প্রাপ্তমনস্কদের পত্রিকা ~ ~ ~ নাম নয় মানই বিবেচ্য

শারদ | উৎসবের অঙ্গীকার

  বাতায়ন/শারদ/ সম্পাদকীয় /৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন , ১৪৩২ শারদ | সম্পাদকীয়   উৎসবের অঙ্গীকার "নারীতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে পুরুষতন্ত্...

Monday, September 15, 2025

বাতাসে শরতের গন্ধ ও মন কেমনের টান [১ম পর্ব] | যাদব দাস

বাতায়ন/শারদ/ধারাবাহিক গল্প/৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন, ১৪৩২
শারদ | ধারাবাহিক গল্প
যাদব দাস
 
বাতাসে শরতের গন্ধ ও মন কেমনের টান
[১ম পর্ব]

"সেই অগণিত চরিত্রের ভিতর থেকে চোখ মেলে ধরল দুটি কিশোর-কিশোরী। হতে পারে তাদের নাম রাজা ও তিন্নি। পিকলুর ছোট ছোট হাতের মুঠোয় সাদা কাশের গুচ্ছ। গিয়েছিল অঞ্জনার তীরে। সঙ্গে রাজা। দুজনের মনেই কাশের দোলা।"


বিশেষ শরৎ সংখ্যার জন্যে একটা গল্প চাই। প্লট মৌলিক না হলে আবার মনোনীত হওয়ার প্রশ্ন নেই। কিন্তু কী লিখব? বেঁধে দেওয়া বিষয় নিয়ে কখনও কোন গল্প লিখিনি। মনে যখন যেমন ভাবনার ঢেউ পল্লবিত ফুলের মতো পাপড়ি ছড়িয়েছে তখন তেমনভাবেই কলম খুঁজে নিয়েছে ভাষা। আজ কলম স্থির। দু-একটা লাইন মাথায় উদয় হয় বটে কিন্তু তা যেন ঘন কুয়াশাঢাকা ভোরের ল্যাম্পপোস্টে ছোট এক বিজলিবাতি। যাইহোক গল্পের জন্যে প্রয়োজন একটি প্রধান চরিত্র। আর চরিত্রের নামকরণ আবশ্যক। আমাদের এই গল্পের প্রধান চরিত্র পিকলু। যদিও সব চরিত্র কাল্পনিক, তবু চরিত্রের একটা পরিচয় দিতেই হয়। পিকলু শৈশব পেরোয়নি এখনও। সবে দশ। ক্লাস ফোর। অন্যান্য কিশোর-কিশোরীদের মতোই চঞ্চল, যেন বৈশাখের ফুরফুরে হাওয়া। আর বসবাস? সাদামাটা একটা গ্রাম। ধরা যাক তার নাম ফুলবাড়ি। গ্রামের পাশ দিয়ে কলকল্লোলিনী অঞ্জনা। যদিও এই অঞ্জনা আমাদের কল্পনায় তরঙ্গ তুলে গতিশীলা। গ্রামের অন্তর ও বাহিরে গ্রাম্য ভাবটি এখনও বিদ্যমান। যেহেতু এখন শরৎ নদীর পাড় উপচে কাশের বাহার। পিকলুর মনেও উপচে পড়া আনন্দের জোয়ার। কারণ পুজো আসছে।

 
গ্রামের দুর্গামন্দিরে উপস্থিত মৃৎশিল্পী কানাই পাল। গ্রামে এই একটিমাত্র পুজোর আয়োজন হয়ে আসছে বহুবছর ধরে। পুজোর বয়স কেউ বলে তিনশো বছর, কেউ বা তার অধিক। আর ত্রিশতবর্ষ অতিক্রম করা এই ঐতিহাসিক পুজোর দস্তুর মন্দিরের দেবীকে মন্দিরেই রূপদান করা। নাহলে গ্রামের অনিষ্টসাধন একপ্রকার নিশ্চিত। বিশ্বাসটা যদিও অমূলক, মানুষের মধ্যে কবে শিকড় ছড়াল তার সাল বা তারিখ কেউ বলতে না পারলেও একে জড়িয়ে যে ইতিহাস মুখে মুখে প্রচারিত তারও জন্ম অনেককাল আগে। সেইবছর গ্রামের লোকজন ঠিক করল পুজো হবে জাঁকজমকপূর্ণ। মিটিং বসল গ্রামবাসীদের এবার আর মন্দিরে নয়, আলাদা মণ্ডপ তৈরি হবে আর প্রতিমা কৃষ্ণনগরের। সেই বছরই ক্ষীণকায় অঞ্জনার সে কী তেজ! কোথা থেকে যে এত জল এল ওর বুকে, তরঙ্গে তরঙ্গে অঞ্জনা কীভাবে যে ভাসিয়ে দিল গ্রাম, কে জানে? কোথায় প্যান্ডেল আর কোথায় বা প্রতিমা। জলের থই পাওয়া ভার। সেই বছর আর এই বছর, আর দ্বিতীয়বার অন্যতর চিন্তার অবকাশ হয়নি গ্রামবাসীদের।
 
