বাতায়ন/শারদ/ধারাবাহিক
উপন্যাস/৩য় বর্ষ/২২তম সংখ্যা/১লা আশ্বিন, ১৪৩২
শারদ | ধারাবাহিক উপন্যাস
অজয় দেবনাথ
মউ
[১ম পর্ব]
পৃথিবীর যত মউ ও যত মউ-লোভী আছে
তাদের সকলের জন্য…
"ম্যাচের হাফটাইমে বন্ধুর দাদার মেয়ে বছর কুড়ির মউ ওকে একটা শ্রুতিনাটক তুলিয়ে দিতে বলে। মেয়েটা ছোট থেকেই একটু বেয়াড়া গোছের। এদিক-ওদিক অনেকরকম কথা শোনা যায়। এই বয়সে যা হয়। ফরসা, আলট্রা-মডার্ন, স্বাধীনচেতা, বেশভূষাতেও তার প্রমাণ মেলে।"
Statutory
warning.
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। Smoking
is harmful to your health.
অ্যালকোহল
সেবন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। Alcohol consumption is harmful to your health.
যে-কোনো সচেতন মানুষ মাত্রেই জানেন, অনেক সময়ই ঘুমের মধ্যে মনে হয় ঘুম আসছে না, জেগেই কাটাতে হবে আজ। অথচ মানুষটি দিব্যি ঘুমোচ্ছিলেন কিন্তু তার চেতনায় জেগে থাকার অনুভূতি। ঘুম থেকে উঠে গা ম্যাজম্যাজ, ঘুমঘুম ভাব। বোধহয় ব্রেনে অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের প্রবলেম, ডাক্তাররা আরও ভাল বলতে পারবেন।
যাকে কেন্দ্র করে এসব কথা তার নাম
সুখ, কিছুটা বাস্তব বাকিটা কল্পনা নিয়েই তার জীবন। সুখ ভাবুক প্রকৃতির। সবসময়
স্বপ্নের ঘোরে। সম্পর্ককে দু-ভাবে দেখে সুখ, একটা রক্তের সম্পর্ক আর একটা হৃদয়ের।
কীসব ছাইভস্ম লেখে এদিক-ওদিক পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়। বিভিন্ন জায়গায় সাহিত্যসভা করে
বেড়ায়। রোজগারের স্থিরতা নেই, যখন যা পায় তাতেই শান্তি, যেন পৃথিবীতে আর কোথাও
কোনো প্রয়োজন নেই, তাই চাহিদাও নেই। বাড়ির কোনোকিছুর দায়িত্ব নেয় না ফলে বাড়িতে
এবং আড়ালে-আবডালে পাড়াপড়শির গঞ্জনার শেষ নেই। যদিও বিয়ে করেনি এটাই বাঁচোয়া। বয়স
প্রায় পঁয়তাল্লিশ।
বাড়ি বলতে উত্তর চব্বিশ-পরগনায়
বসিরহাটের একটা গ্রামে প্লাস্টার ছাড়া ইটের দেওয়াল ও টিনের ছাউনি দেওয়া একচালা
দুটো ঘর। বাড়িতে বিধবা বৃদ্ধা মা ছাড়া কেউই নেই। পাঁচ বছর বয়সে সুখের বাবা মারা
যান। বহু কষ্টে বিভিন্ন হাতের কাজ, বড়ি দেওয়া, আচার তৈরি, সেলাই-ফোঁড়াই এসব ঘরোয়া
কাজ করেই ছেলে মানুষ করেছেন।
বাবার কথা তেমন মনে পড়ে না সুখের।
কোন্ ছোটবেলায়… শুধু মনে পড়ে তাকে নিয়ে সামনের মাঠে খেলতে যেত। মাঝে মাঝে তাকে
কোলে নিয়ে শূন্যে ছুঁড়ে দিত, সে দুহাত ছড়িয়ে খলখল করে হাসত। আবার লুফে নিত যেন বল
খেলছে। তারপর… একদিন হাট থেকে কেনাকাটা করে ফেরার পথে ব্রেকফেল করে একটা ট্রাক…
মায়ের কাছে শুনেছে ইনশিয়োরেন্স কোম্পানি অনেকদিন পরে কম্পেনসেশন দিয়েছিল। তেমন
কিছু নয়, ইনশিয়োরেন্সের নিয়ম অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির বয়স, আনুমানিক গড় আয়ু,
আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা এবং বেঁচে থাকলে তিনি কত দিন উপার্জন
করতে পারতেন সমস্ত কিছু হিসাব করেই টাকার অঙ্ক ঠিক করা হয়।
বাড়িতে বাংলা পড়ায় ও সপ্তাহে একদিন
আবৃত্তির ক্লাস করায়, কিছু ছেলেমেয়ে শিখতে আসে। তাতে কত টাকাই-বা পায়। মফস্সল তাই
চলে যায়। ছেলেমেয়েরা সুখকে ভালবাসে, সমীহ করে, সকলেই স্যার বলে সম্মান করে।
২
সেদিন কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল
ম্যাচ। আর্জেন্টিনা ভার্সেস ফ্রান্স। সম্ভবত মেসির লাস্ট বিশ্বকাপ। বাড়িতে টিভি
