বাতায়ন/ধারাবাহিক
উপন্যাস/সাপ্তাহিক/৩য় বর্ষ/২৩তম সংখ্যা/৩রা আশ্বিন,
১৪৩২
ধারাবাহিক উপন্যাস
অজয় দেবনাথ
মউ
[২য় পর্ব]
Statutory warning.
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। Smoking is harmful to your health.
অ্যালকোহল সেবন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। Alcohol consumption is harmful to your health.
"আনন্দবাজারে তার গল্প মনোনীত হয়েছে। জানতে চাইছে প্রয়োজনীয় এডিটিং-এ তার আপত্তি আছে কিনা। প্রকাশের এক মাস পর পত্রিকা অফিসে গিয়ে পেমেন্ট নিয়ে আসতে। সুখ বিশ্বাসই করতে পারছে না। তার লেখা গল্প… তাও আনন্দবাজারে!"
পূর্বানুবৃত্তি ভাবুক প্রকৃতির সুখ সবসময়
স্বপ্নের ঘোরে থাকে। সম্পর্ককে দু-ভাবে দেখে সুখ, একটা রক্তের সম্পর্ক আর একটা
হৃদয়ের। ভাবুক প্রকৃতির। উত্তর চব্বিশ-পরগনায় বসিরহাটের একটা গ্রামে তাদের বাড়ি।
বাড়িতে বিধবা বৃদ্ধা মা ছাড়া কেউই নেই। পাঁচ বছর বয়সে সুখের বাবা মারা যান। তারপর…
সাহিত্যেও নাকি টিম তৈরি হচ্ছে। এক-একজন সেই টিমের নেতা হচ্ছেন। রবীন্দ্রনাথ নিজে কোনদিন নেতা হননি। সাহিত্যজগত তাকে অলিখিত নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছিল। শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কোনদিন নেতা হননি, কবিসমাজ তাদের নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছিল। এতদিন সুখ জানত যে মনন চর্চা করবে, ভাল লিখবে সাহিত্যজগতে তারই নিরপেক্ষ কদর। কিন্তু… এমন চলতে থাকলে শেষের সেদিন খুব দূরে নয়।
ফেসবুক খুললেই দেখা যায়, প্রায়
প্রতিদিনই ঝাঁকে ঝাঁকে লিট্ল ম্যাগাজিন নয়তো ওয়েবজিন আর হাজার হাজার কবি ও লেখক
যার অধিকাংশই টুকে লেখা নাহলে ছাইপাঁশ। ‘কফিহাউস’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রবীণ কবি
অশোক রায়চৌধুরীর কথায় সাহিত্যের জঞ্জাল। সম্পাদকরা কী এতটুকুও খবর রাখেন না! অবশ্য
কোনও মানুষের পক্ষেই সবকিছু পড়া বা খবর রাখা সম্ভব নয়। যদিও যিনি সম্পাদক হবেন,
তার কাছে অন্তত এই প্রত্যাশা সমাজ রাখতেই পারে। সেইসঙ্গে গাদা গাদা উৎসব আর
পুরস্কার, হয় কারোর অনুপ্রেরণায় নয়তো টাকার বিনিময়ে অথবা দেওয়া-নেওয়া। কেউ কেউ
আবার পুরস্কার গ্রহণের ছবি ফলাও করে ফেসবুকে পোস্ট করে পরে অবস্থা বেগতিক দেখে তা
প্রত্যাখ্যান করার কথা কায়দা করে লিখে জানাচ্ছেন। সুখের মনে হয়, এ অনেকটা মেয়ের
বিয়ে দিয়ে ফুলশয্যার পর তাকে ফিরিয়ে নেবার মতো।
মহিলাদের প্রতি পুরুষের আকর্ষণ
নতুন কিছু নয়, তবু আগে এতটা নির্লজ্জ ভঙ্গি ছিল না। যে মহিলা কবি ভাল লিখতেন তিনি
কিছুটা হলেও অগ্রাধিকার পেতেন এবং পিছিয়ে থাকা সমাজে তার প্রয়োজনও ছিল। এখন যা
খুশি পোস্ট করলেই আহা-বাহার বন্যা। যাদের মধ্যে হয়তো সত্যিই প্রতিভা আছে তারাও
প্রশংসার ঠেলায় ভেসে যেতে বাধ্য। গুলিয়ে যাচ্ছে সব। ছলনা করছে। ছলনা করছে নিজের
সঙ্গে। মাতৃভাষার সঙ্গে।
দিনে দিনে বাংলাভাষা-সাহিত্য ঠিক
কোথায় যেতে চাইছে! সেভাবে নতুন লেখক উঠে আসছে কই, যাদের লেখা দীর্ঘদিন মনে থাকে,
শুধুই চমক! এই চমক আর কতদিন! পুরোনোদের মধ্যে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আর জয়
গোস্বামী ছাড়া বলার মতো কেউ নেই। বাংলা সাহিত্য অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। পুরোনো-নতুন
