ্যেই আমি ওকে শান্ত করতে আদর
করলাম। ও চোখ বুজে নিল আর অস্ফুটে মেনে নিল,
-এখন তুমিই
আমার সব। নির্ভরতা। তুমিই ঠিক। আমি তোমারই। তুমিই পারো আমার বাড়ির কাছে আমাদের মুখ
রাখতে...
সমাপ্ত
💗 শুভেচ্ছা রইল শ্রদ্ধেয় সকল গুনীজনে। ধন্যবাদ জানাচ্ছি সম্পাদক মহাশয়কে তার অকৃত্রিম ভালবাসার জন্য। 👏
ReplyDeleteসুন্দর মজার একটা গল্প সিরিজ প্রকাশ পেল তাই সংশিলিষ্ট যুক্ত সকলের জন্য রইল ধন্যবাদ।
ReplyDelete