কানাই পালের বাড়ি সহিসপুর। ফুলবাড়ি আর সহিসপুরের মাঝখানে মাত্র চল্লিশ কিলোমিটার পথ। তবু পুজোর একমাস কানাই আর তার সঙ্গী ভোলার গ্রামের পূজামণ্ডপেই অতিথিবাস। কানাইয়ের পা পড়তেই আগমনির সুর ওঠে ফুলবাড়িতে। আর শুরু হয় পিকলুর পুজো। পুজো মানেই মিলন, হৃদয়ের সেতুবন্ধন। শিশুর হৃদয় সঙ্গপিয়াসী। পিকলুরও। কিন্তু সঙ্গী কারা? কল্পনার অবারিত দ্বার। সেই আগলহীন দরজার মুক্ত হাওয়ায় কত চরিত্রের সমাবেশ। ধরা যাক সেই অগণিত চরিত্রের ভিতর থেকে চোখ মেলে ধরল দুটি কিশোর-কিশোরী। হতে পারে তাদের নাম রাজা ও তিন্নি। পিকলুর ছোট ছোট হাতের মুঠোয় সাদা কাশের গুচ্ছ। গিয়েছিল অঞ্জনার তীরে। সঙ্গে রাজা। দুজনের মনেই কাশের দোলা। এরমধ্যেই ছুটে এল তিন্নি। দুচোখে উচ্ছ্বাস,
-কী সুন্দর! কখন নিয়ে এলি?
কাশের মোলায়েম সাদায় তিন্নির নরম হাতের ছোঁয়া। পিকলু ওর দিকে বাড়িয়ে দিল একগুচ্ছ কাশ,
-এটা তোর জন্য।
রাজাও বাড়িয়ে দিল আরেকগুচ্ছ,
-এটাও।
দুহাত ভরে নিল তিন্নি। শিশুমন খোঁজে নতুন নতুন খেলা। কী খেলবে ওরা? গুচ্ছ গুচ্ছ কাশ তো আর খোঁপায় সাজানো যায় না। তিন্নি বলল,
-চল আমরা এই কাশের গুচ্ছে সাজিয়ে তুলি ওই মণ্ডপ।
রাজা বলল,
-কিন্তু এখানে তো মূর্তি নেই?
পিকলু বলল,
-সবে তো পাল এল। এবার কাঠামো গড়বে, বিচুলি বাঁধবে, তার উপর আবার মাটির প্রলেপ। তাতেই কী মূর্তি হবে? কত কী কাজ আছে।
তিন্নি বলল,
-চল আমরা নদীর পাড়ে যাই। আরও অনেক কাশ তুলে আনি।
তিনজোড়া পা ছুটতে শুরু করল যেন মাতোয়ারা অঞ্জনার বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস।
 
ফুলবাড়ি একটা ছোট গ্রাম। বর্ধিষ্ণু শব্দটি এর সঙ্গে জুড়ে দিলে গ্রামের প্রকৃত রূপটি বোধ হয় অধরা থাকে। সনাতনী গ্রাম। মাটির রাস্তা, গোরুর গাড়ির চলাচল, ঝোপঝাড় জলাভূমি সবমিলিয়ে ফুলবাড়ি যেন ফুলেদেরই বাড়ি। গ্রামের সহজ সরল গতি শিশুর মনকেও করে সহজ অকৃত্রিম। তিনজোড়া চোখ যেন সেই সারল্যের উপাখ্যান। ওরা ফিরে এসেছে। সঙ্গে কাশের সাদা বাহার। আপাতত খেলার বিরতি। ঘরমুখী পিকলু। মনের আকাশ শরতের তুলোট মেঘে পূর্ণ।
 
ক্রমশ

No comments:

Post a Comment

'ও মন তরে কে-বা পার করে...'


Popular Top 9 (Last 30 days)