নেই, খেলা দেখতে যাবে ছোটবেলার এক বন্ধুর বাড়ি। লোকের বাড়িতে টিভি দেখতে যাওয়া ভাল
দেখায় না। অবশ্য ওরা কিছু মনে করে না বরং সুখ গেলে ওরা খুশিই হয়। একটা টিভি
কিনব-কিনব করেও কেনা হয় না। মা টিভি দেখতে চায় না, সুখও মনে করে টিভি মানেই তো যত
বস্তাপচা মেগা-সিরিয়াল আর ভুলভাল সব অনুষ্ঠান। অবশ্য ভাল কিছু অনুষ্ঠানও হয় যদিও
সেসব হাতে গোনা। সেই সঙ্গে আছে বিভিন্ন প্রাইভেট নিউজ চ্যানেলের আতঙ্ক ছড়ানো খবরের
ধরণ, যেন যুদ্ধ লেগেছে, পৃথিবী একটু পরেই ধ্বংস হয়ে যাবে, যত শিগগির পারো এই
পৃথিবী ছেড়ে পালাও।
ছোটবেলায় নিয়মিত ফুটবল খেলত।
রেডিয়োতে মোহনবাগানের খেলার রিলে শুনতে মিস করত না। বিদেশি ফুটবলার আমদানি হওয়ার
পর থেকেই কলকাতা বা ভারতীয় ফুটবলের খোঁজখবর রাখা ছেড়ে দিয়েছে, যদিও সে জানে এটা
তার একগুঁয়েমি। সুখ বিশ্বাস করে প্রপার গাইডেন্স পেলে ভারতও ভাল টিম গড়তে পারে,
ভাল ফুটবল খেলতে পারে। কিন্তু এখানে কে-কার ল্যাজ ধরে টানবে সেই প্রতিযোগিতাতেই সব
শেষ। তার ওপর দেশের সাধারণ নাগরিকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যেখানে দাঁড়িয়ে, কেউ একটু
নাম করলেই একটা চাকরি বাগিয়ে খেলার থেকে অনেক বেশি অন্যকিছুতে মন দেয়। ফলে
ডি-ফোকাসড্ হয়ে যায়।
ম্যাচের হাফটাইমে বন্ধুর দাদার
মেয়ে বছর কুড়ির মউ ওকে একটা শ্রুতিনাটক তুলিয়ে দিতে বলে। মেয়েটা ছোট থেকেই একটু
বেয়াড়া গোছের। এদিক-ওদিক অনেকরকম কথা শোনা যায়। এই বয়সে যা হয়। ফরসা,
আলট্রা-মডার্ন, স্বাধীনচেতা, বেশভূষাতেও তার প্রমাণ মেলে। বাড়িতে সবার সঙ্গেই মতের
অমিল। তবে গানটা ভাল গায়। সেই অর্থে বিধিবদ্ধ শিক্ষা নেই। সারাক্ষণ মোবাইলে গান
শুনছে, গুনগুন করছে আবার কখনও জোরে গাইছে। চ্যাটিং-এর কথা বলাই বাহুল্য। সেদিক
থেকে দেখলে যথেষ্ট ট্যালেন্টেড। সুখ মউকে একদিন হাতে সময় নিয়ে চলে আসতে বলে।
ম্যাচটা টাইব্রেকার অবধি গড়াল।
এক্সট্রা-টাইম ধরে ফলাফল ৩-৩। ফ্রান্সের এমবাপে হ্যাট্রিক করেছে, দুটো গোল
পেনাল্টিতে করলেও খুবই ভাল খেলেছে। মেসি দুটো গোল করেছে। অন্য গোলটাও মেসির পাস
থেকেই। শেষপর্যন্ত আর্জেন্টিনাই জিতেছে। তার মূল অবদান গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেসের।
ম্যাচ শেষ হবার পরেও প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশনে আরও খানিক সময় কাটিয়ে সুখ বাড়ি গেল।
শুয়ে শুয়ে ভাবছিল মেসিকে ঘিরে আজ
কুবেরপতিদের ভিড়, সারা বিশ্ব জুড়ে উন্মাদনা। সে নিজে কোনদিন কী তার নিজের লড়াইয়ের
ক্ষেত্রে সফল হতে পারবে না! চিরকাল এমনভাবেই চলতে হবে! অবশ্য এখন যে রকম নোংরা
লবিবাজি শুরু হয়েছে, তার পক্ষে কোনদিনই এমন পা-চাটা সম্ভব হবে না।
ক্রমশ
পড়লাম। শুরু বেশ ভালোই। পরের লেখার অপেক্ষায়।
ReplyDeleteআন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। পরের লেখা পাবেন আগামীকাল।
DeleteDarun lagchhe porte
Deleteঅনেক ধন্যবাদ, পরের সংখ্যা প্রকাশ হয়ে গেছে দেখুন কেমন লাগে।
Deleteপরের পর্ব কেমন লাগে জানাও।
Deleteশুভকামনা রইল। ধারাবাহিক এই উপন্যাস সকলের মনোগ্রাহী হবে এটা আমি নিশ্চিত 🙏
ReplyDeleteআপনাকে অনেক ধন্যবাদ প্রদীপ-দা। সঙ্গে থাকবেন।
Deleteএগিয়ে যাওয়ার শুভেচ্ছা রইল
ReplyDeleteধন্যবাদ জানাই তবে গঠনমূলক মতামত আশা করি।
Deleteশুরুটা বেশ ভাল....চলুক এগিয়ে....আমিও অনুসরণ করছি ৷
ReplyDeleteকর, মতামত দিবি অবশ্যই।
Delete