অন্যান্য সাহিত্যিকদের লেখা পড়া, ব্যক্তিগত চর্চা অবশ্যই করা উচিত। কিন্তু কত
জনই-বা… ভাবতে ভাবতেই কখন ঘুমিয়ে পড়ে সুখ।
৩
হঠাৎ একটা ফোন। আনন্দবাজারে তার
গল্প মনোনীত হয়েছে। জানতে চাইছে প্রয়োজনীয় এডিটিং-এ তার আপত্তি আছে কিনা। প্রকাশের
এক মাস পর পত্রিকা অফিসে গিয়ে পেমেন্ট নিয়ে আসতে। সুখ বিশ্বাসই করতে পারছে না। তার
লেখা গল্প… তাও আনন্দবাজারে! বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটতেই চাইছে না। আনন্দে কী করবে
বুঝতে পারছে না। চিৎকার করে সবাইকে এখুনি জানাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু জানাবেই বা
কাকে! তার নিজের বলতে এক বৃদ্ধা মা ছাড়া তো কেউ নেই সংসারে, তারও এসব ব্যাপারে
কোনো উৎসাহ নেই।
আর একজন… আগুনের গোলার মতো মেয়ে…
চোখে-মনে জ্বালা ধরানো সুন্দরী… শুভ্রা… তার স্বপ্ন, তার প্রেম, তার প্রেরণা, তার
প্রাণ, তার সবকিছু। এতটাই নির্ভর করে তাকে যেন সাপের মতো জড়িয়ে থাকে সবসময়। দুজনেই
দুজনকে ছাড়া অচল। শুধু বিয়েটাই যা হয়নি এখনও। সামনেই বিয়ের টার্গেট আছে। মা
নিশ্চয়ই মেনে নেবে শুভ্রাকে। মা তার পছন্দ ফেলে দিতে পারবেই না। শুভ্রাকেই জানাবে
সবার আগে।
শুভ্রার কাছে গিয়ে সামনাসামনি বলে
চমকে দেবে, খুব খুশি হবে শুভ্রা। খুশিতে উচ্ছল হয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে ছেলেমানুষের মতো
আনন্দে নেচে উঠবে, চুমু খাবে। শুভ্রার বাড়িতে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিল সে। কিন্তু
শুভ্রার কাছে পৌঁছতেই পারছে না! পা অসম্ভব ভারী, কেউ পিছন থেকে টানছে, অসংখ্য
নাগপাশে জড়িয়ে রেখেছে যেন। সুখ প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু পারছে না।
অনেকগুলো লোক মিলে শুভ্রাকে একটা
কাচের দরজা দেওয়া ঘরে নিয়ে গেল। ওরা কী রেপ করবে শুভ্রাকে, অমানুষিক নির্যাতন
করবে! শুভ্রা চিৎকার করছে, “বাঁচাও, বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও… সুখ… সুখ… সুখ এরা আমার
গায়ে হাত দিচ্ছে, আমার সঙ্গে অসভ্যতা করছে। আমাকে বাঁচাও সুখ, সুখ… সুউখ…”
গোঙাতে গোঙাতে উঠে বসল, অসম্ভব
জলতেষ্টা পেয়েছে। দরদর করে ঘামছে। এক গ্লাস জল খেল, ভোর হয়ে গেছে। এতক্ষণ স্বপ্ন
দেখছিল! কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসে রইল, ভাবার চেষ্টা করল এমন একটা স্বপ্ন দেখল কেন।
লোকে বলে ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। তার লেখা একদিন সত্যিই হয়তো বড় পত্রিকায় ছাপা
হবে, হয়তো সেদিন খুব দূরে নয়। কিন্তু শুভ্রা… সে তো কবেই তাকে ছেড়ে চলে গেছে সুখের
সন্ধানে। তাও এমন স্বপ্ন… তবে কী ওর কোনও বিপদ হল, অথবা বিপদ আসন্ন। মুহূর্তে মনে
পড়ে গেল কলেজদিনের কথা।
ক্রমশ
অনন্য স্বপ্ন। জীবন যাপনের। বাঁচার রসদ ! সঙ্গে যদি 'সত্য' শুভ্রা থাকে, কিন্তু দুর্ভাগ্য স্বপ্ন ' সত্য ' হয় না। দেখা যাক সুখ কি করে?
ReplyDeleteধন্যবাদ প্রদীপ-দা, এভাবেই সঙ্গে থাকুন।
Deleteবেশ, তারপর?
ReplyDeleteতারপর...? তারপর অপেক্ষা পরের শনিবার পর্যন্ত।
Deleteএকদিকে প্রেম, অন্য দিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। দেখা যাক সুখের স্বপ্ন কোথায় নিয়ে যায়...
ReplyDeleteভালো লাগছে, চলুক...
খোলাখুলি মতামত দেবেন দীপকদা।
Delete